তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। রোববার (৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাতে সেন্ট কিটসে মুখোমুখি হয় দু’দল। টস জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। তিন অর্ধশতকে ভর করে প্রতিপক্ষকে ২৯৫ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য দেয় মেহেদী হাসান মিরাজের দল। জবাবে রাদারফোর্ডের শতকে ১৪ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর করে স্বাগতিকরা। বাংলাদেশের কাছে টানা ১১ ওয়ানডে হারের পর জয়ের দেখা পেলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
নির্ধারিত লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ক্যারিবীয়দের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। স্কোরবোর্ডে ২৭ রান যোগ করতেই দুই ওপেনারকে হারায় তারা। স্বাগতিক শিবিরে প্রথম আঘাত হানেন পেসার তানজিম হাসান সাকিব। তার করা অষ্টম ওভারের পঞ্চম বলটি স্কিড করে ঢুকেছিল। তবে ব্যাটে খেলতে পারেননি কিং। লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ার আগে ১৭ বলে ৯ রান করে প্যাভিলিয়নে ফেরেন তিনি। আরেক ওপেনার এভিন লুইসকে সাজঘরে ফেরান নাহিদ রানা। এই পেসারের গতিতে পরাস্ত হয়েছেন লুইস। ৩১ বলে ১৬ রান করে লেগ বিফোরের ফাঁদে পড়ে সাজঘরে ফেরত যান তিনি।
দুই ওপেনারের বিদায়ের পর তৃতীয় উইকেট জুটিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ভালো ভিত গড়ে দেন শাই হোপ ও কেসি কার্টি। যদিও ২১ রান করা কার্টিকে ফিরিয়ে সেই জুটি ভাঙেন রিশাদ। কিন্তু কার্টি সাজঘরে দ্রুত ফিরলেও শতকের পথে এগোচ্ছিলেন হোপ। শেষ পর্যন্ত ৮৬ রানে তাকে ফেরান অধিনায়ক মিরাজ।
হোপের বিদায়ের পর শারেফানে রাদারফোর্ডের সঙ্গে জুটি গড়েন জাস্টিন গ্রেভস। এই দুজনেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেছেন। রাদারফোর্ড রীতিমতো ঝড় তোলেন। সাজঘরে ফেরার আগে ৮০ বলে ১১৩ রান করেছেন এই মিডল অর্ডার ব্যাটার। আর গ্রেভস অপরাজিত ছিলেন ৪১ রান করে।
বাংলাদেশের হয়ে একটি করে উইকেট পেয়েছেন নাহিদ রানা, তানজিম সাকিব, মেহেদি মিরাজ, রিশাদ হোসেন ও সৌম্য সরকার।
এর আগে, টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু করে বাংলাদেশ। দৃষ্টিনন্দন তিনটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন সৌম্য সরকার। কিন্তু তাতেই মনে হচ্ছিল অতি আত্মবিশ্বাস ভর করেছে তার ওপর। যার খেসারত দিতে হয় ৫ম ওভারের ৫ম বলে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ দিয়ে। ১৮ বলে ১৯ রান করে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
পরে দ্রুত আউট হয়ে দলকে বিপদে ফেলেন সৌম্য ও লিটন দাস। এরমধ্যে ওয়ান ডাউনে ব্যাট করতে নেমে লিটন খেলেছেন ৭ বলে মাত্র ২ রানের ইনিংস। ৪৬ রানে ২ উইকেট পড়ার পর জুটি বেঁধে দলকে উদ্ধারের কাজ করেন আরেক ওপেনার তানজিদ হাসান তামিম এবং অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজ। ৭৯ রানের জুটি গড়েন তারা।
অন্যদিকে এরই মধ্যে ক্যারিয়ারের তৃতীয় হাফ সেঞ্চুরি পূরণ করেন তানজিদ হাসান তামিম, কিন্তু ইনিংসটা আরও বড় করতে পারেননি। ৬০ রানের মাথায় আউট হয়ে যান বাঁহাতি এই ওপেনার। ৬০ বলে খেলা ইনিংসটি সাজানো ছিল ৬টি বাউন্ডারি আর ৩টি ছক্কায়।
এরপর আফিফ হোসেনকে নিয়ে ৬২ বলে ৫৪ রানের জুটি গড়েন মিরাজ। ২৯ বলে ২৮ করে আউট হন আফিফ। মিরাজ খেলছিলেন দেখেশুনে ধীরগতিতে। শেষ পর্যন্ত মারমুখী হতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। সিলসকে বড় শট খেলতে গেলে বল উঠে যায় আকাশে। ১০১ বলে ৬ চার আর ১ ছক্কায় মিরাজের ইনিংসটি ছিল ৭৪ রানের।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের পক্ষে রোমারিও শেফার্ড ৫১ রানে ৩টি আর আলজেরি জোসেফ ৬৭ রানে নেন ২টি উইকেট।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ২৯৪/৬ (মিরাজ ৭৪, তানজিদ ৬০, মাহমুদউল্লাহ ৫০*, জাকের ৪৮, আফিফ ২৮; শেফার্ড ৩/৫১, আলজারি ২/৬৭, সিলস ১/৬৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৪৭.৪ ওভারে ২৯৫/৫ (রাদারফোর্ড ১১৩, হোপ ৮৬, গ্রিভস ৪১*, কার্টি ২১, লুইস ১৬; তানজিম ১/৫৫, নাহিদ ১/৫০, রিশাদ ১/৪৯, মিরাজ ১/৬২, সৌম্য ১/২৪)।
ফলাফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচসেরা: শেরফান রাদারফোর্ড (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)
আগামীকাল একই ভেন্যুতে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে মুখোমুখি হবে দু’দল।