ভারতে ‘মলিউড’ হিসেবে পরিচিত কেরালার মালয়লম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ঘিরে `হ্যাশট্যাগ মি-টু’ (#MeToo) আন্দোলনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। সিনেমার শুটিং কিংবা সেটে কখনো অভিনেতা, কখনো পরিচালক কিংবা প্রযোজকের হাতে তারা কীভাবে যৌন হেনস্তার শিকার হয়েছেন; তা ফাঁস করে দিচ্ছেন অভিনেত্রীরা। এখন পর্যন্ত ১৭ জন অভিনেত্রী এই অভিযোগ জানিয়েছেন বলে জানা যায়।
বিষয়টি নিয়ে কেরালা থেকে নির্বাচিত কংগ্রেসের সাংসদ শশী থারুর এনডিটিভিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারতীয় সমাজের সামগ্রিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মন্তব্য করেছেন, ভারতীয় পুরুষদের মধ্যে অবশ্যই সমস্যা আছে। নারীর বিরুদ্ধে সহিংস অপরাধ নিয়ন্ত্রণে যদি কোনও আশা না থাকে, যদি নির্মূল না হয়, তাহলে এটি ভয়াবহ সমস্যা।
এনডিটিভির সাক্ষাৎকারে পদ্ধতিগত পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে মলিউডে যৌন নিপীড়নের ঘটনা উন্মোচনের জন্য নিজের সমর্থন প্রকাশ করেন থারুর। তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০১২ সালের নির্ভয়া ট্র্যাজেডি এবং ২০২৪ সালে সাম্প্রতিক আরজি কর হাসপাতালের ধর্ষণ এবং হত্যার মতো আলোচিত মামলা থাকার পরও এই সমস্যাগুলো মোকাবিলায় যথেষ্ট অগ্রগতি নেই। তিনি বলেন ‘মনে হচ্ছে এক ডজন বছরেও কিছুই পরিবর্তন হয়নি।’
এ ছাড়া সাক্ষাৎকারে গণমাধ্যমে রিপোর্ট করা যৌন নির্যাতনের উদ্বেগজনক হার তুলে ধরে বিষয়টিকে একটি দৈনন্দিন ঘটনা হিসাবে বর্ণনা করেছেন থারুর। এসব খবর বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর নারীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে বলেও মনে করেন তিনি।
ভারতে ‘হ্যাশট্যাগ মি-টু’ (#MeToo) আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে কেরালার ভূমিকার প্রশংসা করেছেন কেরালার প্রভাবশালী এই রাজনীতিবিদ। ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির মধ্যে আটকে থাকা সমস্যাগুলো প্রকাশে রাজ্যের ভূমিকারও প্রশংসা করেছেন তিনি। তবে যৌন নিপীড়নের বিষয়ে বিচারপতি হেমা কমিটির রিপোর্ট প্রকাশে কেরালা সরকারের বিলম্বকে তিনি ‘অমার্জনীয় অপরাধ’ বলেছেন।
মলিউডের বাঘা বাঘা কর্তার বিরুদ্ধে একের পর এক অভিযোগের মধ্যে ইতিমধ্যে মালয়লম মুভি অ্যাক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সহ বেশ কয়েকজন অভিনেতাও পদত্যাগ করেছেন। পদত্যাগের ঘটনাগুলোকে সঠিক মনে করলেও এটি পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন কংগ্রেস সাংসদ। এ ক্ষেত্রে যৌন নিপীড়নের সুযোগ করে দেওয়া সিস্টেমকেই বদলানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন তিনি। কর্মক্ষেত্রে তিনি নারীদের জন্য বিশ্রামাগার এবং নিরাপদ স্থানের মৌলিক সুবিধাগুলোর ওপরও জোর দেন। একটি স্বাধীন ফোরাম প্রতিষ্ঠার আহ্বানও জানান থারুর, যেখানে নারীরা নিরাপদে অভিযোগ জানাতে পারবেন।
ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে, মালয়লম ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে হেমা কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পরই একের পর এক অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে। এ অবস্থায় ভেঙে দেওয়া হয়েছে অ্যাসোসিয়েশন অব মালয়লম মুভি আর্টিস্টস নামের প্রভাবশালী সংগঠনটি।