ইবি প্রতিনিধি: বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ২৯শে জুলাই কুষ্টিয়া শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ১৮জন শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়। এরমধ্যে ১৭ জনকে সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে ও একজনকে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে ছেড়ে দেয়া হয়। শিক্ষার্থীদেরকে নিতে সোমবার (২৯ জুলাই) রাত দেড়টার দিকে থানায় হাজির হন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ছয় শিক্ষক।
এসময় শিক্ষকদের জিম্মায় ১৫ শিক্ষার্থীকে ছেড়ে দেয় পুলিশ। এর আগে ছেড়ে দেয়া হয় আরো দুই শিক্ষার্থীকে। এসময় শিক্ষার্থীদের থেকে ভবিষ্যতে রাষ্ট্রের আইনবিরোধী কর্মকান্ডে যুক্ত না হওয়ার অঙ্গিকার নেয়া হয়। শিক্ষকদের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
থানায় উপস্থিত হওয়া ইবির ৬ শিক্ষক হলেন— আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেন, প্রফেসর ড. কামরুল হাসান, প্রফেসর ড. রফিকুল ইসলাম, আল-হাদিস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. আকতার হোসেন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রফেসর ড. আব্দুল বারী এবং দাওয়াত অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের প্রফেসর ড. মাসউদ আল মাহদী।
এদিকে সোমবার বিকেলে ইবি শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন করে শিক্ষার্থীসহ মোট ৩০ জনকে আটক করা হয়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। কুষ্টিয়া মডেল থানার পরিদর্শক (অপারেশন) আবদুল আলিম বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
থানা সূত্রে জানা যায়, সহিংসতার আশঙ্কা থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে বিভিন্ন জায়গা থেকে ৩০ জনকে আটক করা হয়। পরে যাচাই বাছাই শেষে রাতেই ২৯ জনকে ছেড়ে দেয়া এবং অধিকতর যাচাই বাছাই শেষে অন্য একজনকেও ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সোমবার বিকেল তিনটায় কুষ্টিয়ার চৌড়হাসে বিভিন্ন দাবিতে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের পূর্ব নির্ধারিত বিক্ষোভ কর্মসূচি ছিল। এসময় চৌড়হাস থেকে কিছুটা দূরে অবস্থিত বাস টার্নিমালে শিক্ষার্থীরা জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে তারা আর সংঘবদ্ধ হতে পারেননি। আগে থেকেই শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে পুলিশ, বিজিবি টহল দিচ্ছিল। আন্দোলনকারী সন্দেহে শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে মোট ৩০ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।
এদিকে, আটক শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ইবি প্রক্টরিয়াল বডির ভূমিকাকে অভিভাবক সুলভ হয়নি বলে দায়ী করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা ইবি প্রক্টরের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। আর তারা এই শিক্ষার্থীদের বিষয়ে একেবারে নিরব ভূমিকা পালন করেছেন। আমাদের অভিভাবকদের থেকে এমনটা আশা করি না।
শিক্ষার্থীদের ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রফেসর ড. তোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমরা সাধারণ শিক্ষক হিসেবে শিক্ষার্থীদের বিপদে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। এবং ভবিষ্যতেও যে কোনো বিপদে পাশে থাকবো। তবে এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কি ছিল জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা তাদের দায়িত্বের অবহেলা।
ইবি প্রক্টর প্রফেসর ড. শাহাদাৎ হোসেন আজাদ বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের মত বলতে থাকুক। আমরা আমাদের অবস্থান থেকে তাদেরকে ছাড়ানোর বিষয়ে গোপনে ভূমিকা পালন করেছি।