ঢাকা
২৪শে জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
দুপুর ১২:৩০
প্রকাশিত : জুন ২৪, ২০২৫
আপডেট: জুন ২৪, ২০২৫
প্রকাশিত : জুন ২৪, ২০২৫

ডেঙ্গু পরিস্থিতি আরও নাজুক হওয়ার শঙ্কা

এ বছর রাজধানীসহ সারা দেশে ডেঙ্গু রোগী বাড়বে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। দেশে ঘন ঘন বৃষ্টি হচ্ছে, এই পানি জমা হচ্ছে ছোট-বড় বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট বা পাত্রে। এসব জমানো পানি অপসারণ করা হচ্ছে না। ফলে সেখানে মশার প্রজনন হবে; পাশাপাশি মশা নিয়ন্ত্রণে ঘাটতি রয়েই গেছে এবং বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর প্রভাবে এডিস মশা বাড়ছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।

রাজধানীতে যদিও মশা নিধনের কিছু কার্যক্রম চোখে পড়ে। কিন্তু ঢাকার বাইরে সে ধরনের কোনো কার্যক্রম নেই। ফলে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্তের হার অনেক বেশি। অন্যদিকে ঢাকার বাইরে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর পর্যাপ্ত চিকিত্সাব্যবস্থা নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় চিকিৎসার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, তা না হলে সব রোগী রাজধানীতে এসে ভিড় করবে, তাতে জটিলতা বাড়বে। সারা দেশে তরুণদের নিয়ে পরিচ্ছন্নতা কর্মসূচি পরিচালনা করতে পারলে ভালো হবে।

সম্প্রতি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণাপ্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ এবং মে মাসে করা এক জরিপের তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছে, ঢাকার বাইরেও এডিস মশার বিস্তার বাড়ছে। ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, বরিশাল সিটি করপোরেশন, রাজশাহী সিটি করপোরেশন এবং কুষ্টিয়া, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, ঝিনাইদহ এবং মাগুরা পৌরসভা এলাকায় এই জরিপ করা হয়।

আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেছেন, জরিপ করা আটটি জেলার মধ্যে ঝিনাইদহ ও মাগুরা জেলায় এডিস মশার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি। চলতি মৌসুমে ঢাকার বাইরে বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলায় ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী বেশি পাওয়া যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরিন বলেন, বরগুনা এলাকায় নোনা পানির কারণে খাওয়ার পানির সমস্যা আছে। সে কারণে স্থানীয় বাসিন্দারা বড় বড় মটকায় পানি সংরক্ষণ করে, সেখানে মশা জন্মাচ্ছে এবং ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। তারা পানিটা ঢাকে না, অনেক সময় কাপড় দিয়ে ঢাকলেও কাপড়ের ওপর পানি উঠে যায়। সেখানে মশা জন্মাতে পারে, তাছাড়া সেখানে প্লাস্টিক কনটেইনারও আছে অনেক। এগুলো কারণ হতে পারে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার বলেন, শুধু ঢাকা নয়; দেশের প্রতিটি জেলাতেই ডেঙ্গু বাড়বে এবার। তবে সবচেয়ে বেশি বাড়বে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরগুনা, বরিশাল এই চার জেলায়। তিনি বলেন, কোনো নির্দিষ্ট একটি কারণে ডেঙ্গু বাড়ছে না; ডেঙ্গু বাড়ার পেছনে থাকে একাধিক কারণ। কারণগুলোর মধ্যে—এই যে বৃষ্টি হচ্ছে, এই পানি জমা হচ্ছে বিভিন্ন আর্টিফিশিয়াল কনটেইনারে, ছোট-বড় বিভিন্ন খাবারের প্যাকেট বা পাত্রে পানিটা জমা হচ্ছে। এখন এই পাত্রগুলো যদি সঠিকভাবে ম্যানেজম্যান্ট না করা হয়, তাহলে সেখানে মশা জন্মাবে—এটা একটা কারণ। আরেকটা কারণ হলো, মশা নিয়ন্ত্রণ যে প্রোগ্রামটা আছে, এই প্রোগ্রামটাতে যদি ঘাটতি হয় তাহলেও ডেঙ্গু বাড়বে। আরেকটা কারণ হলো, বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর প্রভাব আছে— এই তিন কারণ মিলেই ডেঙ্গু মশার বিস্তার বাড়ছে।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ড. মুস্তাক হোসেন বলেন, ‘জরিপে দেখা গেছে, ডেঙ্গু মশার অবস্থা ভালো না। ঢাকার বাইরের অবস্থা বেশি খারাপ। আর ঢাকার বাইরের রোগী তো সব ঢাকায় চলে আসবে। কারণ আমাদের দেশের চিকিত্সাব্যবস্থা বিকেন্দ্রীকরণ না। আমাদের ডেঙ্গুতে মৃত্যু কমাতে হলে চিকিত্সাব্যবস্থার বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগী চিহ্নিত করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। সেকেন্ডারি পর্যায়ের হাসপাতাল যেমন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বা জেলা হাসপাতালে ব্যবস্থা রাখতে হবে। যারা ক্রিটিক্যাল রোগী; যেমন—গর্ভবতী নারী বয়স্ক ব্যক্তি, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপে ভুগছে—এমন রোগীদের সেকেন্ডারি হাসপাতালে অবজার্বেশনে রাখতে হবে। তাহলে রোগীর সংখ্যা কমে যাবে। কাজেই এক্ষেত্রে মৃত্যুর সংখ্যা কমে যাবে।’

গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু পরিস্তিতি

সারা দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৩৯২ জন। গতকাল ২৩ জুন সোমবার, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোলরুম থেকে পাঠানো ডেঙ্গুবিষয়ক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

এতে বলা হয়, গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর মধ্যে বরিশাল বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ১২৬ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৮০ জন, ঢাকা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৩১ জন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২২ জন, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৬২ জন, খুলনা বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ২৫ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন, রাজশাহী বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) ৪১ জন, রংপুর বিভাগে (সিটি করপোরেশনের বাইরে) একজন রয়েছেন।

২৪ ঘণ্টায় ২৬০ ডেঙ্গুরোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরে এ যাবত মোট ৬ হাজার ৭৭ রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পেয়েছেন। চলতি বছরের ২৩ জুন পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ এবং ৪১ শতাংশ নারী রয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে এবং চলতি বছরে এ যাবত ডেঙ্গুতে ৩৪ জন মারা গেছে। মৃত দুই জনের একজন বরিশাল বিভাগের, আরেক জন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার।

চলতি বছরের তথ্য

চলতি বছরের ২২ জুন পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৮ হাজার ১৫০ জন। এর মধ্যে ৫৯ শতাংশ পুরুষ ও ৪১ শতাংশ নারী। চলতি বছরে এ যাবত ডেঙ্গুতে ৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছর জানুয়ারিতে আক্রান্ত হন ১ হাজার ১৬১ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৩৭৪ জন, মার্চ মাসে আক্রান্ত হন ৩৩৬ জন, এপ্রিলে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০১ জন। মে মাসে আক্রান্তের সংখ্যা হয় ১ হাজার ৭৭৩। আর চলতি জুন মাসের ২৩ দিনে আক্রান্ত হয়েছেন ৩ হাজার ৮০৫ জন।

গত বছর ২০২৪ সালের জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ১ লাখ ১ হাজার ২১৪ জন এবং ডেঙ্গুতে মোট মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৫ জনের। এর আগের বছর ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছিল ১ হাজার ৭০৫ জনের, পাশাপাশি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন মোট ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন।

প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram