

নুরুল ইসলাম আসাদ, উজিরপুর (বরিশাল) প্রতিনিধি: প্রায় ২ (দুই) যুগ বছর পর দেশে ফিরতে যাচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বরিশাল-২ (উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসনের আলোচিত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম ফারুক অভি। এক সময় ছাত্র রাজনীতি থেকে উঠে আসা এই নেতা বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। সম্প্রতি তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, নভেম্বর মাসেই তিনি বাংলাদেশে ফিরবেন। তাঁর ভাষায়, “দেশে ফেরা আমার কাছে প্রায়োরিটি, নির্বাচনে অংশ নেওয়া সেকেন্ডারি।”
অভি ১৯৯৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরবর্তী ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি পরাজিত হন এবং রাজনৈতিক প্রতিকূলতা ও একাধিক মামলার কারণে ২০০২ সালে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন। এর পর প্রায় দুই দশক তিনি কানাডায় প্রবাস জীবন কাটান। এখন দেশে ফেরার ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই উজিরপুর ও বানারীপাড়ায় তাঁর পুনরাগমন নিয়ে নতুন আলোচনা শুরু হয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে জোর গুঞ্জন উঠেছে-অভি দেশে ফিরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন। তবে তিনি নিজে জানিয়েছেন, এখনো কোনো দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক আলোচনা হয়নি। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, “আমি কোনো ইসলামপন্থি জোটে যাচ্ছি না।” এ বক্তব্যে ধারণা করা হচ্ছে, তিনি হয়তো কোনো প্রগতিশীল বা মূলধারার রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনায় যেতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় প্রবাসে থাকলেও অভির জনপ্রিয়তা পুরোপুরি হারিয়ে যায়নি। বিশেষ করে ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে বরিশাল-২ আসনের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড অনেকেই এখনো স্মরণ করেন। তবে সময় বদলেছে-নতুন প্রজন্মের ভোটার, পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিবেশ এবং শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বীরা এখন তাঁর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে।
স্থানীয়দের ধারণা, অভির ফেরাকে ঘিরে উজিরপুর ও বানারীপাড়ার মাঠে এক ধরনের উচ্ছ্বাস ও কৌতূহল দেখা দিয়েছে। কেউ কেউ মনে করছেন, তিনি ফিরে আসলে এলাকায় রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি হতে পারে। বিশেষত বরিশাল-২ আসনে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থীদের পাশাপাশি অভির অবস্থান একটি ‘তৃতীয় শক্তি’র জন্ম দিতে পারে।
অন্যদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অভি যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেন, তবে তাঁকে পুনরায় সংগঠন পুনর্গঠন, জনগণের সঙ্গে সরাসরি সংযোগ এবং তরুণ ভোটারদের আস্থা অর্জনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা নিতে হবে। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর মাঠ পর্যায়ে সক্রিয়তা ফিরিয়ে আনা হবে তাঁর সবচেয়ে বড় পরীক্ষা।
বর্তমানে তাঁর দেশে ফেরার ঘোষণায় বরিশাল-২ আসনে রাজনৈতিক উত্তাপ বাড়ছে। অভির সমর্থকরা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন, কেউ কেউ তাঁর সমর্থনে প্রচারণাও শুরু করেছেন। সব মিলিয়ে নভেম্বরের শুরুতেই গোলাম ফারুক অভির প্রত্যাবর্তন শুধু একটি ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নয়-বরং এটি দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিতে নতুন এক সমীকরণ সৃষ্টি করতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন।

