বাগেরহাট প্রতিনিধি: জেলার চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবিতে বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনে ৪৮ঘন্টা সর্বাত্মক হরতাল, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ পালিত হয়েছে। বিএনপি জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির ডাকা এই হরতাল, সড়ক-মহাসড়ক অবরোধে মোংলা-খুলনা, মোংলা-ঢাকা, খুলনা-বরিশাল-পটুয়াখালী, খুলনা-কাটাখালী-ঢাকা, বাগেরহাট-মাওয়া-ঢাকা ও শরণখোলা-সাইনবোর্ড-ঢাকা এই ৬টি মহাসড়কের উপর দিয়ে চলাচলকারী ৪৮টি দূরপাল্লাসহ আন্তঃজেলা রুটে দ্বিতীয় দিনেও সব ধরনের যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। এসব মহাসড়কের অন্তত ৩০টি পয়েন্টে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে পিকেটাররা। এর ফলে মোংলা সমুদ্র বন্দরের আমদানি-রপ্তানি পণ্য সড়ক পথে পরিবহন করা যায়নি। বাগেরহাট বিসিক, মোংলা ইপিজেড, বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ জেলার সব শিল্পাঞ্চলের কল-কারখানায় কোন কাজ হয়নি।
দ্বিতীয় দিনেও মোংলা বন্দরসহ পুরো বাগেরহাট জেলা সারাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। হরতালে জেলা শহরসহ উপজেলাগুলোতে দোকানপাট, ব্যবসা, ব্যাংক, বীমা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ বন্ধ ছিল। হরতালকারীরা জেলা, উপজেলার নির্বাচন অফিস ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেয়ায় কর্মকর্তা কর্মচারীরা অফিসে ঢুকতে পারেনি। মোরেলগঞ্জে পানগুছি ও মোংলা নদীতে সড়ক বিভাগের ফেরী চলাচলও করেনি। এদিকে ৪৮ঘন্টা হরতালের শেষ দিনে বৃহস্পতিবার বিকালে বিএনপি জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটি একই দাবিতে নতুন করে জেলাব্যাপী ৩দিনের হরতালসহ ৬ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির আহবায়ক জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এম এ সালাম জানান, ৬ দিনব্যাপী নতুন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে শুক্র ও শনিবার দুই দিন জেলার সব মসজিদে গণসংযোগ, রবিবার জেলা-উপজেলার সব সরকারি অফিস আদালত ঘেরাও, সোম, মঙ্গল ও বুধবার তিনদিন পূর্ণদিবস হরতাল। এরমধ্যে নির্বাচন কমিশন বাগেরহাট জেলার চারটি সংসদীয় আসন বহালের দাবি মেনে না নিলে আরো কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা করা হবে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানান বিএনপি জামায়াতসহ সর্বদলীয় সম্মিলিত কমিটির নেতারা।
আন্দোলনকারীরা ‘শান্তিপূর্ণ’ পরিবেশে আন্দোলন করছে জানিয়ে বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক আহমেদ কামরুল বলেন, “কোথাও বিশৃঙ্খলার খবর পাইনি। তারা আমাদের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে, আমরা তা সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।”
তিনি বলেন, “দাবি মেনে নেওয়ার এই সিদ্ধান্ত নির্বাচন কমিশনের। স্থানীয়ভাবে এই প্রশাসনের কি করার আছে।”
বাগেরহাটের পুলিশ সুপার আসাদুজ্জামান বলেন, “পুলিশ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোনো বড় ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।”
প্রসঙ্গত, গত ৩০ জুলাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নির্বাচন কমিশনের বিশেষ কারিগরি কমিটি খসড়া প্রস্তাবে বাগেরহাট জেলার চারটি আসনের মধ্যে একটি কমিয়ে তিনটি রাখার প্রস্তাব দেয়। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে জেলার রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠনগুলো নির্বাচন কমিশনের শুনানিতেও অংশ প্রহণ করেন। কিন্তু তাদের দাবিকে উপেক্ষা করে গত ৪ সেপ্টেম্বর নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত গেজেট বাগেরহাটে একটি আসন কমিয়ে তিনটি আসন রাখাসহ নিজেদের খসড়া প্রস্তাবে সম্পূর্ণ পাল্টে দিয়ে আসনের সীমানা নির্ধারণ করে। ইসির এই সিদ্ধান্তে আবারো ফুঁসে ওঠে বাগেরহাটের রাজনৈতিক দলসহ আমজনতা।