মামলাজটের কারণে আটকে আছে সরকারি প্রাইমারি স্কুলের পদোন্নতি ও অর্ধলাখ শিক্ষক নিয়োগ। বর্তমানে দেশের ৩২ হাজার সরকারি প্রাইমারি স্কুলে প্রধান শিক্ষক নেই। ভারপ্রাপ্ত দিয়ে চলছে কার্যক্রম।
জানা গেছে, সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির মাধ্যমে এ পদগুলো পূরণ করা হবে। কিন্তু টাইম স্কেল সংক্রান্ত একটি মামলায় প্রধান শিক্ষকের এসব শূন্য পদে সহকারী প্রধান শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়া যাচ্ছে না। আবার শূন্য এসব পদে সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি না হওয়ায় সমসংখ্যক পদে সহকারী শিক্ষকও নিয়োগ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। বর্তমানে প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় সহকারী শিক্ষকদের পদ শূন্য রয়েছে ৮ হাজার ৪৩টি। এছাড়া সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ের জন্য ৫ হাজার ১৬৬ জন সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার কথা থাকলেও এখনো দেওয়া হয়নি। সব মিলিয়ে প্রায় অর্ধলাখ সহকারী শিক্ষক নিয়োগ আটকে আছে মামলাজটের কারণে। এতে পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে।
২০১৩ সালে জাতীয়করণ করা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৮ হাজার ৭২০ জন শিক্ষকের মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার অবসরে গেছেন। এর মধ্যে অনেকে অবসরভাতা তুলে নিয়েছেন। এই পরিস্থিতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় ২০২০ সালের ১২ আগস্ট এক আদেশে দুটি টাইম স্কেল বাতিল করে অতিরিক্ত অর্থ ফেরত নেওয়ার নির্দেশনা দেয়। সরকারের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে অবসরে যাওয়া শিক্ষকদের পক্ষে হাইকোর্টে দায়ের করা হয় রিট আবেদন। হাইকোর্ট রিটকারীদের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু হাইকোর্টের রিটের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করে, আপিল শেষ না হওয়ায় অবসরে যাওয়া শিক্ষকরা তাদের পাওনা উত্তোলন করতে পারছেন না। একই সঙ্গে আটকে গেছে প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি।
প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির নেতারা বলেন, হাইকোর্টর রায়ের পর সরকার আপিল না করলে শিক্ষকদের ভোগান্তি থাকত না। সরকার এই রিটে জিততে পারবে না জেনেও আপিল করেছে। ফলে অবসরে যাওয়া অনেক শিক্ষক মারা গেলেও তার পরিবার অবসরের অর্থ তুলতে পারছে না। অন্যদিকে, একই কারণে পদোন্নতি না দিতে পারায় সহকারী শিক্ষকের ৩২ হাজার পদ শূন্য হয়নি। ফলে এসব পদে নিয়োগও দেওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে প্রাথমিক শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মামলাজট নিরসন করে এই সমস্যার দ্রুত সমাধান করার জন্য বর্তমান সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শিক্ষক নেতারা বলেন, আদালতের আপিলের রায়ের ওপর নির্ভর করছে সব সিদ্ধান্ত।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান শিক্ষক পদে ৩২ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদোন্নতি আমরা দিতে পারছি না। মামলার কারণে পদোন্নতি আটকে আছে। প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি দিতে পারলে ৩২ হাজার সহকারী শিক্ষক পদ শূন্য হতো এবং আমরা তখন ঐ পদে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারতাম। এ ব্যাপারে অধিদপ্তর আন্তরিক বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রায় অর্ধলাখ সহকারী শিক্ষক নিয়োগে নতুন বিধিমালা তৈরি করেছে সরকার। এ বিধিমালায় নারী ও পোষ্য কোটা বাতিল করা হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে জনপ্রশাসন এবং আইন মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ বিভাগের মতামতের অপেক্ষায় রয়েছে অধিদপ্তর। নতুন বিধিমালা সংক্রান্ত মতামত পাওয়ার পর কোটা বাতিল সংক্রান্ত পরিপত্র জারি করা হবে। এ পরিপত্র জারি না হওয়া পর্যন্ত প্রাথমিকের শিক্ষক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি জারি করা হবে না। বর্তমানে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০১৯’ অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। এ নিয়োগ বিধিমালায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ৬০ শতাংশ নারী কোটা, ২০ শতাংশ পোষ্য কোটা এবং ২০ শতাংশ পুরুষ কোটা রয়েছে। প্রস্তাবিত নতুন বিধিমালায় এসব কোটা থাকবে না। তবে ২০ শতাংশ পদে বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতক প্রার্থীদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। যদিও প্রস্তাবিত নিয়োগ বিধিমালাটিও চূড়ান্ত হয়নি। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ চাকরির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরির সব গ্রেডে ৯৩ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। বাকি ৭ শতাংশ নিয়োগ হবে কোটার ভিত্তিতে। কোটার মধ্যে রয়েছে ৭ শতাংশ বীর মুক্তিযোদ্ধা, শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানের জন্য ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর জন্য ১ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের নাগরিকদের জন্য ১ শতাংশ কোটা।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ডা. বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেন, দেশের প্রায় ৩২ হাজার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের পদ শূন্য রয়েছে, যা প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থাকে মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে। তিনি বলেন, প্রাথমিকে শিক্ষক নিয়োগে আগের কোটা ব্যবস্থা থাকছে না। উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী কোটাব্যবস্থা চালু থাকবে। এছাড়া সহকারী শিক্ষকদের মধ্যে থেকে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ্য প্রার্থী পাওয়া সাপেক্ষে শতভাগ পদোন্নতির ব্যবস্থা করার প্রস্তাব করা হয়েছে নিয়োগবিধিতে।