ঢাকা
২৯শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:০১
প্রকাশিত : জুন ২৮, ২০২৫
আপডেট: জুন ২৮, ২০২৫
প্রকাশিত : জুন ২৮, ২০২৫

ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ: নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক অর্জন কী?

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পর মঙ্গলবার জেরুসালেমের রাস্তাঘাট এবং কফি শপগুলো আবারও ব্যস্ত হয়ে ওঠে। সন্ধ্যায়, ইসরায়েলের ‘হোম ফ্রন্ট কমান্ড' সব ধরনের জনসাধারণের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।

একটি খোলা বাজারে মানুষ আবার কেনাকাটায় ফিরেছে। কেউ কেউ শুধু স্বস্তি অনুভব করছিলেন যে, ১২ দিনের যুদ্ধ, যা ইসরায়েলিদের বারবার আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল, তা শেষ হয়েছে।

"আমি কিছুটা স্বস্তি বোধ করছি যে, এখন আর যুদ্ধ হচ্ছে না। তবে এটা বিপজ্জনকও হতে পারে, কারণ, আমরা কখনোই জানি না কাকে বিশ্বাস করবো। একদিন যুদ্ধবিরতি, পরদিন আবার যুদ্ধ,” ডয়চে ভেলেকে বলেন লিবা ফারকিশ।

অনেকেই এখানে ইরানে হামলার ব্যাপারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন এবং প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুর প্রশংসা করেছেন।

আমি মনে করি আমরা সঠিক সময়ে আক্রমণ করেছি, ঠিক যেটা করা দরকার ছিল। নেতানিয়াহু সম্ভবত সেরাটাই করেছেন। তারা আমাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র ব্যবহার করতে একদম প্রস্তুত ছিল এবং সত্যি বলতে আমরা শেষ মুহূর্তে রক্ষা পেয়েছি, বলেন উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আদিনা বিয়ার।

দোকানদার আভ্রাহাম লেভি বলেন, নেতানিয়াহু যা করেছেন, সেটা শুধু ইসরায়েলের জন্য নয়, সমগ্র বিশ্বের জন্য। ইরান একটি চরমপন্থি ধর্মীয় শাসন যা ইসরায়েলকে ধ্বংস করতে চায়।

লেভি নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টির দীর্ঘদিনের সমর্থক।

ইসরায়েল ডেমোক্র্যাসি ইনস্টিটিউট আইডিআইয়ের পাবলিক অপিনিয়ন এবং পলিসি রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিক জরিপ অনুযায়ী, ৮২ শতাংশ ইহুদি ইসরায়েলি ইরানে ইসরায়েলের হামলা এবং এর সময় সমর্থন করেছেন।

নেতানিয়াহুর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি

মাত্র এক মাস আগেও নেতানিয়াহুর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ ধাক্কা খাচ্ছিলো। ইসরায়েলের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী, যাকে প্রায়ই ‘জাদুকর' বলা হয় রাজনৈতিক সংকট থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে, গাজা যুদ্ধ পরিচালনা এবং হামাসের সঙ্গে বন্দিমুক্তি চুক্তি করতে অস্বীকৃতি জানানোয় ঘরে-বাইরে সমালোচনার মুখে পড়েন।

তবে এখন তিনি যুক্তি দিতে পারেন, ইরানের বিরুদ্ধে হুমকি কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করেছেন। যদিও ইরান বারবার দাবি করে তার পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ এবং মার্কিন গোয়েন্দারা বলেছে, ইরান বর্তমানে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে না, কিন্তু ইসরায়েলি নেতারা বলেন ইরান একেবারে অস্ত্র তৈরির দ্বারপ্রান্তে ছিল।

এই হামলা নেতানিয়াহুর ‘শক্তিমান' ভাবমূর্তি আংশিকভাবে পুনরুদ্ধার করেছে, বিশেষ করে ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের হামাসের নেতৃত্বাধীন হামলায় নিরাপত্তা ব্যর্থতার পরে।

টাইমস অব ইসরায়েল-এর রাজনৈতিক প্রতিবেদক তাল শ্নাইডার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ইরান আক্রমণের ব্যাপারে এখনো অনেক তথ্য অজানা। তবে ৭ অক্টোবর থেকে যা কিছু ঘটেছে, তা মূলত ইরানিয়ানদের মাস্টারপ্ল্যান। তাই সবাই বুঝেছিল সামরিকভাবে কিছু না করলে চলবে না। কূটনৈতিক সমাধানে কেউই আস্থা রাখছিল না।

নেতানিয়াহুর হাতে কতটা রাজনৈতিক সুযোগ আছে?

যদিও জরিপ অনুযায়ী নেতানিয়াহুর লিকুদ পার্টি কিছু সমর্থন পেয়েছে সামরিক অভিযানের সফলতা থেকে তবে বাস্তবচিত্র আরো জটিল। বর্তমান জোট সরকার ৬১টি আসনের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হবে বলেই পূর্বাভাস রয়েছে।

তাল শ্নাইডার বলেন, তিনি নিজে কিছু আসন পেলেও, সেটা এসেছে তার মিত্র চরম ডানপন্থি বেন-গভিরের ইহুদি পাওয়ার পার্টির ক্ষতির বিনিময়ে। ফলে নতুন জোট গঠনে তার হাতে তেমন সুযোগ থাকছে না। মধ্যপন্থি ভোটারদের আকৃষ্ট করতেও ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।

গাজা যুদ্ধ নিয়ে চাপ

ইসরায়েলে আবার মনোযোগ ফিরেছে গাজার যুদ্ধের দিকে। গত বুধবার সকালে সাতজন ইসরায়েলি সেনা নিহত হয়েছেন বলে খবর এসেছে। তারা একটি সাঁজোয়া যানের ভেতরে ছিলেন। সেটি বিস্ফোরক দিয়ে উড়িয়ে দেওয়া হয়।

পত্রিকায় বর্ষীয়ান সাংবাদিক বেন কাসপিত লিখেছেন, কখনো কখনো সঠিক কাজটাই করতে হয়। ট্রাম্প যদি পারেন, আপনিও পারেন। এখনই গাজার এই অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধ থামান। আমাদের সেরা সন্তানরা মারা যাচ্ছে। কেন? আরও কিছু ‘সন্ত্রাসী অবকাঠামো' ধ্বংসের জন্য?

জরিপে দেখা গেছে, গাজায় হামাসের হাতে আটক থাকা ৫০ জন জীবিত বা মৃত বন্দিকে ফিরিয়ে আনার জন্য যুদ্ধবিরতি হওয়া দরকার বলে ইসরায়েলিদের বড় অংশ মনে করেন।

আইডিআইর গবেষক তামার হারম্যান ডয়চে ভেলেকে বলেন, নেতানিয়াহুর নিজের সমর্থকরাও মনে করেন যে বন্দিদের ফিরিয়ে আনা উচিত, এমনকি এর মানে যুদ্ধের বিরতি হলেও। সমর্থন বাড়াতে হলে তাকে এই বিষয়ে কিছু করতে হবে।

নেতানিয়াহু এখন কঠিন চাপে আছেন। একদিকে ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক সফলতা, অন্যদিকে গাজার যুদ্ধ এবং ভেতরের রাজনৈতিক সংকট। তার ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই প্রশ্নের ওপর—তিনি কি গাজায় যুদ্ধ শেষ করতে প্রস্তুত, নাকি রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে যুদ্ধ টেনে নিয়ে যাবেন?

সর্বশেষ
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram