স্মার্টফোন কেনার সময় আমরা অনেকেই একটি দ্বিধায় পড়ি। অফিসিয়াল ফোন কিনব নাকি আন-অফিশিয়াল ফোন? দুটোর মধ্যেই কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। সাধারণত দামের পার্থক্যের কারণেই অনেকে আন-অফিশিয়াল ফোনের দিকে ঝুঁকে পড়েন। তাই এই ধরনের সমস্যার জন্য মোবাইল কেনার আগে জনপ্রিয় ওয়েবসাইট MobileDokan থেকে জেনে নিয়ে ক্রয় করলে ঝুকিতে পড়ার সম্ভাবনা কম থাকবে।
কিন্তু, শুধুই কি দামের পার্থক্য? নাকি আরও কোনো বিষয় আছে অফিসিয়াল ফোন এবং আন-অফিসিয়াল ফোনের মাঝে এসব বিষয় আলোচনা করা হয়েছে এই পোস্টে। বিস্তারিত জানতে শেষ অব্দি পড়ুন।
অফিসিয়াল মোবাইল ফোন
অফিসিয়াল মোবাইল ফোন হলো সেগুলো যা বৈধ পথে দেশে আমদানি করা হয় এবংএসব ফোনের ক্ষেত্রে সরকারি ট্যাক্স ও ভ্যাট পরিশোধ করা হয়ে থাকে। এই ফোনগুলো বৈধ পথে ইম্পোর্টারদের হাত ধরে দেশে আমদানি করার পর দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে দেয়া হয়। অফিসিয়াল ফোন কেনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে সম্পূর্ণ ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়।
ওয়ারেন্টি থাকার কারণে ফোনটি ক্রয় করার পর যেকোনো সমস্যায় তারা ফোনটি সার্ভিস করে দিয়ে থাকে কিংবা কিছু ক্ষেত্রে নতুন ফোন রিপ্লেস করে দেয়।
আন-অফিশিয়াল মোবাইল ফোন
আন-অফিশিয়াল মোবাইল ফোনগুলো অবৈধ পথে দেশে প্রবেশ করে। এই ফোনগুলোর জন্য সাধারণত সরকারি ট্যাক্স ও ভ্যাট পরিশোধ করা হয় না। আন-অফিশিয়াল ফোনের ক্ষেত্রে সবথেকে বড় সুবিধা হচ্ছে এগুলোর দাম অফিসিয়াল ফোনের তুলনায় অনেক কম হয়ে থাকে।
কিছু ক্ষেত্রে অফিসিয়াল ফোনের তুলনায় ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা পার্থক্য হয়ে থাকে। কিন্তু, আন-অফিসিয়াল ফোনের ক্ষেত্রে ব্রান্ড থেকে কোনো প্রকার ওয়ারেন্টি সেবা পাওয়া যায়না।
অফিসিয়াল নাকি আন-অফিসিয়াল মোবাইল? কোনটি ভালো জানার জন্য বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। নিম্নে এসব বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
দামের পার্থক্য
আন-অফিশিয়াল ও অফিসিয়াল মোবাইল ফোনের দাম এর পার্থক্য মূলত ট্যাক্স এবং ভ্যাটের কারণে হয়ে থাকে। আন-অফিশিয়াল ফোন আমদানির ক্ষেত্রে এই ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়া হয়। ফলে বিক্রেতারা কম দামে ফোন বিক্রি করতে পারে
ওয়ারেন্টি এবং আফটার সেলস সার্ভিস
অফিসিয়াল ফোনের সাথে ব্র্যান্ডের পক্ষ থেকে সাধারণত ১ বছর কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে এর থেকে বেশি সময়ের জন্য ওয়ারেন্টি দেয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে ফোনে কোনো সমস্যা হলে ফ্রিতে সার্ভিসিং বা পার্টস পরিবর্তনের সুবিধা পাবেন। আন-অফিশিয়াল ফোনের ক্ষেত্রে কোনো অফিসিয়াল ওয়ারেন্টি থাকে না। সেলার হয়তো সীমিত সময়ের জন্য তার নিজস্ব ওয়ারেন্টি দিতে পারে, কিন্তু সেটি ব্র্যান্ড ওয়ারেন্টির মতো নির্ভরযোগ্য নয়।
সেক্ষেত্রে, আন-অফিসিয়াল ফোন কেনার পর যদি ফোনের কোনো ধরনের সমসসা দেখা দেয়, আপনাকে তা নিজের পকেটের টাকা দিয়ে ঠিক করে নিতে হবে। অনেক সময় আন-অফিসিয়াল ফোনগুলো ডেড হয়ে যায়।
ফোন আসল কিনা
অফিসিয়াল ফোন কেনার সময় ফোনের জেনুইননেস সম্পর্কে নিশ্চিত থাকতে পারেন। ব্র্যান্ড নির্ধারিত মান নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই এই ফোনগুলো বাজারে রিলিজ করা হয়। আন-অফিশিয়াল ফোনের ক্ষেত্রে ফোনটি আসল নাকি নকল সেটি যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে। কারণ, অনেক সময় পুরনো বা রিফারবিশড ফোনও আন-অফিশিয়াল হিসেবে বিক্রি করে অনেকেই।
ফোন অফিসিয়াল কিনা তা জানার একটি সহজ উপায় হলো আইএমইআই (IMEI) নাম্বার চেক করা। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এর ওয়েবসাইটে কিংবা যে ব্রান্ডের ফোন ক্রয় করেছেন তাদের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে IMEI নাম্বার চেক করার মাধ্যমে ফোনটি অফিসিয়াল কিনা তা যাচাই করে দেখতে পারবেন।
সফটওয়্যার আপডেট
অফিসিয়াল ফোনগুলোর ক্ষেত্রে নিয়মিত অফিসিয়াল আপডেট পাওয়া যায়। অ্যান্ড্রোয়েড আপডেট এবং সিকিউরিটি আপডেট নিয়মিত পাওয়া যায়। ফলে, ফোনের যদি কোনো সিকিউরিটি জনিত সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে সেগুলো ফিক্স হয়ে যায়। এছাড়া, ফোনে নতুন ফিচার পাওয়া যায় এবং স্মুথ হয়। কিন্তু, আন-অফিসিয়াল ফোনের ক্ষেত্রে সফটওয়্যার আপডেট পাওয়া যায়না।
আইনগত বিষয়
আন-অফিশিয়াল মোবাইল ফোন কেনা আইনত অবৈধ। কারণ এই ফোনগুলো ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে দেশে আমদানি করে অসাধু চক্র। যদিও স্মার্টফোন ইউজারদের বিরুদ্ধে সরাসরি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। তবে এই ধরনের ফোন ক্রয় করা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য হুমকিস্বরূপ। তাই, আন-অফিসিয়াল ফোন ক্রয় করা থেকে বিরত থাকা উচিত।
শেষ কথা
সবদিক বিবেচনা করলে অফিসিয়াল ফোন সবথেকে ভালো। কারণ, এসব ফোনে ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়, আইনত বৈধ এবং নিয়মিত আপডেট পাওয়া যায়। অপরদিকে, আন-অফিসিয়াল ফোনে ওয়ারেন্টি পাওয়া যায়না, নিয়মিত আপডেট পাওয়া যায়না এবগ্ন এগুলো ব্যবহার আইনত অবৈধ।