মাসুদুর রহমান খান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরের সঙ্গে নোয়াখালী ও চাঁদপুরের যোগাযোগ স্থাপনে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে নির্মাণ করা হয় ৪৮ কিলোমিটার সড়ক। ১৮-২৪ ফুট প্রশস্ত সড়কটি নির্মাণে তখন ব্যয় হয়েছিল ২০০ কোটি টাকা। অভিযোগ রয়েছে, নির্মাণকাজে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। এ কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই কার্পেটিং উঠে গর্ত সৃষ্টি হয়। সাত বছরে কয়েক দফায় সংস্কার করা হলেও কাজে আসছে না। সর্বশেষ চলতি বছরের জুনে ৭০ লাখ টাকা ব্যয়ে আঞ্চলিক মহাসড়কের হাজির পাড়া থেকে মান্দারী পর্যন্ত এসবিএসটি মেরামত করা হয়েছে। তবে তা এক সপ্তাহের মধ্যেই আগের অবস্থায় ফিরে যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, নোয়াখালী-চাঁদপুর আঞ্চলিক সড়কের লক্ষ্মীপুরের অধীন ৩৬ কিলোমিটার মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিনই সড়কের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, সড়কজুড়ে রয়েছে গর্ত। বড় যানবাহন কোনো রকমে চলতে পারলেও মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা, রিকশা, প্রাইভেট কারসহ ছোট যানবাহন চলাচল কঠিন হয়ে পড়েছে। যতই দিন যাচ্ছে, ততই সড়কে ঝুঁকি বাড়ছে।
লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রণালয় থেকে সড়ক বিভাগের জমির অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করার জন্য মে মাসে লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে চিঠি দেয়া হয়। তিনি ২৫ মে জেলা প্রশাসককে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের আবেদন করেন। অবৈধ দখলদারদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সড়কের জমি থেকে দোকানপাট ও স্থাপনা সরিয়ে নেয়ার নির্দেশনাও দেয়া হয় তখন। কিন্তু এরপর আর কোনো কার্যক্রম দেখা যায়নি।
এ ব্যাপারে লক্ষ্মীপুর সড়ক বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শারীফ হোসেন বলেন, আমি সম্প্রতি বদলি হয়ে এসেছি। তাই এ বিষয়ে আমি কোনো কিছু জানি না, যা কিছু নির্বাহী প্রকৌশলীই বলতে পারবেন। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জহিরুল ইসলামের মুঠোফোনে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
তবে উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মোশারফ হোসেন জানান, সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার জন্য সম্প্রতি একনেক বৈঠকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বর্তমানে প্রাক্কলন তৈরি করা হচ্ছে। সড়কটি চার লেনে উন্নীত করার কাজ শুরু হলে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হয়ে যাবে এবং দুর্ঘটনা কমে আসবে।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) লক্ষ্মীপুর আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, সাত মাসে এ সড়কে ছোট-বড় পাঁচ শতাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। এতে মারা গেছে ৫০ জন। জুলাইতেই মারা গেছে ১০ জন। বর্তমানে সড়কে যানবাহন চলাচল কম থাকলেও গতকাল দুটি স্থানে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই পথচারী নিহত হয়েছেন।
সড়ক দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর জন্য সংশ্লিষ্টরা সড়কের অপ্রশস্ততা, চালকের অদক্ষতা, সড়কের ওপর অসংখ্য হাটবাজার, যানবাহনের বেপরোয়া গতিকে দায়ী করেছেন 'নিরাপদ সড়ক চাই' লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার সভাপতি ডা. আশফাকুর রহমান মামুন বলেন, নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলনের পক্ষ থেকে অবৈধ যান চলাচল বন্ধ ও আইনের বাস্তবায়নে বারবার প্রশাসনের প্রতি দাবি জানানো হয়েছে। তবে প্রশাসন তেমন উদ্যোগ নেয়নি।
লক্ষ্মীপুর বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক প্রণব চন্দ্র নাগ বলেন, লক্ষ্মীপুর বিআরটিএ সড়কে শৃঙ্খল বজায় রাখার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালনা ও নানা সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে। লক্ষ্মীপুরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) প্রশন্ত কুমার দাস বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বাত্মক চেষ্টা চালানো হচ্ছে। প্রতিদিনই যানবাহন আটক ও জরিমানা করা হচ্ছে। বেশির ভাগ দুর্ঘটনা ঘটছে বেপরোয়া গতির ডাম্প ট্রাকের কারণে। শতচেষ্টা করেও ট্রাকগুলো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
লক্ষ্মীপুর বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি সৈয়দ ফখরুল আলম নাহিদ বলেন, সড়কে বেপরোয়া গতির ডাম্প ট্রাক, একই সড়কে যান্ত্রিক-অযান্ত্রিক যানবাহন চলাচল, সড়কের ওপর অসংখ্য হাটবাজার, যানজট ও সড়কের অপ্রশস্ততা এবং গর্তের কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে।
চাঁদপুর-নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী আনন্দ পরিবহনের চালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আনন্দ পরিবহন লোকাল বাস। এটি চলাচলের জন্য সময় নির্ধারিত। লক্ষ্মীপুর ঝুমুর থেকে নোয়াখালীর চৌরাস্তা পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার দূরত্ব পার হওয়ার জন্য ৫০ মিনিট সময় নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে ৩০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে সাতটি বড় বাজারসহ ১৫টি ছোট-বড় বাজার রয়েছে। প্রতিটি বাজারেই যানজটে গাড়ি আটকে থাকে। এতে নির্ধারিত সময় যানজটেই পার হয়ে যায়। এ কারণে চালকরাও বাধ্য হয়ে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালিয়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন।