সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে’তে ভারতকে হারাতে পারলেই সিরিজ জয়ের অপেক্ষা ফুরাবে শ্রীলঙ্কার। এমন সুযোগ হাতছাড়া করেনি লঙ্কানরা। ভারতের ব্যাটিং স্তম্ভকে একাই ধসিয়ে দিয়েছেন স্পিনার দুনিথ ওয়াল্লালাগে। বাঁহাতি স্পিনারের ২৭ রানে ৫ উইকেটের সঙ্গে ভ্যান্ডারসের ২ উইকেটে ভারত গুটিয়ে যায় ১৩৪ রানে। লঙ্কানদের কাছে রোহিত শর্মার দলকে হারতে হয়েছে ১১০ রানের বড় ব্যবধানে। ১৯৯৭ সালের পর অর্থাৎ সবশেষ ২৭ বছরে এবারই প্রথম শ্রীলঙ্কার কাছে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ হারলো ভারত। স্বাগতিকরা সিরিজ জিতে নিয়েছে ২-০ ব্যবধানে।
বুধবার (৭ আগস্ট) কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামের মন্থর উইকেটে টানা তৃতীয় ম্যাচে টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে শ্রীলঙ্কা। আগে ব্যাট করতে নেমে সতর্ক শুরু করেন দুই লঙ্কান ওপেনার পাথুম নিসাঙ্কা ও আভিশকা ফার্নান্দো। পাওয়ার প্লেতে কোনো উইকেট না হারলেও রান আসে কেবল ৪১।
১১৯ বলে ৮৯ রানের শুরুর জুটি ভাঙে নিসাঙ্কার বিদায়ে। এরপর তিনে নামা কুশল মেন্ডিসকে সাথে নিয়ে এগোতে থাকেন আভিষকা। ফিফটি তুলে নেন আভিষকা। কুশলও ব্যাট হাতে ছিলেন দারুণ সাবলীল। কুশল-আভিষকার দারুণ কার্যকরী ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকে লঙ্কানদের ইনিংস। কৌশলী ব্যাটিংয়ে এগোতে থাকা আভিষকা সেঞ্চুরির খুব কাছে চলে গিয়েছিলেন। তবে শেষমেশ তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগারটা ছোঁয়া হয়নি আভিষকার। দলীয় ১৭১ রানের মাথায় ১০২ বলে ৯৬ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে বিদায় নেন আভিষকা।
তবে কুশল টিকে ছিলেন। এক প্রান্ত ধরে খেলতে থাকেন তিনি। তবে বাকি ব্যাটারদের মধ্যে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করতে পারেননি তেমন কেউ। অধিনায়ক চারিথ আসালাঙ্কা ১২ বলে ১০ রানের ইনিংস খেলে বিদায় নেন। এরপর একের পর এক উইকেট হারিয়ে ফেলে লঙ্কানরা।
শেষ দিকে ফিফটি ছুঁয়ে ৮২ বলে ৫৯ রানের লড়াকু এক ইনিংস খেলে বিদায় নেন কুশল। ১৯ বলে ২৩ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলে শেষ পর্যন্ত টিকে ছিলেন কামিন্দু মেন্ডিস। নির্ধারিত ৫০ ওভারের খেলা শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৪৮ রানের পুঁজি দাঁড় করায় শ্রীলঙ্কা।ভারতের হয়ে ৩ উইকেট শিকার করেন রিয়ান পরাগ। এছাড়া ১টি করে উইকেট তোলেন মোহাম্মদ সিরাজ, আক্সার প্যাটেল, ওয়াশিংটন সুন্দর এবং কুলদীপ যাদব।
২৪৯ রান তাড়ায় ভালো শুরুর আভাসই দিয়েছিলেন রোহিত। তবে ভারতের অধিনায়ককে সঙ্গ দিতে পারেননি আরেক ওপেনার শুভমান গিল। ইনিংসের পঞ্চম ওভারে আসিথা ফার্নান্দোর নিচু হওয়া ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি। গিলের ব্যাট থেকে এসেছে ১৪ বলে ৬ রান। তিনে নেমে রোহিতের সঙ্গে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ভিরাট কোহলি। যদিও তাদের দু’জনের জুটি বড় হতে দেননি ওয়াল্লালাগে।
বাঁহাতি স্পিনারের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে স্লগ সুইপ করতে চেয়েছিলেন রোহিত। তবে বল সঠিক লেংথে না থাকায় টার্ন করে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাটের নিচু অংশ ছুঁয়ে যায়। উইকেটের পেছনে দাঁড়িয়ে কুশল মেন্ডিস ক্যাচ লুফে নিতেই সাজঘরে ফিরে যেতে হয় ২০ বলে ৩৫ রান করা রোহিতকে। বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি চারে নামা রিশাভ পান্তও। মাহিশ থিকশনার লেংথ ডেলিভারিতে ডাউন দ্য উইকেটে এসে খেলতে গিয়ে স্টাম্পিং হয়েছেন। বাঁহাতি এই উইকেটকিপার ব্যাটার করেছেন মাত্র ৬ রান।
কোহলি থিতু হওয়ার চেষ্টা করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। পাওয়ার প্লে শেষ হতেই ফিরে যেতে হয় তাকে। লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে ফেলে ২০ রান করা কোহলিকে বিদায় করেছেন ওয়াল্লালাগে। দলের রান একশ হওয়ার আগে একে একে বিদায় নিয়েছেন অক্ষর প্যাটেল, শ্রেয়াস আইয়াররা। এদিকে রিয়ান পরাগ ও শিভাম দুবেকে শিকার করেছেন লেগ স্পিনার ভ্যান্ডারসে। ১০১ রানে ৮ উইকেট হারানোর জুটি গড়ে তোলেন ওয়াশিংটন সুন্দর ও কুলদীপ যাদব।
নবম উইকেট জুটিতে তারা দুজনে মিলে যোগ করেন ৩৭ রান। থিকশানার বলে লং অফের উপর দিয়ে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন ওয়াশিংটন। দুবারের প্রচেষ্টায় ভ্যান্ডারসে ক্যাচ লুফে নিলে ভাঙে তাদের জুটি। শেষ ব্যাটার হিসেবে কুলদীপকে ফিরিয়ে শ্রীলঙ্কায় জয় নিশ্চিত করেন ওয়াল্লালাগে। কুলদীপকে আউট করে পাঁচ উইকেটও তুলে নেন বাঁহাতি এই স্পিনার। এ ছাড়া ভ্যান্ডারসে ও থিকশানা দুটি করে উইকেট নিয়েছেন।