বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরের শাসনামলে ব্যাপক সুবিধাভোগীদের মধ্যে অন্যতম চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ৮১ বছর বয়সী প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ। ২০০৯ সালের ৬ জুলাই এক বছরের জন্য চেয়ারম্যান হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান তিনি। ২০১১ সালে তাকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে মেয়াদ নবায়ন করে করে এখনো পর্যন্ত রয়েছেন চট্টগ্রাম ওয়াসায়। এ সময়ে অসংখ্য অনিয়ম ও দুর্নীতির নানা অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন তার খুঁটির জোর কোথায়?
এছাড়া ঋণের প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত মেগা প্রকল্পগুলোর পুনর্মূল্যায়নের দাবি উঠেছে। গত দুই দিন সচেতন নাগরিক সমাজ নামের একটি সংগঠন তার পদত্যাগের দাবিতে ওয়াসা কার্যালয় ঘেরাও ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের দাবি প্রতিটি মেগা প্রকল্পের পুনর্মূল্যায়ন করতে হবে।
আন্দোলনের নেতৃত্বদানকারী ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেন, এমডি অনেক দুর্নীতি-অনিয়ম করেছে। কোনো প্রকল্প সঠিক সময়ে শেষ করতে পারেনি। এতে প্রকল্পের সময় ও ব্যয় বেড়েছে।
ওয়াসা বোর্ড সভার সদস্য জাফর আহমেদ সাদেক বলেন, বোর্ড সভায় প্রতিটি অনিয়ম নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনের প্রতি তার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। একটি শোকজ পর্যন্ত করতে পারে না। প্রকল্পগুলো নির্ধারিত মেয়াদে শেষ করতে না পারায় ব্যয় বেড়ে গেছে। এখন ভাণ্ডারজুড়ি প্রকল্প শেষ করতে পারেনি। প্রতিটি প্রকল্পের ব্যয় নিয়ে পুনর্মূল্যায়ন প্রয়োজন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আখতার কবির চৌধুরী বলেন, এমডি ফজলুল্লাহ শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের মধ্যে একজন। ব্যাংকে দুর্নীতির জন্য তিনি জেল খেটেছেন।
প্রকৌশলী ফজলুল্লাহ একসময় চট্টগ্রাম ওয়াসায় চাকরি করতেন। ২০০০ সালে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী হিসেবে অবসরে যান। পরে ২০০৯ সালে ৬ জুলাই এক বছর মেয়াদের জন্য ওয়াসার চেয়ারম্যান হিসাবে নিয়োগ পান। পরবর্তী সময়ে ২০১১ সালে চট্টগ্রাম ওয়াসা পরিচালনা বোর্ড গঠিত হলে তিনি ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন।
বর্তমানে এমডি হিসেবে তার মূল বেতন ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। বাড়ি ভাড়া, চিকিৎসা, আপ্যায়ন ও অন্যান্য ভাতাসহ মাসে ৩ লাখ ১৭ হাজার টাকা বেতন ভোগ করছেন। পরে ২০২২ সালে মূল বেতন সাড়ে ৪ লাখ করার জন্য দাবি করেছিলেন। কিন্তু নানা কারণে তা বৃদ্ধি হয়নি।
ওয়াসায় ১৩ সদস্যবিশিষ্ট একটি পরিচালনা বোর্ড রয়েছে। বোর্ডের চেয়ারম্যান ও একাধিক সদস্য তার অনুগত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। প্রকল্প গ্রহণের পর বোর্ড সভায় অনুমোদন নিতে হয়। কিন্তু বোর্ড সভায় অনুমোদন নিতে তার কোনো সমস্যা হয় না। একটি বোর্ড সভায় উপস্থিতির জন্য প্রতি সদস্য ১০ হাজার টাকা করে ভাতা পেয়ে থাকেন।
ওয়াসার আয়ের প্রধান উৎস পানি বিক্রি বাবদ আয়। বর্তমানে দৈনিক ৫০ কোটি লিটার পানি উৎপাদনের দাবি করছে কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সিস্টেম লসের নামে দৈনিক প্রায় ২০ কোটি লিটার পানি বিল পাচ্ছে না। পানি চুরি বন্ধ, অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ ও বকেয়া আদায়ে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেই।
ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী এ কে এম ফজলুল্লাহ বলেন, সরকার আমাকে নিয়োগ দিয়েছে। সরকার বললে পদত্যাগ করব। আমি ৪০ লাখ মানুষকে পানি সরবরাহ দিয়ে থাকি। এখন ৪০-৫০ জন লোক এসে পদত্যাগ চাইলে হবে না।