সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) গাড়িচালক হিসেবে কর্মজীবন শেষ করলেও নিজেকে শিল্পপতি পরিচয় দিতেন সৈয়দ আবেদ আলী ওরফে জীবন (৬০)। তার গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের ডাসার এলাকার মানুষ তাকে শিল্পপতি হিসেবেই চিনেন। সেই পরিচয়ে তিনি ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচন করতে জোর প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ঢাকায় চলে আসেন আবেদ আলী। এরপর জীবনযুদ্ধে নেমে পড়েন তিনি। প্রথমে কুলির কাজ করেন। রিকশা চালানো, হোটেলে কাজ, চাল বিক্রি করাসহ যখন যে কাজ পেয়েছেন, তাই করেছেন। ড্রাইভিং শিখে পিএসসিতে চাকরি পাওয়ার পরই তার ভাগ্য খুলতে থাকে। বর্তমানে তিনি বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন। ডাসার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী হওয়ার স্বপ্নও দেখছেন আবেদ আলী। নিজ গ্রামে গড়ে তুলেছেন তিনতলা বিলাসবহুল বাড়ি। বাড়ির পাশে একটি পাকা মসজিদ ও বাগান। কিনেছেন বহু ফসলি জমি।
সম্প্রতি সৈয়দ আবেদ আলী জীবন বিভিন্ন নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত অভিযোগে সিআইডির হাতে গ্রেপ্তার হয়েছেন। এছাড়াও একই অভিযোগে সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) দুজন উপপরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালকসহ ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে আবেদ আলী স্বীকার করেছেন, বিসিএস পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসসহ বিভিন্ন দপ্তরে দালালি করতেন তিনি। দেশের স্বনামধন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজ ফেসবুক আইডিতে পোস্ট করে প্রচার চালাতেন। সেসব ছবি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের দেখিয়ে সুবিধা নিতেন তিনি। পিএসসির কোনো নিয়োগ পরীক্ষা এলেই প্রশ্নফাঁস করে মোটা অঙ্কের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার কারসাজিতেও লিপ্ত ছিলেন তিনি।
এ দিকে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত ২ বছর ধরে সৈয়দ আবেদ আলীকে নিজ এলাকায় বেশ সরব দেখছেন তারা। তিনি ডাসার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে চান। এ জন্য দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। এলাকার গরিব-দুঃখীদের দানখয়রাতের পাশাপাশি পোস্টারও সাঁটাচ্ছেন এলাকার বিভিন্ন জায়গায়।
ডাসার উপজেলার স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, আবেদ আলী নিজ গ্রামে প্রায় ৬ কোটি টাকা খরচ করে বিলাসবহুল তিনতলা ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাড়ির পাশে করেছেন মসজিদ। এ ছাড়া সরকারি জায়গা দখল করে তার গরুর খামার ও মার্কেট নির্মাণাধীন। উপজেলার পান্তাপাড়া ও পূর্ব বোতলা গ্রামে কিনেছেন দুই কোটি টাকার বেশি দামের জমি। তার ঢাকার মিরপুর, শ্যামলীতেও বাড়ি রয়েছে বলে শুনেছেন।
আবেদ আলীর হঠাৎ এমন উত্থান দেখে রীতিমতো হতবাক ডাসার উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ সাখাওয়াত হোসেন।
তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আবেদ আলীর দলীয় পদ নেই। তিনি আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নন। শুনেছেন, তিনি ডাসার উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করবেন। তার ব্যানার-ফেস্টুন রাস্তাঘাটে দেখেছেন। আবেদ আলী মূলত ঢাকায় থাকতেন। শুনেছি, সরকারি গাড়ি চালাতেন। অনিয়মের কারণে তার চাকরি গেছে বলে শুনেছিলাম।’
তিনি আরও বলেন, ‘হঠাৎ শুনি ঢাকার বড় ব্যবসায়ী হয়ে গেছেন এ গাড়িচালক আবেদ। মাঝেমধ্যেই এলাকায় এসে গরিব মানুষের মধ্যে টাকাপয়সা বিলাতেন, খাবার দিতেন। মানবিক কাজ করে তিনি সবার কাছে অন্যভাবে পরিচিত হতে চেয়েছিলেন।’