আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে আসমা আক্তার (২৫) নামে দুই সন্তানের জননীকে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী আমজাদ হোসেন (৩০) ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। নিহত আসমা উপজেলার গোপালদী পৌরসভার রামচন্দ্রদী এলাকার ফালু মিয়ার কন্যা এবং তার স্বামী মাহমুদপুর ইউনিয়নের কল্যান্দী এলাকার মৃত কবির হোসেনের ছেলে। ঘটনাটি ঘটেছে রোববার দিবাগত রাতে নিহতের শ্বশুর বাড়ীতে।
সংবাদ পেয়ে থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসলে সেখানে উপস্থিত নিহতের বড় বোন উম্মে হাবিবা জানান, প্রায় ৭ বছর আগে আমজাদের সাথে আসমার বিয়ে হয়। তাদের দুটি সন্তান রয়েছে। বেশ কিছুদিন ধরে আমজাদ মোটা অংকের টাকা যৌতুক এনে দেয়ার জন্য আসমাকে দৈহিকভাবে নির্যাতন করতো ও প্রাণ নাশের হুমকী দিত। বিগত ঈদুল আযহার পরও আসমাকে মারপিটে আহত করে যৌতুকের জন্য তার পিত্রালয়ে পাঠিয়ে দিলে পিত্রালয় থেকে নগদ দেড় লাখ টাকা যৌতুক এনে দেয়। এর আগেও পিত্রালয় থেকে দেয়া প্রায় দুই ভরি ওজনের স্বর্ণালংকার বিক্রি করে দিয়ে টাকা পয়সা নষ্ট করে ফেলে আমজাদ। কিন্তু তাতেও আমজাদ সন্তুষ্ট না হয়ে আসমার উপর অত্যাচার নির্যাতন অব্যাহত রাখে।
এরই ধারাবাহিকতায় রোববার (২৮ জুলাই) সন্ধ্যায় আমজাদ এবং তার পরিবারের লোকজন আসমাকে একই কারণে মারধর করে শ্বাসরোধে হত্যা করে ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালানোর জন্য ঘরে এক প্যাকেট বিষাক্ত দ্রব্য (স্থানীয় ভাষায় কেড়ির বড়ি) এনে টেবিলের উপর রেখে দেয়। কিন্তু বড়ির প্যাকেটটি ছিল অক্ষত। তার মানে নিহতের পরিবারের দাবী ওই প্যাকেট থেকে কোন বড়ি খোলা বা খাওয়া হয়নি। আমজাদের পরিবারের সদস্যরা লোকদেখানোর জন্য আসমাকে প্রথমে আড়াইহাজার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত ডাক্তার এখানে তার চিকিৎসা করা সম্ভব না বলে আসমাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করেন। কিন্তু আমজাদ তাকে রেফার অনুযায়ী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে না নিয়ে নারায়ণগঞ্জ পপুলার হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার আসমাকে মৃত ঘোষণা করেন। ফলে আমজাদ তড়ি ঘড়ি করে আসমার লাশ এ্যম্বুলেন্সে করে হাসপাতাল থেকে বের করে বাড়ীতে নিয়ে এসে লাশ বাড়ীতে রেখে স্বপরিবারে পালিয়ে যায়। সংবাদ পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে সোমবার সকালে নারায়ণগঞ্জ মর্গে প্রেরণ করে।
নিহতের বোন আলহাজ্ব আবুতালেব মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকা উম্মে হাবিবা জানান, আমার বোনের ঠোঁটে কাটা দাগ সহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত চিহ্ন রয়েছে এবং তার পরনের জামা কাপড় ছিড়া রয়েছে। তার দাবী তার বোনকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে আড়াইহাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আহসানউল্লাহ জানান, লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে। আইনী প্রকৃয়া চলছে। ময়না তদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।