ঢাকা
১২ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১:০৬
প্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০২৪
আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২৪
প্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০২৪

উন্নয়ন নিয়ে শেখ হাসিনার তথ্যের কারসাজি যাচাই হবে: ব্লুমবার্গকে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য

সম্প্রতি মার্কিন সম্প্রচারমাধ্যম ব্লুমবার্গকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। কথা বলেছেন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক খাতের তথ্য-উপাত্তের গরমিলসহ নানা বিষয়ে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ডেটা নিয়ে আমাদের এখানে গুরুতর ঝামেলা আছে। ডেটা নিয়ে এখানে জালিয়াতি করা হয়েছে, চেপে রাখা হয়েছে। আমি এটাকে বলব ডেটা নৈরাজ্য।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলছেন, শেখ হাসিনার প্রশাসন সম্ভবত রপ্তানি, মূল্যস্ফীতি এবং মোট দেশজ উৎপাদন তথা জিডিপির ভুল তথ্য প্রকাশ করেছে। যা ‘নজিরবিহীন অর্থনৈতিক দুর্বলতা’ তৈরি করেছে।

৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে যাওয়ার আগে শেখ হাসিনার সরকার ১৮ দশমিক ৩৬ ট্রিলিয়ন বা ১৮ লাখ কোটি টাকার বেশি বৈদেশিক ঋণ রেখে গেছে। যা মার্কিন মুদ্রায় ১৫৩ বিলিয়ন ডলারের সমান। এটি বাংলাদেশের অন্তত তিন অর্থবছরের বাজেটের সমান।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য এই অবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য তিনটি বাধা বিবেচনা করছেন। সেগুলো হলো—সামষ্টিক অর্থনীতির অস্থিতিশীলতা, মূল্যস্ফীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ঘাটতি।

তিনি বলেন, কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। যার জন্য শেখ হাসিনা ইউক্রেন যুদ্ধকে দায়ী করেছেন। কিন্তু আমরা সেগুলোকে যুক্তিযুক্ত বলে মনে করিনি।

বাংলাদেশের জিডিপিতে ট্যাক্স বা করের অবদান ৭ দশমিক ৩, যা বিশ্বে অন্যতম নিম্নহার। এই হারকে ২০২৫ সালের জুন নাগাদ ৮ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করার পরিকল্পনা নিয়েছে বর্তমান সরকার।

দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এটি একটি প্যারাডক্স। আপনি ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে স্থিতিশীল প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছেন, কিন্তু আপনি সেই অনুপাতে কর সংগ্রহ করেননি। যার অর্থ মূলত, হয় এই প্রবৃদ্ধি কাল্পনিক ছিল অথবা যারা প্রবৃদ্ধি থেকে উৎপন্ন আয় থেকে উপকৃত হয়েছে, তারা করের আওতায় আসেনি এবং সম্ভবত এর একটি বড় অংশ দেশের বাইরে পাচার করা হয়েছে।

অন্তর্বর্তী সরকারের অগ্রাধিকারভিত্তিক একটি কাজ হলো বিদ্যুতের মতো পরিষেবার জন্য অর্থ সংস্থানে প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নবনিযুক্ত গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত সপ্তাহে বলেছেন, বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কাছে আরও তিন বিলিয়ন ডলার জরুরি সহায়তা পাওয়ার জন্য আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং অন্য ঋণদাতাদের কাছ থেকেও তহবিল চাইছে।

রপ্তানিতে ব্যাঘাত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। বর্তমান সংকট শুরু হওয়ার আগেই শেখ হাসিনা সরকারের আমলে রিজার্ভ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গিয়েছিল। এ বিষয়ে গভর্নর বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক বাধ্যবাধকতা পূরণে আন্তব্যাংক বাজার থেকে ডলার কিনছে।

প্রায় ১৭ কোটি জনগণের দেশ বাংলাদেশ সাম্প্রতিক সময়ে উন্নয়নের পরবর্তী ধাপে যাওয়ার জন্য সংগ্রাম করছে। কিন্তু এখন প্রশ্ন হলো—বাংলাদেশে আসলেই অনুন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে ২০২৬ সালের মধ্যে পরবর্তী ধাপে উত্তরণের জন্য প্রস্তুত কি না। কারণ, এরই মধ্যে জাতিসংঘ সলোমন দ্বীপপুঞ্জের এলডিসি উত্তরণের বিষয়টি দেশটির সরকার পরিবর্তন ও রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে স্থগিত করেছে।

বাতিল হচ্ছে শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের লাল পাসপোর্টবাতিল হচ্ছে শেখ হাসিনা ও সাবেক মন্ত্রী-এমপিদের লাল পাসপোর্ট
দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশে আসলে ‘উত্তরণ’ নয় ‘উন্নয়নের’ সমস্যা রয়েছে। তিনি বলেন, অস্থিরতা ও নেতৃত্বের পরিবর্তনের পরও দেশ সঠিক পথেই আছে। জাতিসংঘের প্যানেলে থাকা এই অর্থনীতিবিদ আরও বলেন, পরবর্তী ধাপে উত্তরণের জন্য বাংলাদেশ এখনো তিনটি মানদণ্ড বজায় রেখেছে। সেগুলো হলো—মাথাপিছু মোট জাতীয় আয় (জিএনআই), মানবসম্পদ এবং অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত দুর্বলতা সূচক।

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ ঘোরতর রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থার হিসাব অনুসারে, ছাত্র আন্দোলনে ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ মারা গেছে। এ বিষয়ে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশের অভ্যুত্থান যেকোনো কর্তৃত্ববাদী সরকারের ‘প্লেবুকে’ অনায়াসে জায়গা করে নিতে পারে।

সবশেষে দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটেছে তা ব্যতিক্রম নয়। প্রথমে, আপনি বহুত্ববাদকে ঘৃণা করতে শুরু করেন, তারপরে আপনি গণতান্ত্রিক জবাবদিহি রহিত করেন এবং তারও পরে আপনি আপনার পক্ষপাতদুষ্ট লোকদের সমস্ত প্রতিষ্ঠানে রাখেন—প্রয়োজনীয় যোগ্যতার ভিত্তিতে নয়, বরং তাদের আনুগত্যের ওপর ভিত্তি করে দেশ চলে। যাকে এককথায় চাটুকারিতা বলা যায়।
সূত্র: আজকের পত্রিকা

সর্বশেষ
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram