ঢাকা
১৪ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ১২:৩৭
প্রকাশিত : অক্টোবর ১২, ২০২৫
আপডেট: অক্টোবর ১২, ২০২৫
প্রকাশিত : অক্টোবর ১২, ২০২৫

কাসাভা চাষে বাড়ছে পাহাড় ধসের ঝুঁকি, ধ্বংস হচ্ছে বন ও বন্যপ্রাণী

নিজস্ব প্রতিবেদক: পার্বত্য চট্টগ্রামের খাগড়াছড়িতে কাসাভা (শিমুল আলু) চাষ ভয়াবহ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বৈজ্ঞানিক নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে পাহাড় কেটে, গাছ উপড়ে সমতল জমি তৈরি করে চলছে এই চাষাবাদ। এর ফলস্বরূপ পাহাড়ের মাটি ক্ষয়ে ভূমিধসের ঝুঁকি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। বিশেষজ্ঞরা স্পষ্ট করে সতর্ক করেছেন—এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই পাহাড়ের মাটি, বন এবং প্রাকৃতিক বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস হয়ে যাবে।

বাংলাদেশে বিগত ১০–১৫ বছর ধরে সীমিত আকারে কাসাভার চাষ হলেও গত কয়েক বছরে তা বাণিজ্যিকভাবে ভয়াবহ মাত্রায় ছড়িয়ে পড়েছে। এই আগ্রাসী বাণিজ্যিক চাষ বৃদ্ধির মূল কারণ হলো শিল্পখাতে স্টার্চ, টেক্সটাইল ও ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোর বিপুল চাহিদা মেটানো। যদিও স্থানীয় উৎপাদন এখনও দেশের মোট চাহিদার মাত্র দুই শতাংশ পূরণ করে। তবুও এই অঞ্চলের পরিবেশগত ঝুঁকি এবং ভূমিধসের সম্ভাবনা উপেক্ষা করে মুনাফার লোভে নির্বিচারে বন ধ্বংস করে কাসাভা চাষের আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে।

সরকারি প্রতিষ্ঠান সয়েল রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট (এসআরডিআই) নিশ্চিত করেছে যে পাহাড়ের ঢাল কেটে চাষের অনুমতি কৃষকদের নেই, যা ভূমিধসের প্রধান কারণ। এই ধরনের চাষাবাদের ফলে পাহাড়ের মূল্যবান ‘টপ সয়েল’ ক্ষয়ে গিয়ে সেই মাটি ভরাট করে ফেলছে পাহাড়ের ঝিরি ও নালা; কমে যাচ্ছে পাহাড়ে পানির সংস্থান। তবে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী গোষ্ঠীর আশ্রয়ে এসব আইন প্রকাশ্যে ভাঙা হচ্ছে।

বন উজাড় করে কাসাভার একফসলি চাষ বাড়লেও এর বিরোধিতা করার সাহস পাচ্ছে না কেউ। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, ২০২৩ সালে খাগড়াছড়ি জেলায় কাসাভা চাষ হয়েছিল ৬১৯ হেক্টর জমিতে, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১১ হেক্টরে, এবং উৎপাদন হয়েছে ২৩ হাজার ৫৫১ মেট্রিক টন। এই পরিসংখ্যান স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে কাসাভার চাষ অপ্রতিরোধ্যভাবে ছড়িয়ে পড়ছে।

পিটাছড়া বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ উদ্যোগের প্রতিষ্ঠাতা মাহফুজ রাসেল জানান, গত কয়েক বছরে খাগড়াছড়ি জেলায় ৭ থেকে ৮ হাজার একর প্রাকৃতিক বনাঞ্চল ধ্বংস করে কাসাভা চাষ করা হয়েছে। এর কারণে বর্ষায় পাহাড়ের মাটি ধসে পাহাড়ি ঝিরি ও নদীগুলো ভরাট হচ্ছে। গাছ কেটে ফেলায় শুকনো মৌসুমে মারাত্মক পানির সংকটও তৈরি হচ্ছে। বন্যপ্রাণীর খাবার ও বাসস্থান ধ্বংস হওয়ায় লজ্জাবতী বানর, চশমাপরা হনুমান, মেছো বিড়াল, বনরুইসহ বহু বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে এবং খাবারের অভাবে লোকালয়ে এসে শিকারের মুখোমুখি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বর্তমান পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে খাগড়াছড়ির প্রাকৃতিক বন ও বন্যপ্রাণী পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারে।

পরিবেশবিদরা বলছেন, যে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসন ও পার্বত্য চট্টগ্রাম মন্ত্রণালয়ের অবিলম্বে কঠোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন। দ্রুত এই আগ্রাসন নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে, কাসাভা চাষ পাহাড়ের পরিবেশকে স্থায়ীভাবে ধ্বংস করে দেবে।

সর্বশেষ
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online)
news@bd-sangbad.com, ads@bd-sangbad.com
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।  অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram