ঢাকা
২১শে জানুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
রাত ৯:২২
প্রকাশিত : জানুয়ারি ৪, ২০২৫
আপডেট: জানুয়ারি ৪, ২০২৫
প্রকাশিত : জানুয়ারি ৪, ২০২৫

এশিয়াতে চোখ রাঙাচ্ছে ‘এইচএমপিভি’ ভাইরাস

করোনা ভাইরাসের আতংক এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেনি বিশ্ব। এর মধ্যেই চীনে পাওয়া একটি নতুন ভাইরাস এশিয়ায় উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। চীনে ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালগুলোতেও ভিড় বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বয়স্ক ও শিশুরা। নতুন এই ভাইরাসটি করোনা ভাইরাসের মতোই সংক্রামক হতে পারে বলে আশংকা করা হচ্ছে। ভাইরাসটির নাম দেওয়া হয়েছে হিউম্যান মেটোপনিউমো ভাইরাস বা এইচএমপিভি। এর আগে করোনা ভাইরাসটিও চীনের উহানের একটি গবেষণাগার থেকে উদ্ভুত হয়েছিল বলে অনেক বিশেষজ্ঞ জানিয়েছিলেন।

সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া একাধিক ভিডিওতে দেখা গেছে, চীনের বিভিন্ন হাসপাতালে রোগীদের ব্যাপক ভিড়। ভিডিওতে দাবি করা হচ্ছে, রোগীদের প্রায় প্রত্যেকেই এইচএমপিভিতে আক্রান্ত। চীন সরকার ভাইরাসটি নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে বার্তা সংস্থা রয়টার্স রোগ প্রতিরোধ বিভাগের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, চীনে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এইচএমপিভি ভাইরাস। বিশেষ করে উত্তর চীনে সংক্রমণের হার বেশি। ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। চীন সরকার ভাইরাসটির বিস্তার রোধে ব্যাপক ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে জানা গেছে। স্ক্রিনিং, শনাক্তকরণ এবং বিচ্ছিন্নতা প্রোটোকলের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে।

এইচএমপিভি কী এবং কেন ছড়িয়ে পড়ছে?

জানা গেছে, করোনার মতো এইচএমপিভিতে আক্রান্ত ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা যায়। হালকা সর্দি-কাশির লক্ষণগুলোর সঙ্গে এটি নিউমোনিয়া, ব্রঙ্কাইটিসের মতো গুরুতর স্বাস্থ্য সমস্যা সৃষ্টি করে। এই ভাইরাস বিশেষ করে ছোট শিশু, বয়স্ক এবং দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রভাবিত করছে। রয়টার্সের মতে, ইনফ্লুয়েঞ্জা এ, মাইকোপ্লাজমা নিউমোনিয়া, রাইনোভাইরাস এবং কোভিড-১৯ এর মতো অন্যান্য ভাইরাসের সংক্রমণও রয়েছে। ক্রমবর্ধমান রোগীর সংখ্যা স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে আরো চিন্তার মুখে ফেলে দিচ্ছে।

এইচএমপিভি’র লক্ষণ ও চিকিত্সা

বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এইচএমপিভি সংক্রমণের কিছু হালকা উপসর্গ থাকে। যেমন সর্দি, কাশি, জ্বর, গলা ব্যথা। গুরুতর লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে শ্বাসকষ্ট, ব্রঙ্কাইটিস, নিউমোনিয়া। এইচএমপিভি এর জন্য কোনো ভ্যাকসিন বা অ্যান্টি-ভাইরাল চিকিত্সার কথা জানানো হয়নি। তবে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই ভাইরাসের উপসর্গ কমানো যায়।

শরীরকে হাইড্রেট রাখা : শরীরকে হাইড্রেট রাখতে বেশি পরিমাণে পানি খাওয়া প্রয়োজন। শরীরের জন্য বিশ্রাম প্রয়োজন। প্রয়োজনে জ্বর এবং ব্যথা উপশমকারী ওষুধ ব্যবহার করা যায়। অবস্থার অবনতি হলে বা শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে একজন চিকিত্সকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।

কীভাবে নিজেকে রক্ষা করা যায়

বাইরে কোথাও গেলে হ্যান্ডওয়াশ ব্যবহার করা, দূরত্ব বজায় রাখা, যাদের সর্দি, কাশি এবং শ্বাসকষ্টের উপসর্গ রয়েছে তাদের থেকে দূরত্ব বজায় রাখা। পাঁচ বছর আগে কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের সময় প্রত্যক্ষ করা অপ্রস্তুততার পুনরাবৃত্তি এড়াতে চীন সরকার অজানা উেসর নিউমোনিয়ার জন্য একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালাচ্ছে। এই সিস্টেমের লক্ষ্য নতুন সংক্রামক আরো ভালোভাবে শনাক্ত করা। সোশ্যাল মিডিয়ায় জনসাধারণের উদ্বেগ দেখে চীনের স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) উভয়ই স্পষ্ট করেছে যে নতুন মহামারীর কোনো প্রমাণ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেনি বা এইচএমপিটিভ নিয়ে কোনো সতর্কতাও জারি করেনি।

বিশেষজ্ঞরা যা বলছেন

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা: আবু জাফর বলেন, এই ভাইরাস সম্পর্কে আমরা অবহিত। এটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো একটা রোগ। এ নিয়ে আতংকিত হওয়ার কারণ নেই। তবে পরিস্থিতি যাতে গুরুতর পর্যায়ে না যায় সেজন্য সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার।

বিশিষ্ট মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা : এবি এম আবদুল্লাহ বলেছেন, এটা শ্বাসতন্ত্রের রোগ। তবে বয়স্ক ও জটিল রোগে আক্রান্তদের জন্য ঝুঁকি। তবে এ নিয়ে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। কেবল স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। করোনার সময় যেভাবে স্বাস্থ্যবিধি মেনেছি, সেইভাবেই চললে কোনো ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা বলেন, প্রতি বছর আমরা রোগ নিয়ে সার্ভিলেন্স করি। এরকম দুই একটা পাওয়া যায়। কিছু সংখ্যক রোগীর মধ্যে এই ভাইরাস পাওয়া গেছে। তবে এটা কোভিড-১৯ এর মতোই স্বাস্থ্য সচেতনতা কার্যক্রম চালাতে হবে। আতংকিত হওয়ার কিছু নেই।

রাজধানীর শ্যামলীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট টিভি হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা : আয়শা আক্তার বলেন, কোভিড-১৯ এ মানুষ যেভাবে সচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করেছিল, ঠিক একইভাবে এই ভাইরাস মোকাবিলায়ও স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলতে হবে। যেমন হাত ধোঁয়া ও মাস্ক পরাসহ পরিচ্ছন্নতার নীতিগুলো মেনে চললে এই রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়া সম্ভব। তবে ভাইরাসটি বয়স্কদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। এছাড়া যারা কিডনী, ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক, ডায়াবেটিসসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের জন্য বেশি সাবধানতা অবলম্বন করা খুবই জরুরি।

প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ এডভোকেট মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2025 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram