ঢাকা
৯ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৪:৫৪
প্রকাশিত : আগস্ট ৩, ২০২৫
আপডেট: আগস্ট ৩, ২০২৫
প্রকাশিত : আগস্ট ৩, ২০২৫

পাহাড়ে বাঁশ কোঁড়ল: পুষ্টিকর বনজ খাবার হয়ে উঠছে জীবিকার অংশ

মো. আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও বনসম্পদে সমৃদ্ধ খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা অঞ্চলের পাহাড়ি বনভূমিতে এখন মৌসুমি বনজ খাবার হিসেবে ব্যাপকভাবে সংগ্রহ করা হচ্ছে বাঁশ কোঁড়ল। বহু পুরনো ঐতিহ্যবাহী এই খাদ্য উপাদান এখন পাহাড় পেরিয়ে সমতলের বাজারেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। শুধুমাত্র স্বাদের জন্য নয়, বরং পুষ্টিগুণ এবং আর্থিক সম্ভাবনার কারণেই এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

পুষ্টিগুণে ভরপুর বাঁশ কোঁড়ল
বাঁশ কোঁড়ল বা বাঁশের কচি অঙ্কুর একটি ভোজ্য বনজ খাদ্য। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, যা হজমে সহায়ক। পাশাপাশি এতে থাকে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন বি-৬ এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান। পুষ্টিবিদদের মতে, এটি উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে এবং এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধেও সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে।

পর্যটকদের পাতে বাঁশ কোঁড়ল
বর্তমানে পাহাড়ে সংগৃহীত বাঁশ কোঁড়ল শুধুমাত্র স্থানীয় হাটবাজারেই নয়, খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন হোটেলে পর্যটকদের কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় খাবারে পরিণত হয়েছে। অনেক পর্যটক বলেন, বাঁশ কোঁড়ল না খেলে যেন খাগড়াছড়ি ভ্রমণই পূর্ণ হয় না। শুধু তাই নয়, বড় শহরের অর্গানিক ফুড শপ ও সুপার শপেও সরবরাহ করা হচ্ছে। চট্টগ্রামের অভিজাত হোটেল থেকে শুরু করে ঢাকার গুলশান, বনানী, ধানমন্ডি এলাকায় প্যাকেটজাত বাঁশ কোঁড়ল বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২০০-২৫০ টাকা দরে। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছেও এটি একটি নতুন আকর্ষণ।

অর্থনীতিতে সম্ভাবনার দ্বার খুলছে
বন বিভাগের বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, বাঁশ কোঁড়ল নিয়ে গবেষণা এবং নতুন প্রজাতির বাঁশ চাষে উৎসাহ দেওয়া হলে এটি পরিবেশবান্ধব কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। এছাড়া বাঁশভিত্তিক প্রক্রিয়াজাত খাদ্য শিল্প গড়ে তোলা গেলে পাহাড়ের অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনার দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

নারীদের হাতে জীবিকার চাবিকাঠি
মাটিরাঙ্গার বিভিন্ন স্থানের দুর্গম অঞ্চল থেকে পাহাড়ি নারীরা বাঁশ কোঁড়ল সংগ্রহ করে মাটিরাঙ্গা বাজারে বিক্রি করছেন। তারা পাহাড়ি শাক সবজির পাশাপাশি প্রত্যেকে বিক্রির এক আঁটি হলেও বাঁশ কোঁড়ল আনবেন। এতে তাদের সংসারে আসছে অতিরিক্ত আয়। মৌসুমে একজন সংগ্রাহক প্রতিদিন গড়ে ৫-৭ কেজি কোঁড়ল সংগ্রহ করতে পারেন, যা বিক্রি হয় ৫০-৬০ টাকা কেজি দরে। কখনো কখনো পাইকাররা বাড়ি থেকে কিনে নিয়ে যান।

মাটিরাঙ্গা সাপ্তাহিক হাটে সারি সারি বাঁশ কোঁড়লের দৃশ্য দেখা যায়। পাহাড়ি নারীরা আঁটি বেঁধে বা খোলস ছাড়িয়ে সাজিয়ে বিক্রি করেন। ক্রেতারা সরাসরি কিনে নিয়ে রান্না করে খান। এখন অনেকে কোঁড়ল শুকিয়ে বা বয়ামে সংরক্ষণ করে সারা বছর বিক্রির পরিকল্পনাও করছেন। এতে মৌসুমি এই পণ্য টেকসই আয়ের উৎসে রূপ নিতে পারে।

রসুলপুরের শ্রাবনি চাকমা বলেন, "বাঁশ কোঁড়ল তুলতে বেশি খরচ লাগে না, কিন্তু বিক্রি করে যা পাই তা দিয়ে বাজার সদাই হয়। পরিবারের জন্যও রান্না করে খাই।"

মাটিরাঙ্গা ১০ নং এলাকায় কুহেলিকা বলেন, বাঁশ কোঁড়ল সংগ্রহ করা অনেক কষ্ট, অনেক সময় পা কেটে যায়, আমি গত দুই দিন ধরে মশার কামড় খেয়ে বাঁশ কোঁড়ল সংগ্রহ করেছি ৫ কেজির মতো হবে, এগুলো বিক্রি করে বাজার খরচ করবো।

মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক আব্দুল হামিদ বলেন, "বাঁশগাছ মূলত ঝোপঝাড় ও পাহাড়ি ঢালে জন্মায়। কোঁড়ল সংগ্রহের সময় নির্দিষ্ট উচ্চতা পর্যন্ত কেটে নিতে হয় যাতে গাছটি আবার অঙ্কুর গজাতে পারে। সঠিকভাবে সংগ্রহ করলে বাঁশের বন ধ্বংস না করেই দীর্ঘদিন ধরে এ সম্পদ ব্যবহার করা সম্ভব।"

মাটিরাঙ্গা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দেবাশীষ চাকমা বলেন, "বাঁশ কোঁড়ল একটি সম্ভাবনাময় ফসল। সরকারিভাবে প্রশিক্ষণ, প্যাকেজিং ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে এটি রপ্তানিযোগ্য পণ্যে রূপ নিতে পারে।"

মাটিরাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক ডা. মিল্টন ত্রিপুরা বলেন, "বাঁশ কোঁড়ল একটি সাশ্রয়ী ও পুষ্টিকর খাদ্য। ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বা সুস্থ থাকতে আগ্রহীদের জন্য এটি আদর্শ খাদ্য উপাদান।"

মাটিরাঙ্গা উপজেলা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান লস্কর বলেন, “বাঁশ কোঁড়ল সংগ্রহে কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। একেবারে গোড়া থেকে কাটা উচিত নয়। স্থানীয় জনগণকে আমরা সচেতন করছি যাতে তারা বনজ সম্পদ সংরক্ষণ করে ব্যবহার করেন।”

তিনি আরও বলেন, “বাঁশ কোঁড়ল এখন আর শুধুই মৌসুমি রান্নার উপকরণ নয়—এটি হয়ে উঠছে পুষ্টি, পরিবেশ এবং অর্থনীতির মিলনস্থল। প্রয়োজন শুধু সমন্বিত উদ্যোগ ও নীতিগত সহায়তা। সঠিক পরিকল্পনা, প্রযুক্তি এবং বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাঁশ কোঁড়ল হতে পারে পাহাড়ি মানুষের টেকসই উন্নয়নের প্রতীক।”

সর্বশেষ
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online)
news@bd-sangbad.com, ads@bd-sangbad.com
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।  অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram