জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে যোগ দিতে ৫৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৫টা ৫ মিনিটে কাতার এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ছেড়ে যান তিনি। মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তার নিউ ইয়র্কে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। ওয়াশিংটন জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্টও এরই মধ্যে নিউ ইয়র্ক পৌঁছেছেন।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার রক্তাক্ত অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এটাই প্রথম বিদেশ সফর। জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে তিনি ২৭ সেপ্টেম্বর বক্তৃতা করবেন।
নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় মঙ্গলবার জাতিসংঘ সদর দপ্তরে ইউনূস-বাইডেন বৈঠকে বসবেন। জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের সাইড লাইনে দুই সরকারপ্রধানের এ বৈঠক হবে। মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে এ বেঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রেক্ষাপট, দেশ সংস্কারের নানা পদক্ষেপ, সরকারের নানা চ্যালেঞ্জ প্রধান উপদেষ্টা তুলে ধরবেন বলে জানিয়েছে কয়েকটি কূটনৈতিক সূত্র। কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র সহযোগিতা করতে পারে, সে বিষয়ে আলোচনা হতে পারে।
নিউ ইয়র্কে বৈঠকের বিষয়টি নিশ্চিত করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শুধু দুজনের মধ্যেই বৈঠকটি হতে যাচ্ছে। এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ গত কয়েক দশকে কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশের কোনো সরকারপ্রধানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেননি।
এছাড়া সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এই তালিকায় আছেন-পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শাহবাজ শরিফ, নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে পি শর্মা ওলি, মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ্জু, নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক শফ, বাহরাইনের যুবরাজ ও প্রধানমন্ত্রী সালমান বিন হামাদ বিন ইসা আল খলিফা, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন, ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লিয়েন এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট অজয় বাঙ্গা।
পাশাপাশি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস, জাতিসংঘের মানবাধিকার-বিষয়ক হাইকমিশনার ভলকার টুর্ক, জাতিসংঘের শরণার্থী- বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডিসহ জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থার প্রধানরা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করবেন।
এর আগে, শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার জাতিসংঘ অধিবেশনে অংশগ্রহণ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন। তিনি জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। তার বক্তব্যে বিগত দুই মাসে বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অভাবনীয় গণঅভ্যুত্থানের বিবরণ ও আগামী দিনে জনভিত্তিক, কল্যাণমুখী ও জনস্বার্থে নিবেদিত একটি রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় বিশ্বদরবারে তুলে ধরবেন। পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, বিশ্বব্যাপী সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের ক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রতিকূলতা, উন্নয়নশীল দেশসমূহ থেকে সম্পদ পাচার প্রতিরোধ, নিরাপদ অভিবাসন, অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জেনারেটিভ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার পরিপ্রেক্ষিতে প্রযুক্তির টেকসই হস্তান্তর এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে স্থান পাবে।
তৌহিদ হোসেন বলেন, এ কথা বলার অবকাশ রাখে না যে, প্রধান উপদেষ্টার পরিচিতি এবং সুনাম বিশ্বব্যাপী। এ কারণে অনেকগুলো বিশ্বখ্যাত সংবাদ সংস্থা তার সাক্ষাৎকার গ্রহণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে। এছাড়া, বিভিন্ন পর্যায়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক ও সভায় অংশগ্রহণের জন্যও অনুরোধ এসেছে। যেহেতু তিনি মাত্র তিনদিন নিউ ইয়র্কে অবস্থান করবেন, সেহেতু পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষে এই স্বল্প সময়ের মধ্যে সবার অনুরোধ রক্ষা করা বেশ কঠিন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সফরসঙ্গী পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এস জয়শংকরের মধ্যে বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর সফর শেষ করে প্রধান উপদেষ্টার নিউ ইয়র্ক থেকে ঢাকার পথে রওনা দেওয়ার কথা রয়েছে।