আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর ২০২৪) সকাল ১০ টায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আওয়ামী স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগিতায় ঢাকার ভাটারায় “লন্ডন ইকরাম টাওয়ারের" মালিক ভূমিদস্যু ও হুন্ডির মূলহোতা মো: আব্দুল কাদির ওরফে ভুয়া কাদির এর বিরুদ্ধে একটি মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন ঘটনার ভুক্তভোগী মো: মোক্তাদের হোসেন ও তার স্ত্রী নিলুফার ইয়াসমিনসহ অন্যান্যরা।
ভুক্তভোগী মো: মোক্তাদের হোসেন বলেন, আমি ১৯৯৯ সালে ডেইরি এন্ড পোল্ট্রি ফুডের ব্যবসা শুরু করি ক-১১/৩ বসুন্ধরা রোড, জগন্নাথপুর, ভাটারা, ঢাকা, ঠিকানায় একটি টিনশেড ঘরে। ২০০৭ সালে এসে আমি একটি হোটেল করার সিদ্ধান্ত নেই। হোটেলের নাম ঠিক করা হয় রাজ বিলাস । ২০১৪ সালে জায়গার মালিক মো: আব্দুল কাদির আমাকে বলেন, তিনি এখানে একটি বহুতল ভবন নির্মাণ করবেন। যার নাম “লন্ডন ইকরাম টাওয়ার" হিসাবে নামকরণ করা হয় এবং উক্ত ভবনের নিচ তলায় আমাকে হোটেল পরিচালনার জন্য ৩০০০ বর্গফুটের জায়গা বরাদ্দ দেয়া হবে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে হোটেলের জন্য জামানত বাবদ অগ্রীম সর্বমোট ৭০,০০,০০০/= (সত্তর লক্ষ) টাকা প্রদান করে আমরা উভয় পক্ষ দোকান ভাড়ার চুক্তিপত্র দলিলে স্বাক্ষর করি। উক্ত চুক্তিপত্র দলিলের মধ্যে শর্ত ছিল পূর্বের টিনশেড ঘরটি ভেঙ্গে উহাতে “লন্ডন ইকরাম টাওয়ার” নামে বহুতল বিশিষ্ট ইমারত নির্মাণ করে উক্ত ভবনের নীচ তলার রাস্তার লেভেল মোট ৩০০০ স্কয়ার ফুট সম্পূর্ণ আমাকে বুঝিয়ে দিবেন।
কিন্তু ২০১৭ সালে মি: কাদির তার ভবন লন্ডন একরাম টাওয়ারের কাজ শুরু করে এবং আমাকে আরো ৪০,০০,০০০/- (চল্লিশ লক্ষ) টাকা জামানত দেওয়ার জন্য উকিল নোটিশ দেন। আমি সরল বিশ্বাসে চুক্তিপত্রের মাধ্যমে উক্ত টাকা প্রদান করি। আমি তাকে হোটেলের অগ্রীম বাবদ সর্ব মোট (৭০,০০,০০০+৪০,০০,০০০) ১,১০,০০,০০০/- (এক কোটি দশ লক্ষ) টাকা দেই। টাকা নেওয়ার পর আমাকে ফ্লোর দিতে টালবাহানা শুরু করে।
তিনি আরো বলেন, ২০২১ সালে (রাজ বিলাস) হোটেলের জন্য আমাকে ভবনের নীচ তলায় ১১০০ স্কায়ার ফিটের খালি জায়গা দেয় এবং বলে এই খালি জায়গাতে ডেকোরেশন করে হোটেল পরিচালনা করার জন্য। আমি তার সাথে সম্মত হয়ে হোটেলের ডেকোরেশন ও সৌন্দর্যবর্ধনের কার্যক্রম শুরু করি যাতে আমার আনুমানিক ৭০ লক্ষ টাকা ব্যয় হয়। হোটেল উদ্বোধনের কয়েকদিন আগে কাদির হোটেলের সামনে ছোট ছোট অনেক গুলো কাপড়ের দোকান বসায় যার কারণে আমার হোটেল আসার রাস্তা সম্পুর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।
তখন আমি কাদিরকে বলি সামনের ছোট ছোট দোকান গুলো থাকলে হোটেল পরিচালনা করা সম্ভব হবে না তাই আপনি যদি দোকান গুলো সরান তাহলে ভালো হয়।তখন কাদির বলে ঠিক আছে আমি সামনের দোকান গুলো সরিয়ে অন্য স্থানে দিবো।
কিন্তু দোকান সরানোর বিষয়ে তার কোন আগ্রহ ছিল না। এ অবস্থা দেখে আমি মি: কাদিরের সাথে একাধিকবার যোগায়োগ করার চেষ্টা করি কিন্তু আমি তার সাথে কোন প্রকার যোগায়োগ করতে পারিনি। এমত. অবস্থায় হঠাৎ গত ২৫/০২/২০২২ তারিখে রাত অনুমান ০৮.০০ টার সময় ভাটারা থানাধীন রাজ বিলাস হোটেল, ক-১১/৩ বসুন্ধরা রোড, জগন্নাথপুর, ভাটারা, ঢাকা এর সামনে তাকে দেখতে পাই।
