জসিম সিদ্দিকী, কক্সবাজার: টানা ২৪ ঘন্টার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত পর্যটন রাজধানী কক্সবাজার। বৈরী আবহাওয়ার ফলে পাহাড় ধসে কক্সবাজারে সদর ও রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলার ঝিলংজা ইউনিয়নে পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৩ জন, শহরের হালিমা পাড়ায় ১ জন ও উখিয়ার ১৪ নম্বর ক্যাম্পের হাকিমপাড়ায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ভোররাতে ঝিলংজা ইউনিয়নের দক্ষিণ ডিককুল, শহরের হালিমা পাড়া এবং উখিয়া ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এ পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন- দক্ষিণ ডিককুলের মিজানুর রহমানের স্ত্রী আঁখি মনি এবং তার দুই শিশু কন্যা মিহা জান্নাত নাঈমা ও লতিফা ইসলাম, হালিমা পাড়ার জাহেদ (৭)। অপরদিকে উখিয়ার ১৪ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ই ২ ব্লকের কবির আহমেদের ছেলে আব্দুর রহিম আব্দুল হাফেজ এবং আবদুল ওয়াহেদ।
ডিককুলে পাহাড় ধ্বসে নিহতের স্বজন ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মিজানুল করিম জানান, তারা রাত ৩টার দিকে ভারী বৃষ্টি হওয়ার সময় মিজানের বাড়ির দিক থেকে একটি পাহাড় ধসের বিকট শব্দ শুনতে পায়। পরে গিয়ে দেখে স্ব পরিবারে মাটিচাপা পড়েছে। তাৎক্ষণিক মিজানকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। পরে কক্সবাজার দমকল বাহিনীর সহযোগিতায় উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে স্ত্রী ও দুই শিশু কন্যার দেহ উদ্ধার করা হয়।
এ নিয়ে কক্সবাজার ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন ম্যানেজার দোলন আচার্য বলেন, সদরের তিনজনের মরদেহ বের করে আনা হয়েছে।
এদিকে টানা ভারী বৃষ্টি এবং ঝোড়ো হাওয়া অব্যাহত রয়েছে কক্সবাজারে। অব্যাহত এ বৃষ্টিপাত রেকর্ড ভেঙেছে গত ১০ বছরের। বৃষ্টির পানিতে জেলা শহরের ৯০ ভাগ এলাকাসহ প্লাবিত শতাধিক গ্রাম। গত বুধবার থেকে কক্সবাজারে মাঝারি থেকে কখনো কখনো ভারী বর্ষণ হচ্ছে। ভারী বর্ষণে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার জেলা শহরসহ বেশ কিছু গ্রামে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে অনেকের বাড়ি ঘর প্লাবিত হয়েছে। এতে এলাকায় জনজীবন দুর্ভোগে পড়েছে।
বিশেষ করে কক্সবাজার শহরের কলাতলী, নুনিয়ারছড়া, সমিতিপাড়া, বাহারছড়া, সুগন্ধা পয়েন্ট, বাসটার্মিনাল, ডিককুল, আলীর জাঁহাল, পেশকারপাড়া, সদরের লিংকরোড, বাংলাবাজার, খরুলিয়া, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকা বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিতে এসব এলাকায় সাধারণ মানুষ খাবারে কষ্টে পাচ্ছেন।
শহরের প্রধান সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, মাছবাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, পেশকারপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এলাকা, বৌদ্ধমন্দির সড়ক, গোলদীঘিরপাড়, তারাবনিয়াছড়া, রুমালিয়ারছড়া, বাঁচা মিয়ার ঘোনা, পাহাড়তলী, সমিতিপাড়া, কুতুবদিয়াপাড়া, ফদনারডেইল, নুনিয়াছড়া, বৈদ্যঘোনা, ঘোনারপাড়া, বাদশাঘোনা, খাজা মঞ্জিল, লাইটহাউস, কলাতলী, কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল, লারপাড়া এলাকা বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে গেছে। যেখানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা অন্তত ৫ লাখ।
এদিকে স্থানীয় চেয়ারম্যানদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রবল বর্ষণে কক্সবাজারে আমন চাষাবাদ, ফসল ও পানের বরজের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। তীব্র ঝড়ো বাতাসে কাঁচা ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে পড়েছে। গ্রামীণ অভ্যন্তরীণ যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্থ হয়েছে। পুকুর ও প্রজেক্ট ডুবে মৎস্য চাষে অপূরণীয় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
কক্সবাজার হোটেল মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, ভারী বর্ষণে হোটেল মোটেল জোন এখন পানিতে পানিতে সয়লাব। কলাতলী সড়ক, সকল উপসড়ক, সৈকতসংলগ্ন ছাতা মাকের্ট, হোটেল লাবণী থেকে সুগন্ধা এলাকায় এখন পানি আর পানি।
কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুল হান্নান জানিয়েছেন, গেল ২৪ ঘণ্টায় কক্সবাজারে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৫০১ মিলিমিটার। চলমান মৌসুমে এটি একদিনে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাতের রেকর্ড। আরও একদিন ভারি বৃষ্টি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে বলে তিনি জানান। পাশাপাশি বঙ্গোপসাগরে সুস্পষ্ট লঘুচাপ অবস্থান করায় দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোতে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, ঝিলংজায় পাহাড় ধসে নিহত তিনজনের পরিবারকে ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পাহাড়ের ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে কাজ চলছে। পানিবন্দি এলাকার তালিকা তৈরি করে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার কাজ চলমান রয়েছে।
কক্সবাজার ত্রাণ ও প্রত্যাবাশন কমিশন কার্যালয়ের অতিরিক্ত কমিশনার সামশুদ্দৌজা জানান, ভারী বর্ষণে উখিয়া ১৪ নম্বর হাকিম পাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পাহাড় ধসে তিনটি ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। এতে একই পরিবারের তিনজনের মৃত্যু হয়েছে।