সারাদেশে ভয় ও আতঙ্ক নিয়ে পুলিশি কার্যক্রম চলছে। থানা, ট্রাফিক বিভাগ থেকে শুরু করে প্রায় সব খানেই জনবল সঙ্কট রয়েছে। কোথাও কোথাও একজন কর্মকর্তা একাধিক বিভাগ সামলাচ্ছেন। এখনও পুলিশ পুরোদমে সক্রিয় না হওয়ায় নিরাপত্তা শঙ্কায় রয়েছেন নাগরিকরা।
সরজমিনে রাজধানীর মোহাম্মদপুর থানায় গিয়ে দেখা যায় সেখানে সেবাপ্রার্থীর সংখ্যা হাতেগোনা। অথচ গণ অভ্যুত্থানের আগে এই থানায় সেবাপ্রত্যাশীদের ভিড় লেগে থাকতো। এদিকে, মিরপুর থানায়ও একই চিত্র দেখা গেছে। দায়িত্বরতদের মধ্যে রয়েছে ঢিলেঢালা ভাব। রুটিন কাজের বাইরে খুব একটা তৎপরতা নেই।
এভাবে রাজধানীর পঞ্চাশটি থানার মধ্যে অন্তত ত্রিশটি থানার কার্যক্রম এভাবেই চলছে। অপরদিকে, যাত্রাবাড়ি ও ভাটার থানার কার্যক্রম নিজ ভবনে শুরু হয়নি এখনও।
মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আলী ইফতেখার হাসান বলেন, মব নিয়ে একটি আতঙ্ক ছিল। আন্দোলনের সময় গণপিটুনিতে অনেক পুলিশ মারা গিয়েছে। কাজ চালিয়ে যেতে হবে- এমন বার্তা মাঠ পর্যায়ে কর্মরতদের কাজে পৌঁছানো হয়েছে। গাড়ি ভাড়া করে টহল চালানো হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
শহরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি থানার কার্যক্রমের ওপর নির্ভর করে। গত ৫ আগস্টের পর নগরবাসিও তা টের পেয়েছেন। একজন বাসিন্দা বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পুরোপুরি তৎপর না হওয়া পর্যন্ত নগরবাসী নিরাপত্তাবোধ করবে না। অপর এক বাসিন্দা বলেন, পুরোপুরি কার্যক্রমে ফিরতে পুলিশ বাহিনীকে সবার সহযোগিতা করা উচিৎ। আবার কেউ কেউ পুলিশের জনবল বাড়ানোর কথা বলছেন।
এদিকে, রাজধানীর থানাগুলোর রাতের চিত্র আরও সুনসান। সেবাপ্রার্থীর সংখ্যা কমার পাশাপাশি মিশ্র প্রতিক্রিয়াও রয়েছে। একজন বাসিন্দা বলেন, আগের সংস্কৃতি থেকে পুলিশ এখনও অনেকটা বের হতে পারেনি। অপর এক বাসিন্দা বলেন, আগে থানায় সেবাপ্রার্থীদের সেভাবে মূল্যায়ন না করা হলেও বর্তমানে চিত্র পাল্টেছে।
অপরদিকে, থানাগুলোতে বদলীর কারণে সদস্যদের আসা-যাওয়া চলছে। থানার বাইরে এলাকা ভিত্তিক টহলও খুব একটা চোখে পড়ছে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
ডিএমপিতে বর্তমানে চারজন যুগ্ম কমিশনার ও সাতজন উপ-কমিশনার সংযুক্ত রয়েছেন। একজন ডিসির অধীনে রয়েছে একাধিক বিভাগ। এছাড়া, গোয়েন্দা বিভাগে প্রয়োজনীয় কর্মকর্তা নেই। কর্মকর্তাদের কথা অধস্তনরা আমলে নিচ্ছেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে। মামলার তদন্তে ধীরগতি রয়েছে। আবার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ক্রাইম বিভাগ থেকে দূরে ছিলেন।
ডিএমপি মুখপাত্র তালেবুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে টহল কার্যক্রম পুরোপুরি শুরু হয়েছে। তবে তা এখনও আগের চেয়ে কম। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি গতিশীল হচ্ছে।
পুলিশের কার্যক্রমে এখনও সবচেয়ে বড় বাধা ভয়, আতঙ্ক এবং আস্থাহীনতা। অন্যদিকে, প্রায় চারশত থানায় কমবেশি অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে। হাজারখানেক যানবাহন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে, প্রায় সব থানায় নতুন কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ফলে সবার মধ্যে কাজের সমন্বয় এখনও গড়ে উঠেনি। তাছাড়া, সোর্স সঙ্কটও রয়েছে। এদিকে, নতুন করে থানায় থানায় ফরমায়েশি মামলা আর তদবিরবাজদের আনাগোনা বেড়েছে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া) ইমামুল হক সাগর বলেন, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চ্যালেজগুলো মোকাবেলা করে কার্যক্রম চলছে। হেডকোয়ার্টার থেকে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে।
সরকারি নির্দেশনা না মেনে ১৮৭জন সদস্য এখনও কর্মস্থলে অনুপস্থিত রয়েছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন, আলোচিত কর্মকর্তা হারুন অর রশিদ, বিপ্লব কুমার সরকার, প্রলয় জোয়ার্দার ও মনিরুল ইসলাম। এছাড়া, অন্তত দশজন পুলিশ সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া বাকীদের আতঙ্কিত হবার কারণ নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।
ইমামুল হক সাগর বলেন, অপরাধীদের শুধুমাত্র আইনের আওতায় আনা হবে। যেসব পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ রয়েছে তারাই গ্রেফতার হয়েছেন।
পুলিশকে পুরোপুরি কার্যক্রমে ফিরতে সাধারণ মানুষকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বাহিনীটির কর্মকর্তারা।