গত মাসেও যিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী পদে ছিলেন, সেই শেখ হাসিনা ভারতে এসে অবস্থান করছেন তিন সপ্তাহেরও ওপর হয়ে গেল। চরম গোপনীয়তা ও কড়া সুরক্ষার মধ্যে ভারত সরকার আপাতত তার (সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানার) থাকার ব্যবস্থা করেছে ঠিকই– কিন্তু তার সম্বন্ধে কী চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও কিছুই জানানো হয়নি।
এরই মধ্যে গত সপ্তাহে বাংলাদেশ সরকার শেখ হাসিনার ‘ডিপ্লোম্যাটিক’ বা অফিশিয়াল পাসপোর্ট প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় ভারতে এখন তার অবস্থানের বৈধ ভিত্তিটা কী, সে প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।
এই পটভূমিতে দিল্লিতে ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা ও বিশ্লেষকদের সঙ্গে কথা বলে বিবিসি যেটা আভাস পেয়েছে, তা হলো এই মুহূর্তে শেখ হাসিনাকে নিয়ে ভারতের সামনে কার্যত তিনটি ‘অপশন’ বা রাস্তা খোলা আছে।
প্রথম রাস্তাটা হলো, বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রীর জন্য তৃতীয় কোনও দেশে আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা, যেখানে তিনি নিরাপদে ও সুরক্ষিত পরিবেশে থাকার নিশ্চয়তা পাবেন।
দ্বিতীয় অপশনটা হলো, শেখ হাসিনাকে রাজনৈতিক আশ্রয় (‘পলিটিক্যাল অ্যাসাইলাম’) দিয়ে ভারতেই এখনকার মতো রেখে দেওয়া।
তৃতীয় পথটার হয়তো এখনই বাস্তবায়ন সম্ভব নয়– কিন্তু ভারতে কর্মকর্তা ও পর্যবেক্ষকদের একটা অংশ বিশ্বাস করেন কিছুদিন পরে উপযুক্ত পরিস্থিতি এলে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার ‘রাজনৈতিক প্রত্যাবর্তনে’র জন্যও ভারত চেষ্টা করতে পারে– কারণ দল বা রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আওয়ামী লীগ এখনও ফুরিয়ে যায়নি এবং দলের সর্বোচ্চ নেত্রী হিসেবে তিনি দেশে ফিরে সংগঠনের হাল ধরতেই পারেন!
এর মধ্যে ভারতের কাছে অপশন হিসেবে প্রথমটাই যে ‘সেরা’– তা নিয়েও অবশ্য কূটনৈতিক বা থিঙ্কট্যাঙ্ক মহলে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ, তিনি ভারতেই রয়ে গেলে সেটা আগামী দিনে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে বলে তারা মনে করছেন।
এর পাশাপাশি ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ঢাকার কাছ থেকে যদি কোনও অনুরোধ আসে– সেটা যে কোনও না কোনও যুক্তিতে দিল্লি খারিজ করে দেবে তাও একরকম নিশ্চিত।
কাজেই শেখ হাসিনাকে বিচারের জন্য বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়াটাকে ভারতের জন্য কোনও বাস্তবসম্মত ‘অপশন’ বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন না।
সুতরাং অন্যভাবে বললে– শেখ হাসিনাকে নিয়ে স্বল্প বা দীর্ঘমেয়াদে ভারতের সামনে উপরে উল্লিখিত তিনটে রাস্তাই খোলা থাকছে।