মতিয়া চৌধুরী বাংলাদেশি নারী রাজনীতিবিদদের মধ্যে প্রভাবশালী এক নাম। রাজনৈতিক অঙ্গনে তাকে বলা হয় ‘অগ্নিকন্যা’। ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি হিসেবে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনে তার যে উদ্দীপ্ত ভাষণ, সেই উদ্দীপ্ত ভাষণ তাকে অগ্নিকন্যার রূপ দিয়েছে।
১৯৪২ সালের ৩০ জুন পিরোজপুরে তার জন্ম। তার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পুলিশ কর্মকর্তা এবং মা নুরজাহান বেগম ছিলেন গৃহিণী। ১৯৬৪ সালের ১৮ জুন খ্যাতিমান সাংবাদিক শেরপুরের নকলা উপজেলার গণপদ্দী এলাকার সন্তান বজলুর রহমানের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন মতিয়া চৌধুরী। তিনি ইডেন কলেজে অধ্যয়নরত অবস্থায় ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।
বুধবার রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার দাফনও সম্পন্ন হয়েছে। তার মৃত্যু ঘিরে অনেকে লেখালেখি হয়েছে, সংবাদও প্রচার হয়েছে অনেক।
তাকে ঘিরে প্রচারিত সেসব সংবাদ ঘিরে সমালোচনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। শুক্রবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি এ সমালোচনা করেন।
শফিকুল আলম লিখেছেন, ‘দেশের প্রথম সারির সংবাদপত্রগুলো মতিয়া চৌধুরীর দীর্ঘ জীবনের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলোকে সামনে এনে তাকে সম্মান জানিয়েছে। কিন্তু নির্মোহ শোক সংবাদের পরিবর্তে সেগুলোতে মূলত ছিল সাধারণ প্রশংসা, যেন একজন মুরিদ তার পির সম্বন্ধে লিখছেন।’
তিনি লিখেছেন, ‘এটা পরিষ্কার যে আমরা ছোট থেকে অনেক সুফি তাজকিরা বিশেষ করে তাজকিরাতুল আউলিয়া এবং তাজকিরাতুল আম্বিয়া পড়ে বড় হয়েছি।’
প্রেস সচিব লিখেছেন, ‘১৯৬০ সালে ছাত্র ইউনিয়নের নেতা হিসেব তার ভূমিকা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। আমাদের ইতিহাসের কিছু গৌরবান্বিত অধ্যায়েও তার ভূমিকা রয়েছে। যেমন আইয়ূব খানের আমলে ছাত্র আন্দোলন থেকে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে আশির দশকের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন। একজন শোকগাঁথা লেখককে অবশ্যই এই ঘটনাগুলো স্পর্শ করতে হবে।’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘কিন্তু আপনারা (সংবাদ মাধ্যম) শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনে তার ভূমিকাকে, তিনি কীভাবে ছাত্র আন্দোলনকে দানব আখ্যা দিয়েছেন এবং তিনি কীভাবে একটি ফ্যাসিস্ট শাসনের অংশ হয়েছেন, তা অবজ্ঞা করেছেন। গত ১৫ বছর ধরে চলা গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলন যে কম গুরুত্ব পাচ্ছে, এটিই আপনারা সামনে এনেছেন। তিনি যেভাবে ইতিহাসের সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত স্বৈরশাসকের বন্দনা করেছেন, প্রকৃতপক্ষে আপনারা সেটিকেই বৈধতা দিচ্ছেন।’
আরও লিখেছেন, ‘এটা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে যুগ যুগ পরেও আমাদের সংবাদপত্রগুলো শোক সংবাদ লেখার শিল্প ধরতে ব্যর্থ। অথবা তারা মৃত ব্যক্তির সমালোচনা না করার ইসলামিক রীতির সমর্থক।’