চলন্ত ট্রেনে অপরাধীদের দাপট বাড়ছে। আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। প্রচণ্ড ভিড়ে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকারীদের ছিনতাইকারীরা ধাক্কা মেরে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যার ঘটনাও অহরহ ঘটছে। ইদানীং ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-রাজশাহী রুটের ট্রেনে ছিনতাইকারীর তত্পরতা বেড়ে গেছে। বিশেষ করে উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে রাতের যাত্রীবাহী ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগ ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা।
প্রায় প্রতিদিনই একাধিক ট্রেনযাত্রী ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে। অতিসম্প্রতি টঙ্গী ও বিমানবন্দর স্টেশনে চলন্ত ট্রেনে ছিনতাইয়ের শিকার হওয়া একাধিক যাত্রী জানান, কয়েক জন যুবক চলন্ত ট্রেনে উঠে যাত্রীদের ভয় দেখিয়ে তাদের মোবাইল ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেয়। প্রতিরোধের চেষ্টা করলে এক যাত্রীকে মারধরও করা হয়। ভুক্তভোগী যাত্রী এবং রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
ছিনতাইয়ের ঘটনা : সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছে, সারা দেশে চলাচলকারী আন্তঃনগর ও মেইল ট্রেনগুলোতে ক্রমাগত বেড়ে চলেছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। কখনো ছদ্মবেশে যাত্রী সেজে, আবার কখনো দল বেঁধে হঠাত্ চড়াও হয়ে যাত্রীদের ওপর হামলা চালানো হচ্ছে। চেতনানাশক স্প্রে বা ইনজেকশন ব্যবহার করে অজ্ঞান করে মালামাল লুট করে নেওয়ার ঘটনাও বেড়েছে আশঙ্কাজনক হারে। ছিনতাইকারীরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে নির্দিষ্ট কামরাগুলো টার্গেট করে অভিযান চালায়। দিনদিন ঐ ছিনতাইকারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
ছিনতাইকারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তি : চলন্ত ট্রেনের ছাদে ছিনতাইকারীর সঙ্গে ধস্তাধস্তির সময় গত ১১ সেপ্টেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে রেজাউল করিম নামে এক যাত্রীকে ফেলে দেওয়া হয়। পরদিন মুকুন্দপুর রেললাইনের পাশ থেকে ঐ ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে আখাউড়া রেলওয়ে পুলিশ। তাছাড়া গত ১৬ সেপ্টেম্বর জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদ থেকে মো. আমিনুর ইসলাম নামে এক যুবককে ফেলে দেওয়া হয়। পরে স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। সম্প্রতি রাজধানীর ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় চলন্ত ট্রেনের ছাদ থেকে আফতাব আহমেদ নামের এক তরুণকে ছিনতাইকারীরা ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। যদিও রেলওয়ে পুলিশের দাবি, ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে চক্রটি অত্যন্ত সুসংগঠিত এবং বেপরোয়া। তারা চলন্ত ট্রেনে হঠাত্ উঠে অপরাধ সংঘটন করে দ্রুতই পালিয়ে যাওয়ায় শনাক্ত করা কঠিন হয়ে পড়ে। পাশাপাশি যাত্রীরা সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ না দেওয়ায় ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।
প্রতিরোধে রেলওয়ে পুলিশ তত্পর রয়েছে : ঢাকা জেলার রেলওয়ে পুলিশ সুপার (এসপি) আনোয়ার হোসেন জানান, ট্রেনকেন্দ্রিক ছিনতাই প্রতিরোধে রেলওয়ে পুলিশ তত্পর রয়েছে। নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা হয়। স্টেশনের পাশাপাশি ট্রেনেও পোশাকধারী পুলিশ পাহারা দেয়। সাদা পোশাকেও রেলওয়ে পুলিশ থাকে। অতিসম্প্রতি দুজন ছিনতাইকারী ধরা পড়েছে।
ছাদে ছিনতাই মামলার আসামি : ট্রেনের ছাদে থাকা যাত্রীদের দেশীয় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা রেলওয়ে ডিবি পুলিশ। ছিনতাইকারী আলাউদ্দিনের (১৯) বিরুদ্ধে হত্যাসহ একাধিক মামলা রয়েছে । বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা রেলওয়ে পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন। সোমবার গভীর রাতে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
আনোয়ার হোসেন বলেন, গত (৪ অক্টোবর) রাতে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদে থাকা যাত্রীদের চাকুর মুখে জিম্মি করে মোবাইল ও মানিব্যাগ কেড়ে নেওয়ার ঘটনায় ছিনতাইকারী আলাউদ্দিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার স্বীকারোক্তি ও তার দেওয়া তথ্যে ছিনতাই কাজে ব্যবহূত তার চাকুটি খিলগাঁও রেললাইনের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতার আসামির বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এর আগে একই ঘটনায় তাত্ক্ষণিকভাবে আরেক ছিনতাইকারী নজরুলকে একটি লুণ্ঠিত মোবাইলসহ হাতেনাতে গ্রেফতার করা হয়।