তখন তাকে অনুরোধ করি হোটেলের সামনের দোকান গুলোর জন্য আমি হোটেল উদ্বোধন করতে পারছিনা। আমার কথা শুনে সে আমার উপর রাগান্বিত হয়ে আমাকে গালাগাল করতে থাকে এবং বলে আমি বাকী জায়গাও দিবো না সামনের দোকানও সরাবো না এই ব্যাপারে বেশি বাড়াবাড়ি করলে সে আমাকে আমার হোটেল থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবে, তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে আমার হাত-পা ভেঙ্গে দেওয়া সহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এমনকি আমাকে মামলা দিয়ে জেলের ভাত খাওয়াবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি দেয় ।এই ঘটনার পরে ২০/০৩/২০২৪ ইং তারিখে রাত ১২ টা থেকে ভোর ৬টার মধ্যে তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে হোটেলের সিসি ক্যামরা ও ডিভাইসসহ হোটেলের সমস্ত মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এবং আমার নামে বিভিন্ন প্রকার মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা শুরু করে। এ ঘটনার পরে আমি ভাটারা থানায় সাধারন ডায়েরি করি।
মোক্তাদের আরো বলেন, কাদির আওয়ামী স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকারের সহযোগিতায় ভূমিদস্যু ও হুন্ডির মূলহোতা হয়ে উঠেন। বিগত সরকারের সরকার প্রধান থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ সবার সাথে তার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। আমি সাধারণ ডায়েরি করার পরে আমাকে নানা ভাবে হেনস্থা করতে থাকে।
তিনি বলেন, আমি ছাড়াও লন্ডন ইকরাম টাওয়ারে যারা ব্যবসা করেন তাদের প্রায় সবাইকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করে আসছে কাদির। কোন প্রকার নোটিশ ছাড়া যখন তখন যাকে তাকে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধের নোটিশ দিয়ে হয়রানি মূলক মিথ্যা মামলা দিয়ে থাকে। এখানে আমরা কেউ নিরাপদ না।
এক অদৃশ্য ক্ষমতার বলে সে এই সব করে আসছে। এমতাবস্থায়, আমি একজন ওপেন হার্ট সার্জারি রোগী হয়ে এবং মানসিক, আর্থিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে বিগত আট বছর যাবৎ পরিবার পরিজন নিয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করে আসছি। আমি আমার জীবনের নিরাপত্তা, আমার যে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে তার জন্য আমি আদালতের দারস্ত হই, আমার মামলা চলমান আছে একই সাথে আমি সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সমস্ত জাতিকে জানাতে চাই।
আমাদের অনুসন্ধানী রিপোর্টে কাদির সম্পর্কে আরো ভয়াবহ তথ্য পাওয়া যায় মুলত সিলেটের ভূমি ব্যবসায়ী এই লন্ডনী কাদির। স্থানীয় ও বিভিন্ন সুত্রের মাধ্যমে জানা যায় বিগত সরকারের আমলে কাদির বেশ কিছু এমপি মন্ত্রীদের অর্থ হুন্ডির মাধ্যমে বিদেশে পাচার করে আস্থার পাত্রে পরিণত হয় এবং আশীর্বাদ স্বরুপ কাদিরের মাথার উপর হাত থাকার কারণে রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে পরবর্তীতে ভূমিদস্যুতে পরিণত হয়। হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলার দাশেরকোনা গ্রামের মৃত আমরু মিয়ার সন্তান মোঃ আব্দুল কাদির নিজ এলাকা সহ বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন গরিব-দুঃখী মানুষের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ জবরদখলসহ সরকারি বিভিন্ন তদবির করে প্রচুর পরিমাণ অর্থ সম্পদ দেশ থেকে লোপাট করেন।