

আবু হেনা সাকিল, রাবি প্রতিনিধি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামী পন্থি ৬ ডীনের পদত্যাগের দাবিতে তাদের চেম্বারে তালা ঝুলিয়েছে শিক্ষার্থীরা। রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিনস কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন ভবনে অবস্থিত এই ডীনদের চেম্বারে তালা দেন তারা।
২০২৩ সালের ১৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ডিন নির্বাচনে ১২টি অনুষদের মধ্যে ৬টিতে জয়লাভ করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ (হলুদ প্যানেল)। জয়ী অনুষদগুলো হলো আইন, বিজ্ঞান, ব্যবসা শিক্ষা, সামাজিক বিজ্ঞান, প্রকৌশল এবং ভূ-বিজ্ঞান।
সময়সীমা অনুযায়ী গত ১৭ ডিসেম্বর তাদের মেয়াদ শেষ হয়েছে। তবে, নির্বাচন সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত তাদের সময় বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. ইফতেখারুল আলম মাসুদ ও উপাচার্য অধ্যাপক ড. সালেহ হাসান নকীবের সিদ্ধান্তে এই সময় বর্ধিত করা হলেও তাদের পদত্যাগের দাবি তোলে রাকসুর জিএস সালাউদ্দিন আম্মার।
এক ফেসবুক পোস্টে আম্মার লিখেন, "রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আওয়ামীপন্থী ডিনদের অপসারণ করানো হয় নাই। নির্বাচিত বলে পুরো দেড় বছর স্টে করাইছেন প্রশাসন। গতকাল ১৭ ডিসেম্বর ডিনদের মেয়াদ শেষ হইছে, শুনেছি এই ডিনদের আবার সময় বাড়িয়ে দিয়েছে প্রশাসন। আমার আল্টিমেটাম আমি ফিলাপ করে তারপর ছাড়ি এটা প্রশাসন ভালোমতো জানেন। আওয়ামীপন্থী ডিনরা আগামীকাল ডিন অফিসের চেয়ারে দেখলে শাউয়া কেটে কাউয়া দিয়ে খাওয়াবো। আজ সময় দিলাম রিজাইন দেওয়ার জন্য সম্মানের সাথে। আগামীকাল অফিসে গিয়ে বাকিটা বুঝিয়ে দিবো।"
পরে আরেক পোস্টে আম্মার ঘোষণা দেন, "আজ ১০.৩০ মিনিট থেকে একে একে ৬ আওয়ামীপন্থী ডিনদের কাছে পদত্যাগপত্র নিয়ে যাবো। আমি বিশ্বাস করি শান্তিপূর্ণভাবে তারা স্বাক্ষর দিয়ে দিবে। যদি সহজ কথায় না শুনে তখন ডাক দিলে রাবিয়ানরা চলে আসবেন। আমি এখনো একবার তাদের সাথে শান্তি বজায় রাখতে চাই।"
রোববার সকালে আম্মার কয়েকজন ডীন এবং অভিযুক্ত আওয়ামীপন্থি কয়েকজন শিক্ষকের চেম্বারেও যান। তবে এদিন কোন ডীন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলেন না।
এসময় আম্মার বলেন, "জুলাই এর সময় শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে দাঁড়ানো শিক্ষকদের তালিকা ডকুমেন্টসসহ আমরা তালিকা করেছি। আওয়ামী পন্থী যে ডীনরা আছেন, সেই ডীনদের পদত্যাগ প্রসঙ্গে তাদের সবাইকে কল দেওয়া হয়, তবে তাদের কেউই ক্যাম্পাসে নাই। আমরা অন্যান্যদের সাথে মিলিয়ে চূড়ান্ত এই তালিকা প্রকাশ করবো এবং সেই অনুযায়ী তাদের পদত্যাগে বাধ্য করাবো।"
ডীনরা পদত্যাগ করেছে কিনা জানতে উপাচার্য সালেহ হাসান নকীবের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
তবে ডীনরা পদত্যাগ করেননি বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, "আমাদের কাছে এমন কোন তথ্য এখনও আসেনি। ডীনদের মেয়াদ শেষ হলেও সমাবর্তন, সামনে ভর্তি পরীক্ষাসহ নানা কারণে তাদের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছিল।সামনে পরীক্ষা রেখে তাদের অব্যাহতি দেয়াটা অনেক জটিলতা তৈরি করবে। তবে উপাচার্য স্যার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে পারবেন।"
এদিকে দুপুরে সিনেট সদস্য আকিল বিন তালেব, রাকসুর সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক জায়িদ হাসান জোহা, সহ-সাংস্কৃতিক সম্পাদক রাকিবুল হাসানসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী ডীনদের চেম্বারে তালা ঝুলান।
এসময় আকিল বিন তালেব বলেন, "আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে শহীদ হাদি ভাই আমাদের যে পথ দেখিয়েছে আমাদের সেই পথ অনুসরণ করতে হবে। বিপ্লবের এক বছর পেরিয়ে গেলেও আওয়ামী ফ্যাসিসস্টের দোসররা আজও ক্যাম্পাসে নিরাপদ, অথচ আমাদের বিপ্লবের নেতৃত্ব দেয়া মানুষরা রাস্তায় গুলি খেয়ে জীবন দিচ্ছে। তাই আমরা চাই, কোন ফ্যাসিবাদের দোসররা যেন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে না পারে। রক্তের উপর দাঁড়িয়ে রাবি প্রশাসন আসলেও বিপ্লবের স্পিরিট তারা ধারণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। শিক্ষার্থীদের উপর হামলার জন্য ব্যানার ধরা ফ্যাসিস্টের দোসরদের তারা এখনও বিচার করতে পারেনি। আমরা প্রশাসনকে সময় দিয়েছিলাম কিন্তু তারা এই ফ্যাসিস্টদের পদত্যাগ করাইতে পারেনি। তাই আমরা অভ্যুত্থানের শক্তিরা আজ এই ফ্যাসিস্টদের পদত্যাগ করাইতে বাধ্য হচ্ছি।"

