ঢাকা
১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:৩২
প্রকাশিত : জুলাই ৩০, ২০২৪
আপডেট: জুলাই ৩০, ২০২৪
প্রকাশিত : জুলাই ৩০, ২০২৪

ঢাবি প্রশাসনের দায়িত্বশীলদের পদত্যাগের দাবি সাদা দলের

ঢাবি প্রতিনিধি: কোটা সংস্কার আন্দোলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন ও বহিরাগত কর্তৃক সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় অসংখ্য শিক্ষার্থী হতাহতের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের পদত্যাগ দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের সংগঠন সাদা দল।

মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বেলা সোয়া ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নেতৃবৃন্দ এই দাবি জানান।

এ সময় তারা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ৯ দফার সাথে পূর্ণ ঐক্যমত্য পোষণ করে আরও ১১ দফা দাবি জানান।

সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রো উপাচার্য (প্রশাসন) ও (শিক্ষা), কোষাধ্যক্ষ, প্রক্টর, যে হলগুলো হামলা থেকে রক্ষায় ব্যর্থ প্রভোস্টগণ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ সকলের পদত্যগের দাবি জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাদা দলের আহবায়ক অধ্যাপক মো. লুৎফর রহমান। এসময় যুগ্ম-আহ্বায়ক অধ্যাপক মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান ও অধ্যাপক আবদুস সালাম, পিজে হার্টজ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সিদ্দিকুর রহমান খান, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবুল কালাম সরকার প্রমুখ শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন।

১১ দফা উল্লেখ করে অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে বিশ্বাসী। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে, আমরা দেশে কোনো অরাজকতা-বিশৃঙ্খলা চাই না। আমরা চাই দেশে শান্তি বজায় থাকুক, জনজীবন স্বস্তিময় হোক। তাই উদ্ভূত সংকটময় পরিস্থিতিতে আমরা নিম্নোক্ত দাবি পেশ করছি:

১. গত ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর ছাত্র নামধারী ও বহিরাগত সন্ত্রাসীদের হামলা এবং পরবর্তীতে ক্যাম্পাসে সংঘটিত সকল ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করা।

২. সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে ব্যর্থ হওয়ায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পদত্যাগ।

৩. অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা।

৪. কারফিউ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করে জনজীবন স্বাভাবিক করা।

৫. জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্তের ব্যবস্থা করে গত ১৬ জুলাই থেকে আন্দোলন দমনের নামে শিক্ষার্থীসহ শত শত মানুষ হত্যায় জড়িত আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য ও সরকার সমর্থক সন্ত্রাসীদের চিহ্নিত করে দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং নিহতদের পরিবারকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ ও একই সাথে এ হামলায় আহত সকলের সুচিকিৎসার যথাযথ ব্যবস্থা করা।

৬. আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় স্থাপনা ও সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি সাধনের ঘটনা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে নিরপেক্ষ ও নির্মোহ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনা।

৭. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীদের ডিবি হেফাজত থেকে পরিবারের কাছে হস্তান্তর এবং গ্রেপ্তারকৃত সকল শিক্ষার্থীকে অবিলম্বে মুক্তি প্রদান।

৮. শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মামলা প্রত্যাহার এবং তাদেরকে গ্রেপ্তার ও হয়ারনি না করা।

৯. বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বশেষ ৮ দফা দাবি দ্রুত বাস্তবায়ন করে সংকটের সমাধান করা। তদন্ত ছাড়াই ঘটনার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে পেশাজীবীসহ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকদের গণগ্রেপ্তার।

১০. রিমান্ডে নিয়ে বর্বোরচিত নির্যাতন বন্ধ করা এবং গ্রেপ্তারকৃতদের অবিলম্বে মুক্তি প্রদান করা

১১. জনদাবি মেনে নিয়ে সরকারের পদত্যাগ এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করা।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের কোটাবৈষম্যের বিরুদ্ধে পরিচালিত আন্দোলন অত্যন্ত যৌক্তিক ও ন্যায়সঙ্গত বিবেচনা করে আমরা শুরু থেকেই এ আন্দোলনকে সমর্থন জানিয়ে আসছি। আন্দোলনকারীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে উদ্ভূত সংকটের দ্রুত সমাধানের কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্যও সরকারের প্রতি আমরা একাধিকবার আহ্বান জানিয়েছি। কিন্তু সরকার একটি ন্যায্য দাবিকে কেন্দ্র করে পরিচালিত শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিয়ে আইন-আদালতের কথা বলে সংকটকে প্রলম্বিত করে। শুধু তাই নয়, শুরু থেকেই সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গ আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরি প্রত্যাশীদের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিরোধী আখ্যা দিয়ে তাদের আন্দোলনকে হেয় প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা চালায়।’

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ভূমিকা পালন করেছে উল্লেখ করে বলা হয়, আন্দোলন আরো জোরদার হলে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীদেরকে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রীসহ সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নামধারী এবং সন্ত্রাসীদের দ্বারা নির্মম হামলার শিকার হয়। অত্যন্ত পরিতাপের বিষয় যে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিস্ক্রিয় ভূমিকা পালন করে এবং বহিরাগত সন্ত্রাসীদের আক্রমণ হতে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়।’

‘এর জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় হলগুলোতে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। আমরা মনে করি গত দেড় দশক ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সরকার সমর্থক ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর যে নির্মম নির্যাতন চালিয়েছে, এগুলো ছিল এর প্রতিক্রিয়ায় পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।’

‘এই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে শিক্ষক সমিতি কোন ভূমিকা ছিলো না উল্লেখ করে বলা হয়, অত্যন্ত দুঃখের সাথে বলতে চাই যে, গত প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সরকার সমর্থক শিক্ষকদের দ্বারা পরিচালিত শিক্ষক সমিতি আর সেই ভূমিকা পালন করতে পারছে না। তাদের কর্মকাণ্ডে শিক্ষক সমাজের মতামত ও প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটছে না। সাম্প্রতিক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনেও এমনটাই ঘটেছে। আমাদের শিক্ষার্থীদের রক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেমন এগিয়ে আসেনি তেমনি শিক্ষক সমিতিও কোনো ভূমিকা রাখেনি।’

‘এই আন্দোলন জনসাধারণের দীর্ঘদিনের দ্রোহের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে উল্লেখ করে বলা হয়, আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, কোটা সংস্কারের জন্য বৈষম্যবিরোধী চলমান ছাত্র আন্দোলনটি ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ধ্বংস, মানুষের ভোটাধিকার হরণ, বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্থ করে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করে বর্তমান সরকার দেশের গণমানুষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে সীমাহীন দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে একটি শ্রেণি বিপুল বিত্ত-বৈভবের মালিক হয়েছে। অন্যদিকে দেশের সিংহভাগ মানুষের দৈনন্দিন জীবন-যাপন কেবল কষ্টকরই নয়, প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের মনে যে দ্রোহের সঞ্চার হয়েছে, এর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এবারের স্বতঃস্ফুর্ত গণআন্দোলনে।’

সর্বশেষ
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram