ঢাকা
৯ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
সকাল ৬:২৫
প্রকাশিত : জুলাই ১৬, ২০২৫
আপডেট: জুলাই ১৬, ২০২৫
প্রকাশিত : জুলাই ১৬, ২০২৫

এক বছরেও বিচারের কোনো অগ্রগতি হয়নি: আবু সাঈদের ভাই

জুলাই আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। বিচারকার্যক্রমের অগ্রগতি নিয়ে অভিযোগ করেছেন তার বড় ভাই রমজান আলী। বলেন, রাষ্ট্রের সব পর্যায়ের মানুষেরা কবর জিয়ারত করে বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, কিন্তু আজও ভাই হত্যার বিচারের কোনো অগ্রগতি বা আলামত দেখতে পেলাম না।

এমনকি হতাশাব্যক্ত করে বলেন, আমার ভাই আবু সাঈদ যে কারণে জীবন দিলো, তা বাস্তবায়নের কোনো চিহ্নই দেখছি না। বুধবার (১৬ জুলাই) আবু সাঈদের প্রথম শাহাদতবার্ষিকীতে, রংপুরের পীরগঞ্জের বাবুনপুরে নিজ বাড়িতে তিনি এ কথা বলেন।

রমজান আলী বলেন, আজ ১৬ জুলাই—সরকারিভাবে ‘শহীদ দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে। আমি সকল শহীদের জন্য দোয়া কামনা করি। যারা আহত হয়েছেন, তাদের জন্যও আমি দোয়া করছি।

ভাই হত্যার বিচারের গতি নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে রমজান বলেন, আমার ভাই বৈষম্যের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে জীবন দিলো। সেই আন্দোলন দেশের জন্য একটা নতুন স্বাধীনতার মতো কিছু বয়ে এনেছে। কিন্তু সেই স্বাধীনতার বাস্তব প্রতিফলন আমরা আজও দেখতে পাচ্ছি না। এক বছর পেরিয়ে গেছে, কিন্তু এখনও সাঈদের হত্যার বিচার হয়নি। সবাই জানে সে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে। এটা স্পষ্ট। তাহলে এখনও বিচার অগ্রসর হচ্ছে না কেন? এই দুঃখের কথা কাকে বলব? এই বাংলাদেশের কোন মানুষের কাছে বলবো? বলার ভাষা আমাদের নেই।

প্রধান উপদেষ্টাসহ সকল উচ্চপদস্থ ব্যক্তির কাছ থেকে প্রতিশ্রুতি পেয়েও বিচার না পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেন তিনি। বলেন, আমাদের বাসায় প্রধান উপদেষ্টা, সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও প্রধান বিচারপতি পর্যন্ত এসেছেন। সবাইকে আমরা বলেছি, আমাদের ভাইয়ের বিচার চাই। কিন্তু এক বছরেও কোনো অগ্রগতি হয়নি। আমরা অত্যন্ত দুঃখিত এবং আমাদের পরিবার শোকাহত। বলার মতো ভাষাও আর অবশিষ্ট নেই।

আবু সাঈদের আত্মত্যাগের পর বাংলাদেশে মুক্তচিন্তার পরিবেশ তৈরি হয়েছে, উল্লেখ করে রমজান বলেন, আমার ভাইয়ের রক্তের কারণে আজ মানুষ কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। অনেক ভাই এসে বাবার পা ধরে কেঁদেছে—বলেছে, ‘আপনার ছেলের জন্যই আমরা মুক্ত।’ কেউ কেউ বলেছে, ‘আমার ফাঁসির আদেশ ছিল, আমি বেঁচে গেছি।’

তিনি আরও বলেন, কিন্তু বাংলাদেশে বাস্তবিক কোনো পরিবর্তন এখনও চোখে পড়ে না। বিচারব্যবস্থা, বিচারপ্রক্রিয়া—সবই আগের মতোই আছে। দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই।

রাজনৈতিক দলগুলোর দ্বন্দ্বে প্রধান উপদেষ্টা কাজের সুযোগ পাচ্ছেন না—এমন অভিযোগ তুলে রমজান বলেন, প্রধান উপদেষ্টা শুধু বাংলাদেশেই নয়, তিনি আন্তর্জাতিকভাবে সম্মানিত একজন মানুষ। আমরা তাকে শ্রদ্ধা জানাই। কিন্তু দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর কামড়াকামড়ি ও দ্বন্দ্ব তাকে কাজের সুযোগ দিচ্ছে না। যদি তাকে প্রয়োজনীয় সময় ও স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ দেয়া হয়, তাহলে তিনি বিচার সংস্কার করে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে পারবেন। বর্তমানে যে হানাহানি চলছে, সেটাও নিয়ন্ত্রণে আসবে। কিন্তু সে সুযোগ এখনো তাকে দেওয়া হয়নি।

সংবিধান সংশোধন ও সংস্কারের মাধ্যমে নির্বাচন প্রয়োজন—এমন দাবিও জানান রমজান আলী। বলেন, যেহেতু দেশে পরিবর্তন এসেছে, সেহেতু সংবিধানও পরিবর্তন হওয়া দরকার। এই পরিবর্তন ও ধারাবাহিকতা অনুযায়ী দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব হবে এবং মানুষ তার অধিকার ফিরে পাবে। আমার ভাই আবু সাঈদ যে আলো দেখিয়ে গেছে—সেই আলোয় বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন যেন পূরণ হয়।

উল্লেখ্য, গত বছর ১৬ জুলাই, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে বুক পেতে দিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ। তার মৃত্যুর পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন নতুন মাত্রা পায়।

শহীদ দিবস উপলক্ষে কর্মসূচি:
দিনটি উপলক্ষ্যে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কর্মসূচি। রংপুরের বীরগঞ্জের বাবুনপুরে আবু সাঈদের কবর জিয়ারত করবেন— আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, শিক্ষা উপদেষ্টা প্রফেসর ড. রফিকুল আকবর, বন ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রেজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এস এম এ ফায়েজ, রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. শওকত আলী ও সংস্কৃতি বিষয়ক কর্মকর্তারা।

এ ছাড়াও, বিএনপি, জামায়াত, এনজিপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কবর জিয়ারত ও শোকস্মারক অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে।

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মসূচি:
সকাল ১০টায় রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা কালো ব্যাজ ধারণ করবেন। এরপর শোকযাত্রা, আলোচনা সভাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন হবে। সভায় প্রধান অতিথি হলেন আবু সাঈদের পিতা মকবুল হোসেন ও বিশেষ অতিথি রংপুরের শহীদ পরিবারের সদস্যরা।

পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটে ‘শহীদ আবু সাঈদ তোরণ’ ও পার্কের মোড়ে ‘আবু সাঈদ মিউজিয়াম’-এর উদ্বোধন করবেন অতিথিবৃন্দ।

সর্বশেষ
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1736 786915, +880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online)
news@bd-sangbad.com, ads@bd-sangbad.com
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।  অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram