এম মনিরুজ্জামান, রাজবাড়ী প্রতিনিধি: প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল। তবে নির্মাণের ৩২ বছরেও এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি টার্মিনালটি। দীর্ঘদিন ব্যবহার না হওয়ায় নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মূল্যবান আসবাবপত্র ও সরঞ্জামাদি। এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা। তবে টার্মিনালটি চালুর আশ্বাস পৌরসভার নবনিযুক্ত প্রশাসকের।
চালু না হওয়ায় রাজবাড়ী কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল ভবনের কক্ষগুলোর দরজা জানালা ভেঙে গেছে, খসে পড়েছে পলেস্তারা। চারপাশে জঙ্গল আর ময়লার ভাগাড়, জমে আছে পানি।
রাজবাড়ী পৌরসভার নবনিযুক্ত প্রশাসক সিদ্ধার্থ ভৌমিক বলেন, আমি সবেমাত্র পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব নিয়েছি। বাস টার্মিনালটি পরিদর্শন করে চালু করার চেষ্টা করবো।
জানা গেছে, রাজবাড়ী শহরের শ্রীপুরে ১৯৯২-৯৩ অর্থ বছরে এক কোটি ৭৪ লাখ টাকা ব্যয়ে বাস টার্মিনালটি নির্মাণ করে জেলা পরিষদ। পরে ২০০০ সালে হস্তান্তর করা হয় পৌরসভার কাছে। এরপর ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় সাময়িক চালু হলেও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আবারও বন্ধ হয়ে যায় টার্মিনালটি। বর্তমানে পৌরসভার কাছ থেকে ইজারা নিয়ে গ্যারেজ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে টার্মিনালটি।
নির্মাণের ৩২ বছরেও পুরোপুরি চালু না হওয়ায় টার্মিনাল ভবনের কক্ষগুলোর দরজা জানালা ভেঙে গেছে। খসে পড়েছে পলেস্তারা। চারপাশে জঙ্গল আর ময়লার ভাগাড়, জমে আছে পানি। টার্মিনালের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেখানে গড়ে ওঠা খাবার হোটেলসহ বিভিন্ন ধরনের দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। যেগুলো রয়ে গেছে সেগুলোর ব্যবসার গতি নেই।
একাধিক ব্যবসায়ী জানান, তারা অনেক আশা নিয়ে দোকান দিয়েছিলেন টার্মিনালে। কিন্তু আশা আশাই থেকে গেছে। সারাদিন বসে থাকলেও মেলেনা কাস্টমার। ফলে দোকানভাড়া দেয়া কষ্টকর হয়ে ওঠে।
সরেজমিনে দেখা যায়, দীর্ঘদিন ধরে কার্যক্রম না থাকায় জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে টার্মিনালটি। সেখানে যাত্রীদের কোনও আনাগোনা নেই। টার্মিনালের মূল ভবনসহ বিভিন্ন স্থানে চলছে বাস, ট্রাকসহ বিভিন্ন ধরনের যানবাহন মেরামতের কাজ। যত্রতত্র পড়ে রয়েছে ময়লা-আবর্জনা, জমে আছে পানি। টার্মিনালের মূল ভবনের একপাশে যাত্রীদের বসার স্থান করা হলেও সেখানকার অধিকাংশ চেয়ারগুলোই নেই। ব্যবহৃত হয় না ভবনের কোনও রুম। ফলে নষ্ট হচ্ছে রুমের জানালা-দরজা। দু-একটি রুম ব্যবহৃত হলেও সেগুলোতে যানবাহন মেরামতের যন্ত্রপাতি রাখা হয়েছে। টয়লেট থাকলেও তা একেবারেই ব্যবহারের অনুপযোগী।
এদিকে বাস টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় বর্তমানে রাজবাড়ী শহরের মুরগির ফার্ম, বড়পুল ও জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের অফিসের সামনে মহাসড়কের ওপর থেকে যাত্রী উঠিয়ে বাস ছেড়ে যাচ্ছে গন্তব্যে। আর বাস কাউন্টার করা হয়েছে মালিক গ্রুপের অফিসের নিচতলায়।
বাসচালক এরশাদ মণ্ডল বলেন, বাস টার্মিনালটি বন্ধ থাকায় মুরগির ফার্ম, বড়পুল ও মালিক গ্রুপের অফিসের সামনে মহাসড়কের ওপর গাড়ি পার্কিং করে যাত্রী ওঠানামা করানো হয়। এতে যানজট সৃষ্টির পাশাপাশি দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা থাকে। আমরা চাই বাস টার্মিনালটি চালু করা হোক। এতে যাত্রীরাও সুবিধা পাবে, আমরাও নির্বিঘ্নে যাত্রী সেবা দিতে পারবো।
পরিবহন শ্রমিক মো. জয়নাল বলেন, টার্মিনালটি পরিত্যক্ত হওয়ার কারণে মাদকসেবীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে। সন্ধ্যা হলেই মাদকসেবীরা এখানে মাদক নিয়ে আসর জমায়।
আরেক পরিবহন শ্রমিক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দীর্ঘবছর ধরে বাস টার্মিনালটি অবহেলিত আছে। এটি বন্ধ থাকায় জনগণ এর সুফল না পাওয়ার পাশাপাশি সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে আমার দাবি দ্রুত এই বাস টার্মিনালটি চালু করা হোক।