দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন দ্বীপ সেন্টমার্টিনে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা ঘটেছে৷এতে পুড়ে পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে দ্বীপের গলাচিপা এলাকার বীচ ভ্যালী, কিংশুক ইকো রিসোর্ট ও শাইরী রিসোর্ট। যৌথবাহিনী প্রায় আড়াইঘন্টা প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনলেও ক্ষয়ক্ষতি আটকাতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিস স্টেশন না থাকায় আগুণ নিয়ন্ত্রণে আনতে যৌথবাহিনী ও স্থানীয় জনগণকে আগুনের সামনে অসহায় মনে হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পর্যটন ব্যবসায়ী আব্দুল মালেক জানান, মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) দিবাগত রাত ২টা ১০ মিনিটের দিকে সাইরী ইকো রিসোর্টের অভ্যর্থনা কক্ষের মাল্টিপ্লাগে সর্টসার্কিট হয়ে এ আগুনের সূত্রপাত হয়। আব্দুল মালেক বলেন, অভ্যর্থনা কক্ষের ঠিক পেছনে বীচ ভ্যালী ইকো রিসোর্ট। বাতাস থাকার কারণে মিনিটের মধ্যে বীচ ভ্যালীর ছাউনিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।
তিনি আরও জানান, কাঠ আর বাঁশ দিয়ে তৈরি বীচ ভ্যালী ইকো রিসোর্টে আগুণ লাগার সাথে সাথে কয়েক মিনিটের মধ্যে পুরো রিসোর্টে ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে বীচ ভ্যালীসহ পাশের কিংশুক ইকো রিসোর্ট পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের স্থানীয়, আগত পর্যটক ও যৌথবাহিনীর আড়াই ঘন্টার চেষ্টায় রাত প্রায় সাড়ে ৪ টার দিকে আগুণ নিয়ন্ত্রণে আসে।
কক্সবাজারের টেকনাফের প্রবাল সমৃদ্ধ দ্বীপ সেন্টমার্টিন অগ্নিকাণ্ডে তিনটি ইকো রিসোর্ট পুড়ে প্রায় ৬ কোটি টাকার ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে। রিসোর্ট মালিকদের বরাত দিয়ে প্রাথমিকভাবে এ তথ্য নিশ্চিত করেছে পুলিশ।
বুধবার সকালে সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির কর্মকর্তা অজিত কুমার দাস এ বিষয়ে বলেন, সেন্টমার্টিনে সাইরী রিসোর্ট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। এতে পাশের আরও দুটি রিসোর্ট আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। এতে গলাচিপার বীচ ভ্যালি এবং কিংশুক রিসোর্টের অধিকাংশ পুড়ে গেছে। আমরা ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেছি। এসব রিসোর্টগুলো খুব সুন্দর এবং উন্নতমানের ছিল।
তিনি আরও বলেন, রিসোর্ট মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, প্রাথমিকভাবে প্রায় ৬ কোটি টাকায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সাইরী রিসোর্ট থেকে প্রথমে আগুনের সূত্রপাত হওয়ার বিষয়টি জেনেছি। তবুও আমরা ঘটনাটি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। এছাড়া পুড়ে যাওয়া রিসোর্টে থাকা পর্যটকদের অন্য হোটেলে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মূলত, মধ্যরাতে দ্বীপের পশ্চিম সৈকতের গলাচিপা এলাকায় এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় শাইরী, বীচ ভ্যালি ও কিংশুক রিসোর্ট পুড়ে যায়। পুড়ে যাওয়া কিংশুক রিসোর্টের সহকারী পরিচালক সাইফুদ্দিন বাবর বলেন, হঠাৎ করে রাতে আগুন দেখতে পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমরা হোটেলে থাকা পর্যটকদের নিরাপদে সরিয়ে নেই। ততক্ষণে আমাদের রিসোর্টের ১৫টি কক্ষ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। কাঠ-বাঁশ এবং ছাউনি দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল আমাদের রিসোর্টটি। তাই দ্রুত আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে দেড় কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া আমাদের ব্যবসা লোকসানে পড়েছে।
রিসোর্ট বীচ ভ্যালির মালিক মো. সরোয়ার কামাল বলেন, আগুন আমাদের নিঃস্ব করে দিয়েছে। পুরো রিসোর্টটি পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। কোনও মালামাল রক্ষা করতে পারিনি। আমাদের ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমরা কী করবো?
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপে বিভিন্ন কারণে ব্যবসায়ীরা খুব বিপদে রয়েছেন। তার ওপর আগুনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক। সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের পাশে দাঁড়ানো। তিনি দ্রুত সেন্টমার্টিন দ্বীপে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের দাবি জানান।
টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, আমাদের একটা টিম সেখানে পৌঁছেছে। আগুনের ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের কীভাবে সহায়তায় করা যায় এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইউএনও মোঃ শেখ এহসান উদ্দিনকে প্রধান করে পিআইও অফিসার হাবিবুর রহমান, ফায়ার সার্ভিস প্রধান মুকুল নাথ, সেন্টমার্টিন পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ আব্দুল বাতেনকে সদস্য সচিব করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।