গৌরীপুর (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি: ময়মনসিংহের গৌরীপুরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতায় নিহত নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিব বাবা হয়েছেন। শহীদ রাকিবের স্ত্রী সাদিয়া আক্তার একটি ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন।
রাকিব শহীদ হওয়ার ৬মাস পর রবিবার রাত ৩ টায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তিনি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখে যেতে পারলেন না তার পিতা। বাবা ডাকও শোনা হলোনা রাকিবের।
রাকিবের পিতা উপজেলার রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও মধ্যপাড়ার আব্দুল হালিম শেখ তাঁর নাতি হওয়ার খবরে হাসপাতালে ছুটে যান। তিনি নিহত রাকিবের স্ত্রীর কন্যা সন্তান জন্মদানের বিষয়টি রবিবার নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, পুত্রবধূ ফুটফুটে কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। কিন্তু আফসোস আমার পুত্র রাকিব তার মেয়েকে দেখে যেতে পারল না। মেয়েও কোনদিন বাবাকে দেখতে পারবে না। নবজাতক ও তার মা সুস্থ রয়েছে। সবাই রাকিবের স্ত্রী, সন্তান ও পরিবারের সদস্যদের জন্য দোয়া করবেন।
তিনি আরো বলেন, আমি দাদুভাইটাকে কোলে নিয়েছি। ও বাবাহারা, আমি সন্তান হারা; আল্লাহ যেন ওকে হেফাজত করেন। ছেলেকে পবিত্র কোরআনের হাফেজ বানিয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল ছেলে আমার মৃত্যুর পর আমার জানাজার ইমামতি করবে। উল্টো আমাকেই তাঁর জানাজা পড়াতে হলো।
উল্লেখ্য, নূরে আলম সিদ্দিকী রাকিবের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুরের রামগোপালপুর ইউনিয়নের দামগাঁও গ্রামে। গত ২০ জুলাই অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর জন্য ঔষধ আনতে গিয়ে উপজেলার কলতাপাড়া বাজারে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হন রাকিব। সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয়ার পর তিনি মারা যান। পরে মরদেহ হাসপাতাল থেকে নিজ বাড়ি দামগাঁও গ্রামে এনে দাফন করা হয়।
রাকিব ২০২২ সালে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার এমদাদুল উলুম নূরাণীয়া হায়েজিয়া মাদরাসা থেকে হেফজ সম্পন্ন করেন। এরপর ভর্তি হন ঈশ্বরগঞ্জ ভাসা আতহারিয়া দারুল উলুম মাদরাসার কিতাব বিভাগে। পাশাপাশি নিজবাড়িতে গড়ে উঠা তালিমুল কোরআন মহিলা মাদরাসায় শিক্ষকতা শুরু করেন। ২০২৩ সালের ১ জানুয়ারি রাকিব বিয়ে করেন ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার তারুন্দিয়া ইউনিয়নের পুনাইল গ্রামের শাহাব উদ্দিনের কন্যা সাদিয়া আক্তারকে।
সাদিয়ার বাবা মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, একদিকে কষ্ট, অন্যদিকে আনন্দ। সবচেয়ে বেশি আনন্দিত হতো যে, সে তো নেই। আমার নাতি যেন বৈষম্যের শিকার না হয়। সে যেন তার প্রাপ্য অধিকারটুকু পায়। মা জাহানারা বেগম বলেন, আমার নাতনি যখন কাঁদছে, আমাদের মনে হচ্ছে ও বাবা বাবা বলে চিত্কার করছে। ওর বাবাও হয়তো ওর কান্নার শব্দ শুনতে পাচ্ছে।