মো. নাসির উদ্দিন, টাঙ্গাইল: উৎসব এলেই বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রিয়জনের সাথে সময় কাটাতে ছুটে যায় গ্রামের বাড়ি। এতে যানবাহনের চাহিদা বেড়ে যায় কয়েকগুন। আর এই সুযোগে মহাসড়কগুলোতে বেড়ে যায় ফিটনেস বিহীন গাড়ির দৌরাত্ম্য। এবারও ঈদ যাত্রার পূর্বে পুরোনো ও ফিটনেস বিহীন গাড়ি মেরামত করে রাস্তায় নেমে পড়েছে। পুরোনো লক্কড়-ঝক্কর গাড়ি রং মাখিয়ে নেমে যাচ্ছে সড়কে। ফিটনেস বিহীন এ সকল গাড়ি রাস্তায় বিকল হওয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে অহরহ। এ থেকে তৈরি হয় যানজট। এতে ঘরঘুখো মানুষ পড়েন ভোগান্তিতে।
গত এক মাস ধরে টাঙ্গাইলে গাড়ি মেরামতের ওয়ার্কশপ গুলো ব্যস্ত সময় পার করছে। সকাল থেকে মাঝরাত পর্যন্ত চলছে গাড়ি মেরামতের কাজ। প্রকাশ্যে এসব গাড়ির মেরামতের কাজ চললেও যেন দেখার কেউ নেই। পুরোনো ও ফিটনেস বিহীন গাড়ির কারণে মহাসড়কে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে পুলিশ বলছে, এ বছর ফিটনেস বিহীন গাড়ি মহাসড়কে চলতে দেয়া হবে না।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের পলিটেকনিক থেকে শুরু করে এলজিইডির মোড় পর্যন্ত অবস্থিত একাধিক গাড়ি মেরামতকারী প্রতিষ্ঠানে চলছে এমন কর্মযজ্ঞ। কেউ দুর্ঘটনায় বেঁকে যাওয়া গাড়ি ঝালাই দিয়ে মেরামত করছে। আবার কেউ কেউ বহু বছরের পুরনো গাড়ির গায়ে রঙ-চঙ লাগিয়ে নতুন রূপে সাজাচ্ছেন। গাড়ির ইঞ্জিনের কাজও করছেন অনেকেই। পুরো গাড়িই অনেকেই মেরামত করতে দেখা গেছে। ঈদে যাত্রীদের দৃষ্টি কাড়তে এই আয়োজন।
ওয়ার্কশপের কর্মীরা বলছে, প্রতিবছরই ঈদের এক দেড় মাস আগে থেকে এমন শত শত গাড়ি গ্যারেজে আসে। তখন দিনরাত এক করে এ সকল গাড়ি মেরামত করা হয়। কোন কোনটা আবার রং করে নতুনের মত করে দেয়া হয়।
পরিবহন চালক আব্দুল কুদ্দুছ বলেন, প্রতি বছরই তারা ঈদের আগে গাড়ি মেরামত সহ রঙের কাজ করান। আর গাড়ি নতুনের মতো না দেখালে যাত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করা যায় না। তাই পুরাতন গাড়ি রঙিন করা হচ্ছে বলে জানান তারা।
ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ধলেশ্বরী গাড়ির চালক এলাহী বক্স বলেন, ঈদ উপলক্ষে পুরানো গাড়ি মেরামত করে রাস্তায় নামানো হয়, যাতে করে যাত্রীদের যানবাহন সংকট না হয়।
আর এস ট্রাভেলসের বাস চালক আইয়ুব আলী বলেন, ঈদ উপলক্ষে গাড়ি মেরামতের কাজ করছি। যাতে ঈদে গাড়ি ‘চিকচাক’ দেখা যায়। প্রতি রমজান মাসের আগেই গাড়ি মেরামতের কাজ করে থাকি। তবে তিনি দাবি করেন আমাদের গাড়িগুলোর ফিটনেস রয়েছে।
লোকাল টাঙ্গাইল-গাজীপুরের সড়কের লোকাল বাসের চালক খন্দকার মোস্তফা বলেন, ২১ দিন ধরে গাড়ি মেরামতের কাজ করে শেষ করেছি। গাড়ির দুই সাইট কিছুটা ক্ষতিগ্রস্থ ছিল, সেটা মেরামত করা হয়েছে। গাড়ির সিট, ভিতরের অংশ, টিনগুলো নতুন করে দেয়া হয়েছে।
এ ব্যাপারে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ঈদ যাত্রায় স্বস্তিতে কিভাবে মানুষ বাড়ি যেতে পারে, সে লক্ষ্যে কাজ করছি। ঈদযাত্রার সময় কিছু ক্রূটিপূর্ণ ও লক্কর ঝক্কর গাড়ি মহাসড়কে দেখা যায়। এসব গাড়িগুলো অনেক সময় দুর্ঘটনা কবলে পড়ে। এতে মহাসড়েক অনেক সময় যানজটের সৃষ্টি হয়। ফিটনেস বিহীন এসব গাড়ি যাতে মহাসড়কে যান চলাচল ব্যহত করতে না পারে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে।
উল্লেখ্য, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ঢাকা-টাঙ্গাইল-যমুনা সেতু মহাসড়ক। রাজধানী ঢাকার সাথে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এই মহাসড়কটি। এ সড়ক দিয়ে প্রায় উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের ২৪ জেলার যানবাহন চলাচল করে। প্রতি বছরই ঈদকে সামন রেখে এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ীরা সড়কে লক্করঝক্কর এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি বের করে। এসব গাড়ি হঠাৎ করেই মহাসড়কে বিকল হয়ে যায়। এতে উভয় পাশের গাড়ির দীর্ঘ লাইন পড়ে যায়। এক পর্যায়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।