এক বছর ধরে চলমান সংঘাতে ইসরায়েলের সামরিক বা অবকাঠামোগত ক্ষয়ক্ষতি খুব বেশি না হলেও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশটির আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি। আগ্রাসন শুরুর এতোদিন পরও দেশে-দেশে অব্যাহত তেল আবিব বিরোধী বিক্ষোভ। বিশ্বজুড়ে জনসমর্থন তো হারিয়েছেই, সেইসাথে ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশটির অর্থনীতি ও সংস্কৃতিসহ একাধিক খাত। অবনতি হয়েছে বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্কের। এমনকি জাতিসংঘের সাথেও তৈরি হয়েছে বৈরী সম্পর্ক।
আপাতদৃষ্টিতে ইসরায়েল হয়তো গাজার মতো ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়নি। তবে, দীর্ঘ ১ বছর ধরে সর্বাধুনিক সব সমরাস্ত্র আর দক্ষ সমর কৌশল প্রয়োগের পরও পূরণ হয়নি হামাস নির্মূলের লক্ষ্য। যাকে নেতানিয়াহু প্রশাসনের দম্ভের ওপর চপেটাঘাত হিসেবে মনে করছেন অনেকে।
টানা হামলা, গণহত্যার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও ব্যাপকভাবে ক্ষুণ্ন ইসরায়েলের ভাবমূর্তি। ইসরায়েলে ৭ অক্টোবরের পর থেকেই জিম্মি উদ্ধারের দাবিতে শুরু হওয়া বিক্ষোভ বেড়েই চলেছে সময়ের সাথে। ক্ষোভ-নিন্দা ছড়িয়েছে বিশ্বের সব প্রান্তে। এমনকি ইহুদিরাও পালন করছে ইসরায়েলবিরোধী নানা কর্মসূচি। মার্কিন প্রতিষ্ঠান মর্নিং কনসাল্টের জরিপ অনুযায়ী, গত বছরের শেষে প্রায় অর্ধশত দেশে ইসরায়েলের জনপ্রিয়তা কমেছে গড়ে ১৯ শতাংশ।
এদিকে, পিউ রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, গেলো ১ বছরে মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের ৭০ শতাংশের বেশি নাগরিকের আস্থা হারিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু। ব্রিটিশ এক প্রতিষ্ঠানের জরিপ বলছে, যুক্তরাজ্যের ৬০ শতাংশের বেশি মানুষ দায়িত্বশীল কোনো কার্যক্রমের জন্য ইসরায়েলকে যোগ্য মনে করে না।
বিশ্বজুড়ে জনসমর্থন হারানোর পাশাপাশি দেশটির অর্থনীতি, সংস্কৃতিসহ প্রায় সব খাতেই নেতিবাচক প্রভাব স্পষ্ট। গেলো বছরের তুলনায় ইসরায়েলের পর্যটন খাতে আয় কমেছে প্রায় ৮০ শতাংশ। ব্যাংকখাতে প্রত্যাশার তুলনায় প্রবৃদ্ধির হার কমে দাঁড়িয়েছে অর্ধেকে। গত বছরের তুলনায় দুই ধাপ কমেছে ঋণ ফেরত দেয়ার সক্ষমতা।
গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের জেরে ইসরায়েলের সাথে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে বেশ কয়েকটি দেশ। মধ্যপ্রাচ্যের যে দেশগুলোর সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকের চুক্তি হয়েছে, তারাও এখন ক্ষুব্ধ। সৌদি আরবের সাথে সম্পর্ক তৈরির তৎপরতাও ভেস্তে গেছে।
প্রসঙ্গত, জাতিসংঘ মহাসচিবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশটি বিরূপ সম্পর্ক তৈরি করেছে সংস্থাটির সাথেও। সবশেষ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে চরম অপমানিত হতে হয় নেতানিয়াহুকে। বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে তুলোধুনো করেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীকে। নেতানিয়াহুর ভাষণের সময় ওয়াকআউট করেন অনেক দেশের প্রতিনিধি।