মো. আবুল হাসেম, মাটিরাঙ্গা (খাগড়াছড়ি) প্রতিনিধি: পাহাড়ের মাটিতে কৃষির অপার সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। পাহাড় যেন এ অঞ্চলের লোকেদের আশির্বাদ। এসব মাটিতে যা কিছু ফলায় তারই বাম্পার ফলন হয়। বলছিলাম পাহাড়ের মাটিতে উৎপাদিত অপার সম্ভাবনাময় লটকন ফলের কথা। একটা সময়ে পাহাড়ের ঢালু জমিতে জন্ম নেয়া লটকন ফল অবহেলায় নষ্ট হয়ে গাছের নিচে পড়ে থাকতো। কালের বিবর্তনে পাহাড়ে দিন দিন ব্যাপকহারে চাহিদা বাড়ছে টক-মিষ্টি এ ফলটির। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে স্থানীয়দের প্রয়োজন মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে লটকনের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে।
ব্যঙ্গমারা, সাপমারা, মোহাম্মদপুর, আটবাড়ি, বাইল্যাছড়ি সহ মাটিরাঙ্গায় বিভিন্ন আনাচে কানাচে এ ফলটির গাছ রয়েছে। স্থানীয় বাঙালিদের লটকন ফলটি চাকমা ভাষায় ‘পচিমগুল’, মারমা ভাষায় ‘ক্যানাইজুসি’ ও ত্রিপুরা ভাষায় ‘খুচমাই’ নামে পরিচিত। জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে পাকতে শুরু করে লটকন। এ সময়ে বাজারেও আসতে শুরু করে উচ্চ ফলনশীল কৃষিপণ্যটি।
মাটিরাঙ্গায় উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ৭ হেক্টর জমিতে লটকন আবাদ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৮মেট্রিকটন। ২০২৩-২৪অর্থ বছরে ৯ হেক্টর জমিতে লটকন আবাদ করা হয়। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয় ৩১মেট্রিকটন।
উচ্চ ফলনশীল লটকন গাছের গোড়া থেকে শুরু করে প্রতিটি থোকায় থোকায় ঝুলতে দেখা যায়। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে মন চায়। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ টক-মিষ্টি লটকন ছোট-বড় সবার কাছে বেশ জনপ্রিয়। মাটিরাঙ্গায় আম-লিচুর বাণিজ্যিক চাষাবাদ হলেও পিছিয়ে আছে জনপ্রিয় এ ফলটি।
সম্প্রতি মাটিরাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে স্বপ্ন দেখছেন অনেকেই। কম পরিশ্রম আর কম পুঁজিতে বেশি লাভের সুযোগ থাকায় লটকন চাষে আগ্রহী হচ্ছেন তারা। বাজারে প্রতি কেজি লটকন ১০০-১২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
মাটিরাঙ্গার নবীনগরে আলম মিয়ার পাহাড়ের ঢালুতে প্রায় ৭০টি লটকন গাছ আছে। প্রতিটি গাছে ঝুলছে সোনালি, হলুদ রঙ্গের লটকনের থোকা। লটকন বিক্রি করে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে শেষে সঞ্চয় করতে পারবেন বলে তিনি জানান।
ব্যাঙমারা ও সাপমারা থেকে মাটিরাঙ্গা বাজারে লটকন বিক্রি করতে আসা কুহেলী ও ঝর্ণা ত্রিপুরা জানান, তাদের নিজেদের লটকন গাছ আছে এবার লটকন বিক্রি করে লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তারা।
লটকন ক্রয় করতে আসা আব্দুর রহিম জানান, আমার মেয়ে লটকন খুবই পছন্দ করে, দুই কেজি কিনছি। লটকনগুলো বেশ মিষ্টি, ভাবছি কয়েক কেজি বোনের বাড়িতে পাঠাবো।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারি উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা মো: আমির হোসেন বলেন, বেশি পরিমাণে গাছপালা ও ছায়া থাকায় পাহাড়ি এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কম পুঁজি ও পরিশ্রমে বেশি লাভবান হওয়ায় কৃষকরা বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী জানান, পার্বত্য এলাকার মাটি লটকন চাষের জন্য বেশ উপযোগী। বাজারের এর চাহিদাও বেশি। উচ্চ ফলনশীল এই ফসল উৎপাদনে কৃষকদের আরও আগ্রহী করা প্রয়োজন।