আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি: নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লাক মিয়ার ৪৯টি ব্যাংক একাউন্টে সাড়ে ১৪ হাজার কোটি টাকারও বেশি অর্থের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পেয়েছে এ সমস্ত একাউন্টে অস্বাভাবিক লেনদেনেরও প্রমাণ। বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) দুদক মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালনকালে তার ৪ টি অ্যাকাউন্টে সন্দেহজনক লেনদেন হয়েছে। তিনি বলেন, এছাড়া ক্ষমতার অপব্যবহার করে অবৈধভাবে ৫৫ কোটি ২৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৫১ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
তাছাড়া, আড়াইহাজার থানা পুলিশ জানায়, লাক মিয়ার নামে আড়াইহাজার, মাধবদী এবং ভাটারা থানায় হত্যা, চেক জালিয়াতি, মানুষের জায়গা জমি জবরদখল ইত্যাদির অভিযোগে ৯টি মামলা রয়েছে।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, লাক মিয়া ব্রাহ্মন্দী ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার আগে থেকেই এলাকার শত শত নীরিহ মানুষের জায়গা জমি জোরপূর্বক জবরদখল করে উপজেলার ফকিরবাড়ী এলাকায় ভাই ভাই স্পিনিং মিলসহ বেশ কিছু মিল ফ্যাক্টরী গড়ে তুলেছেন। তাছাড়া এলাকাবাসীর উপর অযথা অত্যাচার নির্যাতনের ও অভিযোগ রয়েছে। আওয়ামী লীগের তৎকালীন এমপি নজরুল ইসলাম বাবু কে ম্যানেজ করে পরপর তিনবার তিনি বিনা ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে নীরিহ লোকদের উপর অত্যাচারের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেন। শুধু লাক মিয়া নয়, তার পরিবারের প্রতিটি সদস্য এলাকার নীরিহ লোকজনদের উপর অত্যাচার নির্যাতনের মাধ্যমে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। তার এক ভাতিজা নাইম এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের দায়ে দীর্ঘদিন জেল খেটে সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে এলাকায় এসে আবারো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। তার বড় ভাই হক মিয়ার বিরুদ্ধেও এলাকাবাসীর জায়গা সম্পত্তি জোরপূর্বক জবরদখল করে নেয়ার অভিযোগ রয়েছে এলাকায়। তাছাড়া তারা সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে ও সরকারি বহু টাকা পয়সা আত্মসাৎ করার বিষয়ে অভিযোগ রয়েছে। তার স্ত্রী মাহমুদা বেগমের বিরুদ্ধে ১৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করেছে দুদক।
জানা গেছে, লাক মিয়া ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালে তার স্ত্রী মাহমুদার ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে মোট ৪৬১ কোটি ১৭ লাখ টাকার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে ২০০৭ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে ২৩০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা জমা এবং ২৩০ কোটি ৪৮ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
এদিকে, লাক মিয়ার ব্যক্তিগত কর্মচারী মো. মহসিন মোল্লার বিরুদ্ধেও তদন্তে নেমেছে দুদক। তার মাসিক বেতন ছিল মাত্র ১২ হাজার টাকা। তা সত্ত্বেও, তার ১৪টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ১০ হাজার ৩২২ কোটি ৭৬ লাখ টাকার লেনদেনের খবর পাওয়া গেছে।
এনআরবি টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড এবং মেসার্স এনআরবি ট্রেডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা মালিক হিসেবে পরিচিত মহসিন তার অ্যাকাউন্টে ৫ হাজার ১৬১ কোটি ৪২ লাখ টাকা জমা এবং ৫ হাজার ১৬১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। লাক মিয়া এবং হক মিয়া ব্রাহ্মন্দী ইাউনিয়নের উজান গোপিন্দি এলাকার মৃত ছাবেদ আলীর পুত্র।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট এর পর থেকে তিনি এলাকা ছেড়ে গা ঢাকা দিলে দীর্ঘদিন পলাতক থাকার পর গত ২৬ ফেব্রুয়ারী পুলিশ তাকে রূপগঞ্জের কাঞ্চন ব্রিজের টোল প্লাজা থেকে গ্রেপ্তার করে। নারায়ণগঞ্জ জেলার সহকারী পুলিশ সুপার (গ অঞ্চল) মেহেদী ইসলাম তার গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।