অন্তর্ভুক্তিমূলক ও বহুত্ববাদী গণতন্ত্রে উত্তরণ নিশ্চিত করতে এবং অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
তিনি বলেন, আমাদের এখন কাজ হচ্ছে নির্বাচনি ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, গণমাধ্যম, অর্থনীতি ও শিক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার সাধন করা।
ভারতে আয়োজিত তৃতীয় ‘ভয়েস অব দ্য গ্লোবাল সাউথ’ সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যোগ দিয়ে শনিবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস এসব কথা বলেন।
ড. ইউনূস ছাড়াও ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, ফিজি, ওমান, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশের সরকার প্রধানরা ভার্চুয়ালি সম্মেলনে যোগ দেন।
সম্মেলনে তিনি সবাইকে ঢাকা সফরের আমন্ত্রণ জানান। সম্মেলনে যোগ দেওয়া রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের তিনি বলেন, নইলে আপনি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মিস করতে পারেন।
ঢাকার বেশিরভাগ এলাকার দেয়ালগুলো তরুণ শিক্ষার্থী ও শিশু যাদের অনেকের বয়স ১২-১৩ বছর গ্রাফিতির নগরে পরিণত করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ৪০০ বছরের পুরোনো ঢাকা শহরের দেয়ালে নতুন গণতান্ত্রিক-পরিবেশবান্ধব বাংলাদেশকে তুলে এনেছে এসব নতুনেরা।
তিনি বলেন, এর জন্য কোনো কেন্দ্রীয় পরিকল্পনা বা নির্দেশনা ছিল না। কারও কাছ থেকে কোনো অর্থ সহায়তাও পায়নি তারা। দ্বিতীয় বিপ্লবের লক্ষ্যের প্রতি তাদের যে আবেগ ও অঙ্গীকার এটা তাদের সেই বহিঃপ্রকাশ মাত্র।
ড. ইউনূস বলেন, গ্লোবাল সাউথের জনসংখ্যার একটি উল্লেখযোগ্য অংশ তরুণ ও শিক্ষার্থীরা। আমাদের কর্মকৌশলের কেন্দ্রে তাদের রাখতে হবে। আমাদের জনসংখ্যার দুই-তৃতীয়াংশ তরুণ। তারা আমাদের সমাজের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী অংশ। তারা অন্যদের মতো নয়। তারা একটি নতুন পৃথিবী গড়তে বদ্ধপরিকর। তারা সেই সক্ষমতা রাখে। প্রযুক্তিগত দিক থেকে তারা তাদের আগের প্রজন্মের চেয়ে অনেক এগিয়ে। তারা সব অসম্ভবকে সম্ভব করতে পারে।
তিনি বলেন, আমাদের যে শিক্ষা ও আর্থিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তা শুধু চাকরিপ্রার্থী ও তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার জন্য। আমাদের সিস্টেমকে নতুন করে সাজাতে হবে।
ড. ইউনূস বলেন, আমার দীর্ঘ জীবনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি আমাদের আর্থিক ব্যবস্থা সম্পদের একীভূতকরণের জন্য তৈরি হয়েছে। আমাদের এই আর্থিক ব্যবস্থা এমনভাবে পুনর্গঠন করতে হবে যেন সম্পদের সুষম বণ্টন হয়।
তিনি বলেন, ১৯৫২ সালে বাংলাদেশের ছাত্ররা মায়ের ভাষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছিল। যা সারা বিশ্বে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার আদায়ে সংগ্রামের অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। প্রায় সাত দশক পরে আমাদের ছাত্রদের নেতৃত্বে যে দ্বিতীয় বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে তা গ্লোবাল সাউথে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, মর্যাদাবোধ, সমতা এবং সুষম উন্নয়নে তরুণদের জেগে উঠতে অনুপ্রেরণা যোগাচ্ছে।