সাইফুল ইসলাম সুমন, জুড়ী (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: কয়েক দিনের বৃষ্টিপাত এবং নদীর উজানে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে ৩য় দফা বন্যার কবলে মৌলভীবাজারের জুড়ীবাসী। পূর্বের বন্যার রেশ কাটতে না কাটতেই সীমান্তবর্তী ও হাকালুকি হাওর এলাকা জুড়ীতে আবারো বন্যা দেখা দিয়েছে। নদনদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়ে উপজেলার বিভিন্ন নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে বৃহস্পতিবার বিকেল পর্যন্ত প্রায় ৩২ হাজার মানুষ পানিবন্ধি হওয়ার তথ্য নিশ্চিত করেছেন উপজেলা প্রশাসন। ৪০ হেক্টর কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উৎকন্ঠায় দিন পার করছেন কৃষকরা।
গতকাল উপজেলার ফুলতলা, সাগরনাল ও জায়ফরনগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা সরজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, টানা তিনদিনের বর্ষন ও উজান (ভারতের ত্রিপুরার ধর্মনগর ও কৈলাশহর) থেকে নেমে আসা ঢলে আকস্মিক বন্যায় দিশেহারা হয়ে পড়ছেন বন্যা আক্রান্ত লোকজন। বাড়ী-ঘর তলিয়ে যাওয়ায় আশ্রয় কেন্দ্রে ঠাই নিয়েছেন অনেকে। বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ করছে।
ফুলতলা ইউনিয়নের কোনাগাওঁ গ্রামের বাসিন্ধা রফিকুল ইসলাম জানান, সোমবার রাত থেকে বৃষ্টি শুরু হয়, সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বাড়ীর উঠোন ও ঘরের একাংশ পানিতে ডুবে গিয়েছে। পরিবারের লোকজন নিয়ে ঘরের শুকনো অংশে কোনোমতে আশ্রয় নিয়েছি। পানি বাড়তে থাকলে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না।
সাগরনাল ইউনিয়নের পাতিলাসাঙ্গন গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মুহিত মুতলিব জানান, এক সপ্তাহ পূর্বে ৩ বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছিলাম, বন্যায় তলিয়ে গিয়েছে। আমাদের এলাকার প্রায় সব কৃষকদের একই অবস্থা। এবার ধান ঘরে তোলার আশা ছেড়ে দিয়েছি।
হাকালুকি হাওর পাড়ের বেলাগাঁও গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়া জানান, আগের বন্যায় ঘরবাড়ি ভিটে-মাটি নিয়ে গেল। এখন আর কি নেয়ার আছে। বন্যার সাথে অনেকদিন থেকে যুদ্ধ করছি। এ যুদ্ধ শেষ হবে কবে আল্লাহ জানে।
বন্যায় জুড়ী-বিটুলী আঞ্চলিক মহাসড়কসহ ওই এলাকার অধিকাংশ রাস্তা-ঘাট পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় যাতায়াত ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। জুড়ী-লাটিটিলা সড়কের বিস্তর এলাকা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলার পূর্বাঞ্চলের সাথে সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
জুড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাবলু সূত্রধর জানান, উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ি ৬৩৯০টি পরিবারের প্রায় ৩২ হাজার লোক পানিবন্ধি অবস্থায় আছে। এখন পর্যন্ত ২৮টি আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। এরমধ্যে ৩টি আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩টি পরিবার আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসন সব সময় তৎপর রয়েছে।