ইপসিতা জাহান সুমা, চুয়েট প্রতিনিধি: চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়টি সংস্কারের উদ্দেশ্যে ৩ দফা দাবি উত্থাপন করেছে। মঙ্গলবার সকালে চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো: সাইফুল ইসলামের কাছে এই তিন দফা দাবি লিখিতভাবে জমা দেওয়া হয়।
উত্থাপিত দাবি তিনটির প্রথম দফায় চুয়েটের বর্তমান উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার এবং ছাত্রকল্যাণ পরিচালককে আগামী ১৪ ই আগস্টের মধ্যে পদত্যাগ করতে বলা হয়। তাছাড়া কম্পিউটার বিজ্ঞান ও কৌশল বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ শামসুল আরেফিনকে তড়িৎ এবং কম্পিউটার কৌশল অনুষদের ডিন এর দায়িত্ব ও সকল প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম থেকে বহিষ্কার করতে হবে বলেও দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
পাশাপাশি 'বঙ্গবন্ধু পরিষদ' এবং রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা আছে এমন কোনো শিক্ষক ব্যবস্থাপনামূলক পদে থাকতে পারবেন না বলেও দাবি জানানো হয়। দ্বিতীয় দফায় চুয়েট শিক্ষার্থী সাগরময় আচার্য, বিজয় হোসেন, আজহারুল মোহাম্মদ মুন্না, তৌফিকুর রহমান, ইমাম হোসেন নীরব সরাসরি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্রতি হামলা, হত্যা চেষ্টা এবং হুমকি ধামকিতে জড়িত থাকার অভিযোগে তাদের ছাত্রত্ব বাতিলসহ আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।
শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত শেষ দফায় তারা চুয়েটের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের সংশ্লিষ্টদের খাম খেয়ালিপনা, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের কথা বিবেচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলেন ও সংশ্লিষ্টদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানান। শিক্ষার্থীদের এই দাবিগুলো অতিসত্বর বাস্তবায়িত না হলে আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার কথা জানান তারা।
চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান মোহাব্বত এ ব্যাপারে বলেন, গত ১৯ জুলাই রাতে শিক্ষার্থীদেরকে ক্যাম্পাস থেকে জোরপূর্বক বের করে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেওয়ার প্রতিবাদে আমরা সংশ্লিষ্টদের পদত্যাগ চাচ্ছি ৷ সেক্ষেত্রে ২ দিনের সময়সীমা বেধে দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমাদের অন্যান্য যুক্তিসঙ্গত দাবিগুলাও বিনা বিলম্বে মেনে নেওয়ার আহবান জানাচ্ছি। অন্যথায় শিক্ষার্থীরা আরো কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবে। আমাদের এই দাবিগুলো পূরণ হলে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পর আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের পদক্ষেপ গ্রহন করব।
শিক্ষার্থীদের দাবীর ব্যাপারে জানতে চাইলে চুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড.মোহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, আমি হৃদরোগের সমস্যায় ভুগছি। তাই ডাক্তারের পরামর্শে ১৭ আগস্ট পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে ছুটি নিয়েছি। ছুটি শেষে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিব।
চুয়েটের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড.জামাল উদ্দিন আহাম্মদ বলেন, আমি আসলে ছাত্রদের সঙ্গে বসে একসঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে চেয়েছিলাম। আপাতত আমি ছাত্রকল্যাণ অধিদপ্তরের সঙ্গে আলোচনায় বসেছি, পরবর্তীতে উপাচার্যের সঙ্গেও আলোচনায় বসবো। আমরা চুয়েটের মঙ্গল হয় এমন সিদ্ধান্ততেই উপনীত হবো ইনশাআল্লাহ।
চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপ-পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের থেকে তিন দফা দাবি গ্রহন করে রেজিস্ট্রার অফিসে জমা দিয়েছি।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্টের পর থেকেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, রেজিস্ট্রার সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ব্যাক্তিদের পদত্যাগ করতে দেখা যায়। মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলনে অসহযোগিতা ও শিক্ষার্থীদের পক্ষে অবস্থান না নেওয়ার কারণেই শিক্ষার্থীদের চাপে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন সংশ্লিষ্টরা।