২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়ের মধ্যে জোরপূর্বক গুমের শিকার ব্যক্তিদের সন্ধানে কথিত ‘আয়নাঘর’সহ বাংলাদেশের যে কোনো স্থান পরিদর্শন এবং প্রয়োজনে যে কোনো ব্যক্তিকে তলব করে জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে গুমের ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিশন। কমিশনের কার্যপরিধি সুনির্দিষ্ট করে গতকাল রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনে একথা জানানো হয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন করে তিন মাসের মধ্যে কমিশনকে প্রতিবেদন জমা দিতে হবে বলেও উল্লেখ করা হয় প্রজ্ঞাপনে।
প্রজ্ঞাপন বলা হয়েছে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা অনুরূপ যেকোনও বাহিনী বা সংস্থার কোনো সদস্য বা সরকারের মদদে, সহায়তায় বা সম্মতিতে কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তি-সমষ্টি কর্তৃক ‘আয়নাঘর’ বা যেকোনও জ্ঞাত বা অজ্ঞাত স্থানে জোর করে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, বলপূর্বক গুমের ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিতকরণ ও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুপারিশ প্রদান এবং জোরপূর্বক গুম হওয়ার ঘটনা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় আইন সংস্কারের সুপারিশসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য কাজ সম্পাদন করবে গঠিত এই কমিশন।
এর আগে, হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরীকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট এই তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন, সাবেক অতিরিক্ত বিচারক মো. ফরিদ আহমেদ শিবলী, মানবাধিকার কর্মী নূর খান, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মিজ নাবিলা ইদ্রিস ও মানবাধিকার কর্মী সাজ্জাদ হোসেন।
তদন্ত কমিশনের কার্যপরিধি সম্পর্কে প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান, তাদের শনাক্ত করা এবং কোন পরিস্থিতিতে গুম হয়েছিল তা নির্ধারণ করা এবং সে উদ্দেশ্যে গুমের শিকার ব্যক্তিদের পরিবারের সদস্যসহ যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা; জোর করে গুমের ঘটনাগুলোর বিবরণ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাখিল করা এবং এবিষয়ে সুপারিশ দেওয়া; গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধান পাওয়া গেলে তাদের আত্মীয়স্বজনকে অবহিত করা; গুম হওয়ার ঘটনা সম্পর্কে অন্য কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কর্তৃক পরিচালিত তদন্তের তথ্য সংগ্রহ করা।
এছাড়াও কমিশনের কাজের পরিধি সম্পর্কে আরও বলা হয়েছে, তদন্ত কমিশন ‘কমিশনস অব ইনকোয়ারি অ্যাক্ট ১৯৫৬’ অনুসারে তদন্তকাজ সম্পন্ন করে প্রজ্ঞাপন জারির তারিখ থেকে তিন মাসের মধ্যে সরকারের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ তদন্ত কমিশনকে সাচিবিক সহায়তাসহ সব ধরনের সহায়তা দেবে ও কমিশনের প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহ করবে। এছাড়া কমিশনকে সহায়তার উদ্দেশ্যে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োজিত যে কোনও ব্যক্তিকে দায়িত্ব দিতে পারবে। তদন্ত কমিশনের সভাপতি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারক এবং কমিশনের সদস্যরা হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের মর্যাদা এবং অন্যান্য সুবিধা ভোগ করবেন।