জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: টেকনাফের দুর্গম পাহাড়ে মানব পাচারকারীদের আস্তানায় ‘বজ্র’ অভিযানে ছয়জন জিম্মিকে জীবিত উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। অভিযানে একজন পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে এবং পাচারকারীদের গোপন ডেরা ধ্বংসের পাশাপাশি উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ।
বিজিবি সূত্র জানায়, মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) ভোরে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি)-এর অর্ধশতাধিক সদস্যের একটি বিশেষ আভিযানিক দল রাজারছড়া করাচিপাড়া এলাকার গহীন পাহাড়ে অভিযান চালায়। পাচারকারীদের হাতে বন্দি ছয়জন নিরীহ ভুক্তভোগীকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
অভিযানটি পরিচালনা করেন টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি।
দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাতের আঁধারে পাহাড় ঘিরে ফেলে বিজিবি সদস্যরা চিরুনি অভিযান শুরু করেন। পাচারকারীরা পালানোর চেষ্টা করলে পাহাড় ঘিরে কৌশলগতভাবে অগ্রসর হয় বিজিবি। প্রায় ছয় ঘণ্টার টানা অভিযানে তারা অসীম সাহস ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দেন।
অভিযান শেষে পাচারকারীদের আস্তানা থেকে ৩টি ওয়ান শুটার গান, ১টি একনলা বন্দুক, ৫ রাউন্ড তাজা গুলি, ১ রাউন্ড একনলা বন্দুকের গুলি এবং ২টি দেশীয় চাকু উদ্ধার করা হয়।
উদ্ধার হওয়া জিম্মিরা জানান, পাচারকারীরা মালয়েশিয়া ও থাইল্যান্ডে ভালো কাজের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের পাহাড়ে আটকে রাখে। স্থানীয় দালালদের মাধ্যমে প্রত্যেককে মাথাপিছু ৪০ হাজার টাকায় পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে তারা মুক্তিপণ দাবি, ভয়াবহ নির্যাতন ও প্রাণনাশের হুমকির শিকার ছিলেন।
আটক পাচারকারী রুবেল (২১), পিতা মো. হোছন, করাচিপাড়া এলাকার বাসিন্দা। পলাতকদের মধ্যে রয়েছেন — আব্দুল্লাহ (২৬), রিয়াজ (৩০), মো. হোছন (৪৬), আনোয়ারা বেগম (৪০), রায়হান (২৪), জয়নাল (২৪), আব্দুল্লাহ (২৫) ও সিরাজ (২৬)। সবাই টেকনাফের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দা।
টেকনাফ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল আশিকুর রহমান, পিএসসি বলেন, “মানবতা ও দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো পাচারকারীকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। এই অভিযান আমাদের অঙ্গীকারের প্রমাণ—সীমান্তে অপরাধ দমনে বিজিবি অটল ও সক্ষম।”
তিনি আরও জানান, উদ্ধারকৃত ভুক্তভোগী, আটক পাচারকারী ও অস্ত্র-গোলাবারুদ আইনানুগ প্রক্রিয়ায় টেকনাফ থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়াধীন।
প্রসঙ্গত, টেকনাফ সীমান্তে মাদক ও মানব পাচার রোধে বিজিবির অভিযান নিয়মিতভাবে চলছে। গত সেপ্টেম্বরেও ২ বিজিবির পরিচালিত আরেক অভিযানে ৩ পাচারকারী আটক ও ৮৪ ভুক্তভোগীকে মুক্ত করা হয়েছিল।