প্রীতি রাণী সাহা আলমডাঙ্গা শহরের পুরাতন বাজারের বনেদী পরিবারের কন্যা ও আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রি। পাশাপাশি আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের শিক্ষার্থী সে।
এ বছরও খুলনা বিভাগের হয়ে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত জাতীয় শিশু-কিশোর ইসলামি সংস্কৃতি প্রতিযোগিতায় (২০২৩-'২৪) হামদ-নাতে দেশসেরার গৌরব ছিনিয়ে এনেছে।
গত ১৩ ও ১৪ মে ঢাকার ইসলামি ফাউন্দেশন মিলনায়তনে যথাক্রমে ২০২৩ ও ২০২৪ সালের প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। পরদিন ১৫ মে আনুষ্ঠানিকভাবে পুরষ্কার প্রদান করা হয়। ধর্মমন্ত্রী ফরিদুল হক খান -এমপি প্রীতি সাহার হাতে পুরষ্কার তুলে দেন। এ সময় মন্ত্রী হিন্দু সম্প্রদায়ের মেয়ে হয়েও হামদ-নাত প্রতিযোগিতায় দেশসেরা হওয়ায় প্রীতি রাণী সাহার ভূয়সী প্রশংসা করেন। উপস্থিত অতিথিরা প্রীতি রাণী সাহার প্রশংসায় ছিলেন পঞ্চমুখ। তাঁরা প্রীতি রানী সাহাকে সাম্প্রদায়িক "সম্প্রীতির কণ্ঠস্বর" বলে আখ্যায়িত করেন।
প্রীতি রাণী সাহা আলমডাঙ্গার পুরাতন বাজার বা রথতলার রতন কুমার সাহার কন্যা। খুব ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ ছিল তার। সঙ্গীতের আবহে বড় হচ্ছে সে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বনেদী পরিবারে জন্ম হলেও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত পারিবারিক শিক্ষায় বেড়ে উঠছে প্রীতি। পিসি রেবা রাণী সাহা আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক। তার অনুপ্রেরণা ও তত্ত্বাবধানেই (গুরু) সঙ্গীতে এই অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে প্রীতি রানী সাহা।
সমাজ যখন ক্রমেই সাম্প্রদায়িকভাবে অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে, ধর্মীয় বিভেদ দু:খজনক মাত্রা স্পর্শ করছে ঠিক সে সময় প্রীতি রাণী সাহা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির প্রীতি মশাল প্রজ্জ্বলিত করেছে তার ইসলামি সঙ্গীতের মাধ্যমে। সাম্প্রদায়িক অন্ধকারে সম্প্রীতির আলো জ্বালানোর দীক্ষা নিয়েছে সে। তার সুনিপূণ কণ্ঠের অসাধারণ কারুকাজে হামদ-নাত যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। অত্যন্ত ভালোবেসে সবিশেষ আন্তর্জাতিকতা দিয়ে সে নিজ কণ্ঠে হামদ -নাত অনুশীলন করে যাচ্ছে।
প্রীতি রানী সাহা জানায়, তাদের পরিবার ধর্মীয় অনুশাসন অবশ্যই মেনে চলে। কিন্তু তাই বলে গোড়া না। শিক্ষিত ও কুসংস্কারমুক্ত পরিবার তাদের। তার পিসিও ( ফুফু) ধর্মীয় গোড়ামী ও কুসংস্কারমুক্ত মানবিক- সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব। তাঁর আদর্শে অনুপ্রাণিত প্রীতি। প্রীতি সাহা আবেগাপ্লুত হয়ে জানায়, "আমার কণ্ঠস্বর যদি সাম্প্রদায়িক বিভেদ কিছুটা হলেও দূর করতে পারে, সম্প্রীতির বন্ধনকে মজবুত করতে পারে, তাহলে আমার প্রচেষ্টা সার্থক হবে।"
আলমডাঙ্গা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনিরুজ্জামান বলেন, "প্রীতি রাণী সাহা আমাদের বিদ্যালয়ের ছাত্রি। বিদ্যালয়ের সকলের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। সে ভালো গান করে।
তার সঙ্গীত শিক্ষক আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক রেবা রাণী সাহা বলেন, "প্রীতির কণ্ঠস্বর অসাধারণ। সঙ্গীত চর্চার ক্ষেত্রে প্রীতির একাগ্রতা আমাকে আশান্বিত করে। ভবিষ্যতে সে প্রতিষ্ঠিত শিল্পী হবে বলে দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস পোষণ করি। আমি প্রীতিকে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত মানসিকতা লালন করতে উৎসাহিত করি। প্রীতি ছাড়াও তমা বিশ্বাস ও নওমি মেধা হামদ-নাতে দেশে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে। তারা দুজনও হিন্দু সম্প্রদায়ের।"
আলমডাঙ্গা বাজারের হলুদপট্টির জগবন্ধু বিশ্বাসের মেয়ে তমা রাণী বিশ্বাস। তমা ২০১৬ সালে জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতায় হামদ- নাত ও পল্লিগিতিতে দেশসেরার খেতাব অর্জন করে। তাছাড়া, নওমী বিশ্বাস মেধা একই বছর প্রীতি রাণী সাহার সাথে সারা দেশে হামদ-নাতে দ্বিতীয় হওয়ার গৌরব অর্জন করে। মেধা পল্লি বিদ্যুত সমিতিতে চাকুরিরত হরিদাস বিশ্বাসের কন্যা। এরা সকলেই আলমডাঙ্গা কলাকেন্দ্রের শিক্ষার্থী।