তিতাস (কুমিল্লা) প্রতিনিধি: নদী-খাল কিছু নেই, জনগণের চাহিদা নেই, শুধুমাত্র সরকারি অর্থ লুটপাটের জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে পৌনে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি পাকা সেতু। এলাকার সাধারণ মানুষ এখানে নির্মিতব্য সেতুর কোনো প্রয়োজনীয়তা দেখছেন না। কুমিল্লার তিতাস উপজেলার বাতাকান্দি-মাছিমপুর সড়কের দক্ষিণ আকালিয়া নামক স্থানে নির্মিত হচ্ছে অপ্রয়োজনীয় এই পাকা সেতু। ২৮ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৯ দশমিক ৮ মিটার প্রস্থের সেতুটির প্রাক্কলিত নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩,৬০,০০,০০০/-(তিন কোটি ষাট লাখ টাকা)। সেতু নির্মাণ প্রকল্পের কাজটি পেয়েছেন ঠিকাদার আর আর কনস্ট্রাকশন।
এলজিইডির তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২৩ সালের ২৩ মার্চ কাজটি শুরু করে ২৪ সালের ২২ মার্চ এই সেতু নির্মাণ সম্পন্ন করার কথা। কিন্তু সঠিক সময়ে তা সম্পন্ন হয়নি। বর্তমানে সেতু নির্মাণ কাজ সম্পূর্ণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন জানান, স্থানীয় ঠিকাদার আর আর কনস্ট্রাকশন ও সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজসে শুধুমাত্র অর্থ লুটপাটের জন্য সেতু নির্মাণের নামে এমনসব আজগুবি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এখানে ব্রিজের পরিবর্তে আগে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। নতুবা কৃষক ও শ্রমজীবী মানুষ চরম ক্ষতির মুখে পড়বে। এই অপ্রয়োজনীয় ও জনগুরুত্বহীন সেতু প্রকল্প গ্রহণ এবং বাস্তবায়নে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে শাস্তিযোগ্য আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এলাকাবাসী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ দাবি করেছেন।
বাতাকান্দি সরকার সাহেব আলী আবুল হোসেন মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক লিয়াকত আলী সরকার বলেন, বাতাকান্দি-মাছিমপুর সড়কের দক্ষিণ আকালিয়ায় পাকা সেতুর কোন প্রয়োজন নেই। এই সেতু জনগণের কোনো কাজে আসবে না। এই সড়কটির প্রস্থ বাড়ানো প্রয়োজন। এদিকে কোনো দৃষ্টি নেই।
সাতানী ইউপি চেয়ারম্যান মো. সামসুল হক বলেন, এখানে ব্রিজ করার জন্য যখন উদ্যোগ নেয়, তখন আমি মাসিক সভায় বলেছি, এখানে ব্রিজ করার প্রয়োজন নেই। কারণ এখান দিয়ে পানি নিষ্কাশনের কোনো ব্যবস্থা নেই। জনস্বার্থের অপ্রয়োজনে এতো টাকা ব্যয় করা অযৌক্তিক।
স্থানীয় বলরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো.নুর নবী বলেন, যখন ব্রিজ নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়, তখন আমি অফিসারদের বলেছিলাম, এখানে এতো টাকা খরচ করে ব্রিজ না করে, ছোট একটি কালভার্ট করে দিতে। কিন্তু তারা এটা শুনে নাই।
সেতু নির্মাণ কাজ বিলম্বের কারণ হিসাবে ঠিকাদার মোফাজ্জল হোসেন বলেন, শ্রমিক সংকটের কারনে কাজ কিছু দিন বন্ধ ছিল, আবারো কাজ শুরু করেছি।
তিতাস উপজেলা প্রকৌশলী মো: শাহিদুল ইসলাম বলেন, এই সড়কে আগে একটি ছোট জনাজীর্ণ সেতু ছিল। সেতুটি পুনর্নির্মাণ করার জন্য তৎকালিন এমপি সেলিমা আহমাদ মেরীর চাহিদা অনুযায়ী এখানে নতুন ব্রিজ করার প্রাক্কলন নির্মাণ ব্যয় নির্ধারণ করে হেড অফিসে পাঠাই এবং প্রকল্পটি অনুমোদন দিয়ে বরাদ্দ দেয়া হয়।