ঢাকা
১২ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৮:২৫
প্রকাশিত : মে ১২, ২০২৫
আপডেট: মে ১২, ২০২৫
প্রকাশিত : মে ১২, ২০২৫

২ লাখেরও বেশি নার্স-সংকট, সাদা পোশাক ফেরত চান তারা

আধুনিক নার্সিং পেশার রূপকার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্মদিন উপলক্ষে আজ সোমবার বিশ্বব্যাপী পালিত হবে আন্তর্জাতিক নার্স দিবস। দিবসটি উপলক্ষে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর থেকে সকল নার্সিং শিক্ষা ও সেবা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী, কর্মকর্তাদের দিবসটি পালন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়।

এই দিনটি শুধুমাত্র নার্সদের অবদানের স্বীকৃতিই নয়, বরং তাদের পেশাগত জীবনের সংগ্রাম, সেবার মান এবং উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তাও স্মরণ করিয়ে দেয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেও এই দিবসটি বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে বাংলাদেশেও দিবসটি উদযাপন করা হবে। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘আমাদের নার্স, আমাদের ভবিষ্যৎ, নার্সিং পেশার উন্নতি, অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি’। দেশে প্রায় ২ লাখের বেশি নার্সের ঘাটতি রয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী হাসপাতালের শয্যা, চিকিৎসক এবং নার্সের অনুপাত হতে হবে ১ :৩। অর্থাৎ একজন চিকিৎসক অনুপাতে অন্তত তিন জন নার্স প্রয়োজন হবে।

কিন্তু বাংলাদেশে ১ লাখ ২ হাজার ৯৯৭ জন ডাক্তারের বিপরীতে নার্স রয়েছেন মাত্র ৭৬ হাজার ৫১৭ জন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ডাক্তার অনুপাতে নার্স থাকার কথা ৩ লাখ ৮ হাজার ৯৯১ জন। চিকিৎসকের তুলনায় নার্সের ঘাটতি ২ লাখ ৩২ হাজার ৪৭৪ জন। এতে করে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসাসেবার স্বাভাবিক গতি। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও যোগ্যতা অনুযায়ী নার্সপেশাজীবীরা তাদের প্রাপ্য স্বীকৃতি ও পদমর্যাদা পায়নি। মাস্টার্স, এমপিএইচ, পিএইচডি-সহ দেশ-বিদেশে উচ্চতর ডিগ্রিধারী সহস্রাধিক নার্স রয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী ধাপে ধাপে তাদের পদোন্নতি পাওয়ার কথা। শুরুতে যে পদে নিয়োগ পান, অর্থাৎ স্টাফ নার্স হিসেবে নিয়োগ পান এবং ঐ পদেই ৯০ ভাগ নার্স অবসরে যান। স্বাস্থ্য খাতে নার্সরা পদোন্নতি নিয়ে চরম বৈষম্যের শিকার। কিন্তু দীর্ঘকাল যাবত এ পেশায় নিয়োজিত নার্সগণ পদোন্নতি-বঞ্চিতই রয়ে গেছেন।

এই বৈষম্যের কারণে নার্সদের মধ্যে চরম অসন্তোষ ও হতাশা বিরাজ করছে। আধুনিক নার্সিং পেশার রূপকার ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের দেওয়া সেই সাদা পোশাকও গত সরকারের আমলে স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) চিকিৎসকরা সরকারকে দিয়ে নার্সদের ঐতিহ্যবাহী সাদা পোশাকটি পরিবর্তন করেছেন। ঐ সময় নার্স নেতৃবৃন্দ সাদা পোশাক বহাল রাখার জন্য সরকারকে আবেদন করার পরও নার্সদের জাতীয় সাদা পোশাক পরিবর্তন করেছেন। তারা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের নিকট নার্সদের বর্তমান জলপাই রংয়ের পোশাক পরিবর্তন করে পূর্বের তাদের সেই ঐতিহ্যের সাদা পোশাক চায়। পবিত্রতা ও শুভ্রতার প্রতীক সাদা রঙের পোশাকেই দেশের নার্সগণ অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন এবং রোগীদের কাছেও এই পোশাক খুবই পরিচিত।

ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের জন্ম ১৮২০ সালের ১২ মে ইতালির ফ্লোরেন্স শহরে। নাইটিঙ্গেল মানবসেবা প্রথম অনুভব করেন ১৭ বছর বয়সে লন্ডনে থাকা অবস্থায়। পরবর্তীকালে এই অনুভবকে তিনি ‘ঈশ্বরের ডাক’ বলে অভিহিত করেছিলেন। তবে সেবাকে জীবনের ব্রত হিসেবে নেওয়ার কথায় প্রবল আপত্তি আসে তার পরিবার থেকে। তখন সমাজে নার্সিং ছিল নিম্নবিত্ত, অসহায়, বিধবা নারীদের পেশা। পরিবারের প্রবল আপত্তিকে পাশ কাটিয়ে তিনি নিজেকে নার্সিংয়ের কৌশল ও জ্ঞানে দক্ষ করে তোলেন। বিভিন্ন দেশে ভ্রমণের সুবাদে তিনি সেসব দেশের সেবা ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা ও অপেক্ষাকৃত উন্নত ব্যবস্থাতে প্রশিক্ষণ লাভ করেন। ১৮৫৩ সালে লন্ডনের মেয়েদের একটি হাসপাতালে নিয়ন্ত্রকের দায়িত্ব নেন।

বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেন, চিকিৎসকরা রোগীকে শুধু ব্যবস্থাপত্র দিয়ে চলে যান। বাকি সিংহভাগ সময় নার্সের তত্ত্বাবধানেই রোগী থাকেন। নার্সরা তাদের আন্তরিক সেবা দিয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। এই মহত পেশার নার্সদের পদোন্নতিসহ সুযোগ-সুবিধা প্রদানে অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। নার্সিং সেক্টরের মানোন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা এবং স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা একজন নার্সবান্ধব ব্যক্তিত্ব। তিনি ইতিমধ্যে বাংলাদেশের নার্স পেশাজীবীদেরকে আন্তর্জাতিক মানের নার্স ‍হিসেবে গড়ে তুলে বৈদেশিক কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছেন। দেশের জন্য বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে নার্সরা মুখ্য ভূমিকা রাখতে পারেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। বাংলাদেশের সর্বস্তরের নার্স-পেশাজীবীরা সম্ভাবনাময় নার্সিং পেশার মানোন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টাসহ সংশ্লিষ্টরা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

এদিকে নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ন্যাব)-এর সভাপতি জাহানারা সিদ্দিকী বলেন, বাংলাদেশের নার্সরা স্বাস্থ্যসেবায় অবিচ্ছেদ্য ও অপরিহার্য অংশীদার হলেও তাদের সামাজিক মর্যাদা ও সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়নি। নার্স দিবসে তিনি বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত নার্সদের ধন্যবাদ জানান। অতিদ্রুত নার্সদের পূর্বের সাদা ড্রেস কোড বাস্তবায়ন ও নার্সদের সকল যৌক্তিক দাবি পূরণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram