

ছায়েদ আহামেদ, হাতিয়া (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দায়িত্বে থাকা নার্সদের অবহেলায় ৮ মাস বয়সী আরাবি নামের এক শিশুর মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।
মঙ্গলবার (০২ ডিসেম্বর) ভোর ৬টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে গতকাল বেলা ১১টার সময় অসুস্থ শিশুটিকে সরকারি এ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। মৃত শিশুটি উপজেলার চরইশ্বর ইউনিয়ন ৯নং ওয়ার্ড কাজির বাজার এলাকার মো. রুবেলের ছেলে।
মৃত শিশুর মা রোকসানা অভিযোগ করে বলেন, গতকাল ১১টার সময় বাচ্চাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে ডাক্তার ভর্তি দেন এবং অক্সিজেন দিতে বলেন। ১০ মিনিট দেওয়ার পর অক্সিজেন শেষ হয়ে যায়। নার্সদের জানালে তারা বলেন, অক্সিজেন এলে তারপর দেওয়া হবে। এরই মাঝে গোটা দিন শেষ, রাতেও চেষ্টা করে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরো বলেন, আমাদের আত্মচিৎকারে পাশের রোগীদের স্বজনরা সহযোগিতা করে প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানকার ডাক্তাররা সরকারি হাসপাতালের প্রেসক্রিপশন ছাড়া চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে আবার সরকারি হাসপাতালে প্রেসক্রিপশনের জন্য এলে নার্সরা দিতে অস্বীকৃতি জানান। অনেক বলাবলির পর প্রেসক্রিপশনের ছবি তুলতে দেন আমাদের সাহায্যকারীদের। আর ততক্ষণে শিশুটি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।
মৃত শিশুর পিতা মো.রুবেল আহাজারি করে বলেন, নার্সরা আমার বাচ্চাকে অক্সিজেন তো দেয়নি, কোনো সহযোগিতাও করেনি। বরং তাদেরকে ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করলে আমাদের উপর ক্ষেপে গিয়ে আচরণ খারাপ করেন। তাদের কারণে আমার বাচ্চাটা মারা গেছে, এ বিচার কাকে দেব, কার থেকে পাব..?
মিরাজ উদ্দিনসহ একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, গতরাত ২টার সময় শিশুর করুণ অবস্থা এবং মা-বাবার চিৎকারে আমরা এগিয়ে আসি। অক্সিজেন না পেয়ে নার্সদের ঘুম থেকে জাগানোর চেষ্টা করলে তারা ক্ষেপে গিয়ে আচরণ খারাপ করতে থাকে। এমনকি পরে প্রেসক্রিপশনের ছবি পর্যন্ত তুলতে দিচ্ছিলনা। তারা দুঃখ করে বলেন, গোটা রাত কষ্ট করেও আমরা শিশুটিকে বাঁচাতে পারলাম না। নার্সরা সবসময় এমন ঘটনা ঘটিয়ে থাকে।
এদিকে, জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক শামসুদ্দিন জানান, শিশুটি নিউমোনিয়াতে আক্রান্ত ছিল। অক্সিজেনের কি সমস্যা তা আমাকে জানানো হয়নি এবং রাতে কি সমস্যা হয়েছে তারও খবর পায়নি।
এ বিষয়ে হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.মানসী রাণী সরকারের সাথে সকালে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, শিশু কি মারা গেছে? আচ্ছা- শিশুর পরিবার যদি লিখিত অভিযোগ দেন, তবে খোঁজ নিয়ে দেখব, নার্সদের দায়িত্বে অবহেলা আছে কি না।
হাতিয়া থানা তদন্ত ওসি আনিসুর রহমান জানান, ভুক্তভোগী পরিবারের কেউ যদি অভিযোগ দেন, তবে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেব।
উল্লেখ্য, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাতিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকারি নার্স রয়েছে ২৬ জন, প্রজেক্ট ও মিডওয়াইফারি নার্সসহ আরও রয়েছেন ৭ জন। এবং ৪জন মেডিক্যাল অফিসারসহ মোট ১৪জন চিকিৎসক রয়েছেন হাসপাতালটিতে।

