অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ আবেদন করেছেন। তবে তা নাকচ করে দিয়েছে দুদক।
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন জানান, গত ২১ জুন বেনজীর আহমেদ কমিশনে একটি চিঠি দেন। সেখানে তার স্ত্রী ও দুই মেয়ের নামে সম্পদ সম্পর্কে তাদের অবস্থান বর্ণনা করা হয়েছে। ওই চিঠিতে তিনি, এমনকি তার পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদের সময় চাওয়া হয়নি। সেখানে বেনজীর নিজের অবস্থানও জানাননি।
বেনজীরের না আসার বিষয়ে আইন ও বিধি অনুযায়ী, পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন সংস্থাটির সচিব খোরশেদা ইয়াসমীন।
সূত্র জানায়, দুদক চেয়ারম্যানকে দেওয়া চিঠিতে বেনজীর অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন। পাশাপাশি দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালতের নির্দেশে এ পর্যন্ত ক্রোক ও ফ্রিজ করা সম্পদ সম্পূর্ণ বৈধ বলে দাবি করেন।
রোববার (২৩ জুন) বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু তিনি দুদকের জিজ্ঞাসাবাদে হাজির হননি। এর আগে গত ৬ জুন বেনজীরকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তলব করে দুদক। কিন্তু গত ৫ জুন আইনজীবীর মাধ্যমে দুদকের চেয়ারম্যান বরাবর আবেদন করেন বেনজীর।
জানা গেছে, আবেদনে তিনি বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তার লিখিত বক্তব্য রয়েছে। সেই লিখিত বক্তব্য জমা দিতে দুই মাস সময়ের আবেদন করেন।
বেনজীরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুদক তাকে হাজির হতে ১৭ দিন সময় দিয়ে ২৩ জুন জিজ্ঞাসাবাদের সময় ধার্য করে। তবে জিজ্ঞাসাবাদে না এসে বেনজীর মূলত আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ হারিয়েছেন বলে দুদক সূত্র জানায়।
দুদক সচিব খোরশেদা ইয়াসমিন রোববার (২৩ জুন) গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি একটি লিখিত বক্তব্য দিয়েছেন আইনজীবীর মাধ্যমে। সেই বক্তব্যে উপস্থিতির ব্যাপারে কিছু লেখেননি। সেখানে তার ও পরিবারের সম্পদ অর্জন সম্পর্কে অবস্থান তুলে ধরেছেন।
তার বক্তব্যে আপনারা সন্তুষ্ট কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা এখনই বলা যাচ্ছে না। এটা পর্যালোচনা হবে, অনুসন্ধান টিম তার রিপোর্ট দেবে। সেই রিপোর্ট দেওয়ার সময় বাকি আছে।
বেনজীর লিখিত বক্তব্যে কী বলেছেন তা জানতে চাইলে সচিব বলেন, অভিযোগের বিষয়ে বেনজীর তার নিজের ও তার পরিবারের অবস্থান তুলে ধরেছেন। আমাদের অনুসন্ধানকারী দল এটা দেখছেন। চিঠিটা চেয়ারম্যান ও কমিশনার বরাবর দেওয়া হয়েছে। এটা আমাকে দেওয়া হয়নি। তিনি দেশে আছেন, কী নেই এই সংক্রান্ত কিছু চিঠিতে লেখেননি।
উপস্থিত না হয়ে বেনজীরের বক্তব্যে গ্রহণ করার সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে দুদক সচিব বলেন, এটা সম্পূর্ণ অনুসন্ধান টিমের এখতিয়ার। তারা স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান করছেন। তার বক্তব্য গ্রহণ করা যায় কি না এটা অনুসন্ধান টিম সিদ্ধান্ত নেবে। টিম যে সুপারিশ করবে, তার ভিত্তিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে। দুদক বিধিমালাতে শুনানির বিষয়ে বলা হয়েছে। একটা বর্ধিত সময় তাকে দেওয়া হয়েছে। সেই সময়টা আজ অতিক্রান্ত হয়ে যাবে। সে ক্ষেত্রে অনুসন্ধান দল সব কিছু বিবেচনা করবেন এবং কমিশন এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
দুদক সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আর সময় পাবেন না বেনজীর। এছাড়া দুদক আইনে সময় চেয়ে দ্বিতীয়বার আবেদন করার সুযোগ নেই। এমন পরিস্থিতিতে শিগগির তার ঠিকানায় সম্পদ বিবরণী দাখিলের নোটিশ পাঠানো হবে। এরপর ২১ কর্মদিবস এবং পরে সময়ের আবেদন করলে আরো ১৫ কর্মদিবস সময় পাবেন তিনি। তবে বিদেশে অবস্থান করায় বেনজীর যেমন দুদকের নোটিশ গ্রহণ করতে পারবেন না, তেমনি দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিলও করতে ব্যর্থ হবেন। সম্পদ বিবরণী দাখিল না করলে দুটি মামলা হবে।
জানা যায়, দুদকে সম্পদ বিবরণী দাখিল না করার জন্য হবে ‘নন-সাবমিশন’ মামলা, আর বেনজীর ও তার পরিবারের সদস্যদের যেসব অবৈধ সম্পদের তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে আরেকটি ‘অবৈধ (জ্ঞাত আয়বহির্ভূত) সম্পদ অর্জনের’ মামলা হবে। কমিশনের অনুসন্ধানকারী দল তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দুদক আইনে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় ১০ বছর এবং নন-সাবমিশন মামলায় তিন বছরের সাজার বিধান রয়েছে।