কোনো মুসলমানের মৃত্যুর পর তাকে গোসল করানো, কাফন পরানো ও জানাজার নামাজ পড়ে তাকে কবরস্থ করা মুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া। মৃতের ওয়ারিস, অভিভাবক ও তার আত্মীয়-স্বজন থাকলে কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার দায়িত্ব প্রথমত তাদের ওপর বর্তায়। যদি মৃতের কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার কেউ না থাকে, তাহলে তার কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করা মুসলমানদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য হয়ে দাঁড়ায়। কেউ এই দায়িত্ব পালন না করলে সবাই গুনাহগার হবে।
মৃতের যদি সম্পদ থাকে তাহলে তার সম্পদ থেকেই তার কাফন ও দাফনের ব্যবস্থা করতে হবে। যদি কাফন-দাফনের ব্যবস্থা করার মতো সম্পদ মৃতের না থাকে, তবে তাকে কাফন দেওয়ার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তাবে জীবিত অবস্থায় তার দেখাশোনার দায়িত্ব যাদের ওপর ছিল। আত্মীয় স্বজনের মধ্যে কেউ ব্যবস্থা করতে না পারলে তার কাফনের ব্যবস্থা করা মুসলমানদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় কর্তব্য যেমন ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে।
মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া ও কাফন পরানো অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ। আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,
مَنْ غَسَّلَ مَيِّتًا فَكَتَمَ عَلَيْهِ طَهَّرَهُ اللهُ مِنْ ذُنُوبِهِ فَإِنْ كَفَّنَهُ كَسَاهُ اللهُ مِنَ السُّنْدُسِ
যে ব্যক্তি কোনো মৃত ব্যক্তিকে গোসল করায় এবং তার ত্রুটি গোপন করে, আল্লাহ সে ব্যক্তির গোনাহ গোপন করে দেন। আর যে ব্যক্তি মৃত ব্যক্তিকে কাফন পরায় আল্লাহ তাকে জান্নাতি রেশমের পোশাক পরিধান করাবেন। (মু’জামুল কাবির লিত-তাবরানি: ৮০০৪)
কাফন পরানোর পদ্ধতি
মৃত পুরুষের কাফনে জামা, লুঙ্গি ও চাদর ব্যবহার করা উত্তম। তবে জামা বাদ দিয়ে লুঙ্গি ও চাদর পরালেও পুরুষের কাফন হয়ে যায়। সামর্থ্য থাকলে শুধু চাদরে কাফন পরানো মাকরুহ। মৃত নারীর কাফনে চাদর, জামা, পেটিকোট, ওড়না ও বক্ষবন্ধনী ব্যবহার করা উত্তম। তবে পেটিকোট, চাদর ও ওড়না পরালেও নারীদের কাফন হয়ে যায়। সামর্থ্য থাকলে এরচেয়ে কম করা মাকরুহ।
মৃত পুরুষকে কাফন পরাতে হলে প্রথমে চাদর, চাদরের ওপর লুঙ্গি ও জামা রাখবেন। এরপর মৃতকে এর ওপর রেখে প্রথমে জামা পরাবেন। লুঙ্গি বাম দিক থেকে প্রথম মোড়াবেন, এরপর ডান দিক থেকে মোড়াবেন। চাদরও একইভাবে মোড়াবেন। এরপর উভয় দিক থেকে কাফন বেঁধে দেবেন যেন এলোমেলো না হয়ে যায়।
মৃত নারীকে কাফন পরানোর সময় প্রথম চাদর বিছাবেন, চাদরের ওপর পেটিকোট ও জামা বিছাবেন। প্রথমে জামা পরাবেন। চুলগুচ্ছকে দুই ভাগ করে সিনার দুই পাশে জামার ওপর রেখে দেবেন। এরপর ওড়না মাথার ওপর রাখবেন। ওড়না পেঁচানো বা বাঁধা যাবে না। বরং শুধু রেখে দিতে হবে। এরপর পেটিকোট প্রথমে বাম দিক থেকে, তারপর ডান দিক থেকে পেঁচিয়ে সিনার দিক থেকে বেঁধে দেবেন। তারপর চাদর একইভাবে পেঁচিয়ে দেবেন।