বছরের পর বছর ধরে বিসিএসের পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে হাইকোর্ট। আদালত বলেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনা আমাদের জন্য কষ্টের। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুবিধা নিয়ে ক্রিমিনাল/বাটপাড়রা বিসিএসের মতো চাকরিতে চলে যাবে এটা মেনে নেওয়া যায় না। এতে প্রকৃত মেধাবীরাই বঞ্চিত হন।
এ সংক্রান্ত এক রিট মামলার শুনানিকালে বিচারপতি কে এম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ রোববার এ মন্তব্য করেন।
আদালত বলেন, বিসিএসের মতো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কেন বারবার ফাঁস হবে। এটাই উদ্বেগের। পিএসসিতে যারা আছেন তারা কেন প্রশ্নপত্র ফাঁস বন্ধ করতে পারছেন না। যদি না পারেন তাহলে এরা দায়িত্ব পালনে অযোগ্য।
সম্প্রতি বিসিএসের মতো পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত চেয়ে হাইকোর্টে রিট করেন ‘সারডা সোসাইটির’ মুরাদ ভুঁইয়া। তিনি আদালতে বলেন, প্রশ্নপত্র ফাঁসে যারা জড়িত তাদের সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন করতে হবে। ২৪ থেকে ৪৫তম বিসিএসের পরীক্ষায় আবেদ আলী কর্তৃক প্রশ্নপত্র ফাঁসের সুবিধা নিয়ে যারা বিসিএস ক্যাডার হয়েছেন তাদের তালিকা তৈরি করতে হবে। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে এই তালিকা প্রকাশ করতে হবে।
এ পর্যায়ে আদালত বলে, তালিকা কীভাবে খুঁজে বের করবেন? রিটকারী বলেন, আবেদ আলী ও তার গংরা এই তালিকার বিষয়টি জানেন।
রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সাইফুজ্জামান বলেন, বিসিএসের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত করছে। আবেদ আলী অনেকের নামও বলেছে। হাইকোর্ট বলেন, ‘বেনজীরের মতো এতটা পাওয়ারফুল নয় আবেদ আলী। তবে ফাঁসকৃত প্রশ্ন যাদের কাছে বিক্রয় করা হয়েছে এবং যারা এর পেছনে রয়েছেন তারা পাওয়ারফুল। তদন্ত সংস্থা কি তাদের গ্রেফতারের ক্ষমতা রাখেন? যদি গ্রেফতারের ক্ষমতা নাই থাকে তাহলে সেভাবেই আদেশ দেওয়া হবে।’
হাইকোর্ট বলে, বেনজীর দেশের বাইরে গেছেন। নিশ্চয়ই কোনো না কোনো চ্যানেলে তিনি বাইরে গেছেন। আমরা শুনেছি বিমানবন্দর দিয়ে তিনি দেশের বাইরে গেছেন। বেনজীরকে চেনেন না এমন কোনো পুলিশ কর্মকর্তা নাই, তাহলে তিনি কীভাবে দেশের বাইরে গেলেন?’
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, উনি দেশের বাইরে গেছেন কি গেছেন না সেটা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে। হাইকোর্ট বলে, ব্যাংকে ১ লাখ টাকার জন্য গেলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। আর বেনজীর কোটি কোটি টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিয়ে গেছেন।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, একটা পাবলিক পরীক্ষায় ৫ লাখ পরীক্ষার্থী অংশ নেন। এর মধ্যে ১৫/২০ হাজার পাশ করেন। এদের মধ্য থেকে ২ হাজার মৌখিক পরীক্ষায় যান। অতএব, রিটকারী যে মেধাশূন্যের ধোঁয়া তুলছে সেটা ঠিক নয়।
হাইকোর্ট বলে, প্রশ্ন পেলে পাশ করা সহজ হয়ে যায়। এটা কেন মানছেন না। আর যারা দুর্নীতির আশ্রয় নেয় তারা ভাইভা বোর্ডে গিয়েও দুর্নীতি করে। শুনানি শেষে হাইকোর্ট এক সপ্তাহ শুনানি মুলতুবির আদেশ দেয়। এ সময়ের মধ্যে রিটের বিষয়বস্তুর উপর সরকারের অবস্থান কি তা জানাতে রাষ্ট্রপক্ষকে বলা হয়েছে।