মাসুদুর রহমান খান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে এবারের বন্যা কতটা ভয়ঙ্কর ও নিষ্ঠুর তা ৮০ বছর বয়সী কালু মিয়ার থেকে আর কেউ জানেন না! তার স্ত্রী মারা গেছেন পাঁচদিন হলো। কিন্তু সর্বত্র বন্যার পানি থাকায় নিজের স্ত্রীর মরদেহ দাফন করতে পারছিলেন না। পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় হাঁটুসমান পানিতেই ২০০ ফিট মাটি ফেলে স্ত্রীর মরদেহ দাফন করেন তিনি।
সরেজমিনে লক্ষ্মীপুরের মান্দারী আমিনবাজার এলাকায় দেখা যায়, বৃদ্ধ কালু আহাজারি করছেন। এ সময় তিনি বলেন, বন্যার পানিতে সব ভেসে গেছে। স্ত্রী ছিল সেও মারা গেছে। এখন আমি একা। স্ত্রীর মৃত্যুর পর যেভাবেই হোক দাফন করতে চেয়েছিলাম পারিবারিক কবরস্থানেই। কিন্তু চারিদিকে পানি, স্ত্রী মরদেহ দাফন করবো কীভাবে? কোনো উপায় নেই। পরে হাঁটুসমান পানিতে স্ত্রীকে দাফন করা হয়।
পানির মধ্যে দাফনের বিষয়ে স্থানীয়রা জানান, কবরস্থানে হাঁটুসমান থাকায় প্রায় ২০০ ফিট মাটি ফেলে কালু মিয়ার স্ত্রীকে দাফন করা হয়। অনেকে বলেছিলেন ভেলায় মধ্যে রাখার জন্য। তবে সবাই চিন্তা করেই এভাবেই আমরা দাফন করেছি।
শুধু কালু মিয়া নন বানের পানিতে কবরস্থান তলিয়ে থাকায় মৃতদের দাফন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন এলাকার অন্য বানভাসিরা। লক্ষ্মীপুরের অনেক এলাকা থেকে বন্যার পানি নামলেও কিছু জায়গায় এখনো বাড়ছে। এ কারণে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রেই স্বজনদের নিয়ে বসবাস করছেন বানভাসিরা। গত পাঁচ দিনে কবরস্থানের পানি নামলেও মান্দারী আমিনবাজার সড়কের দুপাশে এখনো বিস্তীর্ণ এলাকার মানুষ রয়েছেন পানিবন্দিই।
পানিবন্দি স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায় ১২ দিন হলো এলাকা পানিতে ডুবে আছে। থাকার জায়গাও নেই। টানা বৃষ্টিতেই এলাকায় পানি বাড়ছেই। এ এলাকায় তেমন একটা ত্রাণ আসে না। আমাদের শুধু গ্রামবাসী সহায়তা করেছেন। এর বাইরে কোনো ত্রাণ এদিকে ঢোকেনি। ২০০৪ সালে বন্যার পরও মাত্র সাত দিনে পানি পুরোপুরি নেমে গেলেও এবার তার নামগন্ধও নেই। দ্রুত পানি নেমে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দুর্ভোগ থেকে মুক্তি দিতে সরকারের কাছে দাবি এলাকাবাসীর।