

যশোর প্রতিনিধি: নড়াইল-যশোর মহাসড়ক এখন পরিণত হয়েছে এক ভয়ংকর মৃত্যুফাঁদে। প্রতিদিনই বাড়ছে প্রাণহানির মিছিল; যারা বেঁচে যাচ্ছেন, তাদের অনেকেই আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করছেন। গত আড়াই বছরে এই সড়কে প্রাণ গেছে ৪২ জনের, আহত হয়েছেন আরও ১৪২ জন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, মহাসড়কটি সংকীর্ণ, যানবাহনের গতি অনিয়ন্ত্রিত, আর অযান্ত্রিক যানবাহনের দৌরাত্ম্য নিয়মিত দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০২২ সালে পদ্মা-মধুমতি সেতু চালুর পর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্তত ১০ জেলার ছোট-বড় পণ্যবাহী গাড়ি ও দূরপাল্লার বাস চলাচলের অন্যতম প্রধান পথ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে নড়াইল-যশোর মহাসড়ক। প্রতিদিন প্রায় তিন হাজার যানবাহন মধুমতি সেতু পার হয় এই সড়ক দিয়ে। এর সঙ্গে শহরমুখী অযান্ত্রিক যানবাহনসহ ছোট-বড় প্রায় ১০ হাজার গাড়ি যুক্ত হচ্ছে প্রতিদিন।
ফলে মহাসড়কটিতে অনিয়ন্ত্রিত গতি, বেপরোয়া অটো, ভ্যান, নসিমন, করিমন, ইজিবাইক ও সিএনজি চলাচলের কারণে দুর্ঘটনা এখন নিত্যদিনের ঘটনা। বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল, আহতদের মধ্যে অনেকেই অঙ্গহানি ও স্থায়ী পঙ্গুত্বে ভুগছেন।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর মানিকগঞ্জ থেকে সাক্ষ্য দিয়ে ফিরছিলেন নড়াইলে কর্মরত পুলিশের উপপরিদর্শক নিক্কন আঢ্য। যশোর-নড়াইল মহাসড়কের ভাঙুড়া বাজার এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা বাঁশবোঝাই ট্রাকে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নিক্কনসহ তিনজন নিহত হন। চলতি বছরের ১০ অক্টোবর একই সড়কে বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নারী ও শিশু সহ অন্তত ১৫ জন আহত হন। ওই দুর্ঘটনায় ট্রাকচালক এনামুল বর্তমানে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাইওয়ে পুলিশের তথ্যমতে, ২০২৩ সাল থেকে চলতি বছরের অক্টোবর পর্যন্ত এ সড়কে ৭৪টি দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৪২ জন, আহত ১৪২ জন। ২০২৩ সালে ২৪টি দুর্ঘটনায় ১১ জন নিহত ও ৩০ জন আহত হন। ২০২৪ সালে ২৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ১৯ ও আহত ৩৯ জন। চলতি বছরের ১০ মাসেই ২৫টি দুর্ঘটনায় নিহত ১২ ও আহত ৭২ জন।
সড়ক ব্যবহারকারীরা বলছেন, সংকীর্ণ রাস্তা, অতিরিক্ত যানচাপ ও অযান্ত্রিক যান চলাচলই দুর্ঘটনার মূল কারণ। তাদের দাবি, মহাসড়ক প্রশস্ত করা ও অযান্ত্রিক যান চলাচল বন্ধে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হোক।
তুলারামপুর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ সেকেন্দার আলী বলেন, ‘নড়াইল-যশোর মহাসড়কে যানবাহনের চাপ অত্যধিক। সংকীর্ণ এই সড়কে নিয়ন্ত্রিত গতিতে যান চলাচল ও অযান্ত্রিক যান নিয়ন্ত্রণে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হচ্ছে। দুর্ঘটনা রোধে নিয়মিত অভিযান ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম চলছে।’
যশোর সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম কিবরিয়া ও নড়াইল সড়ক জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, মহাসড়কটিকে এক্সপ্রেসওয়েতে উন্নীত করার প্রস্তাবনা পাঠানো হলেও প্রশাসনিক ও প্রকৌশলগত জটিলতায় তা এখনো সম্ভব হয়নি। তবে সড়ক আরও প্রশস্ত করার প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে, আশা করছি আগামী দুই বছরের মধ্যে কাজ শুরু হবে।’
তথ্য অনুযায়ী, নড়াইল-যশোর মহাসড়কের মোট দৈর্ঘ্য ৫৫ কিলোমিটার। এটি ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে মহাসড়ক হিসেবে উন্নীত করা হয়। নড়াইল অংশের ৩০ কিলোমিটার ছিল ১৮ ফুট চওড়া, যা ২০২৩ সালে ৪৩ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পে দুই পাশে ছয় ফুট করে বাড়িয়ে ২৪ ফুটে উন্নীত করা হয়েছে। এই সড়কের গুরুত্বপূর্ণ বাসস্ট্যান্ডগুলোর মধ্যে ছাতিয়ানতলা, ধলগা রাস্তা ও তুলারামপুর উল্লেখযোগ্য।

