ঢাকা
১১ই ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ
বিকাল ৩:১৮
প্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০২৪
আপডেট: আগস্ট ২৭, ২০২৪
প্রকাশিত : আগস্ট ২৭, ২০২৪

লক্ষ্মীপুরে পানি আরো বাড়ছে, প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণের জন্য হাহাকার

মাসুদুর রহমান খান, লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি: লক্ষ্মীপুরে বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। হু হু করে বাড়ছে পানি। মঙ্গলবার বিভিন্ন এলাকায় পানির উচ্চতা বাড়ায় নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পাশের নোয়াখালী জেলার বন্যার পানি লক্ষ্মীপুরের রহমতখালী খাল হয়ে লক্ষ্মীপুরের লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে।

আজ দুপুর পর্যন্ত জেলার বিভিন্ন এলাকায় চার থেকে ছয় ইঞ্চি পানি বেড়েছে বলে জানিয়েছেন লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান। তিনি বলেন, গত শনিবার অনেক এলাকায় পানি কিছুটা কমে গিয়েছিল। গড়ে ছয় ইঞ্চির মতো কমেছে। কিন্তু সেটা গত দুই দিনে আবার বেড়ে গেছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দিঘলী ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে গেছে দিঘলী-মান্দারী সড়ক। সড়কটির অধিকাংশ পানির নিচে। কোথায়ও তিন ফুট, কোথায়ও চার ফুট পানি। এতে বড় যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। মাঝেমধ্যে ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশা ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল করছে। অনেক অটোরিকশা মাঝপথে বিকল হয়ে পড়ে আছে। সড়কের চারপাশে পানিতে টইটম্বুর। মসজিদগুলোতে মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতে পারছেন না। কুশাখালীর ছিলাদী গ্রাম, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আশপাশের সব গ্রাম পানিতে একাকার।

এসব এলাকার বানভাসি মানুষ জানিয়েছেন, এমন দুর্বিষহ অবস্থা ১৯৮৮ সালের বন্যার সময়ও হয়নি। বন্যা আগের সব রেকর্ড ভেঙেছে। চন্দ্রগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা মো.মাসুদ বলেন, গ্রামের বেশ কটি সড়ক বিকেল পর্যন্ত শুকনা ছিল। রাতে সেসব সড়কে এক ফুট পর্যন্ত পানি উঠে গেছে। চন্দ্রগঞ্জ-মান্দারী সড়কসহ সব সড়কেই পানি। কুশাখালীর ছিলাদী গ্রামের বাসিন্দা মো. ফয়সাল মাহমুদ বলেন, রোববার রাতে বাড়ির আঙিনায় পানি ছিল প্রায় এক থেকে দেড় ফুট। রাত তিনটার দিকে পানি দ্বিগুণ হয়ে যায়। এতে নতুন করে ভোগান্তির সৃষ্টি হয়। বন্যার পানি বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন হাজারো মানুষ। বাড়ির আঙিনা ও ঘরে পানি আর পানি।

কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা গ্রামের রিয়াজ হোসেন বলেন, পানিবন্দী হয়ে থাকলেও এখনো কোনো ত্রাণ পাইনি। খুবই কষ্টে দিন কাটছে। কাজকর্ম করা যাচ্ছে না। মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। দুশ্চিন্তায় আছি। যেভাবে পানি বাড়ছে, কোথায় গিয়ে ঠেকে, সেটাই এখন চিন্তার বিষয়। একই এলাকার দোকানি মো. বাহার বলেন, রাতে দোকান ঝাড়ু দিয়ে মুছে গিয়েছি। সকালে এসে দেখি দোকানের ভেতরে এক ফুট পানি। পেছনের বাড়িঘর সব পানিতে ডুবে গেছে। প্রত্যন্ত অঞ্চলে ত্রাণের জন্য হাহাকার। জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বন্যার্ত মানুষের মধ্যে শুকনা খাবার, চাল-ডালসহ নানা সামগ্রী বিতরণ করছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। প্রত্যন্ত অঞ্চলের কোনো কোনো এলাকার মানুষ এখনো ত্রাণ পাননি।

সদর উপজেলার ভাঙ্গাখা ইউনিয়নে আজাদ হোসেন বলেন, সবাই প্রধান সড়কের আশপাশে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেন। পানির জন্য কেউ ভেতরের দিকে আর ঢোকেন না। অথচ প্রধান সড়ক থেকে মাইলের পর মাইল ভেতরের দিকে বসতি আছে। কমলনগর উপজেলার চর কাদিরা গ্রামের বাসিন্দা আরিফ হোসেনের বলেন, তাঁর পরিবার গত এক সপ্তাহ ধরে পানিবন্দী। লক্ষ্মীপুর-কমলনগর সড়ক থেকে তিন কিলোমিটার ভেতরে তাঁর বাড়ি। তাঁর পরিবার আজ পর্যন্ত কোনো ত্রাণ পাননি। ত্রাণের আশায় তিনি প্রধান সড়কে দাঁড়িয়েছেন। বেসরকারি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ের লোকজন পর্যাপ্ত ত্রাণ বিতরণ করছেন কিন্তু প্রত্যন্ত গ্রামে ত্রাণ পৌঁছায়নি। আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৪০৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। সেসব জায়গায় শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে প্রশাসনের পক্ষ থেকে। বেসরকারি ও স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে অনেকেই ত্রাণ দিচ্ছেন আশ্রয়কেন্দ্রে।

সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ, কুশাখালী, কমলনগর, রায়পুর, রামগতি ও রামগঞ্জ উপজেলায় ১৮৫টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া এসব এলাকার বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক, মাধ্যমিক উচ্চবিদ্যালয় ও মাদ্রাসাগুলো বন্যার্ত মানুষের আশ্রয়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, জেলায় বর্তমানে ৭ লাখ ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দী রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে ২৩ হাজার ৪০৪ জন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯ হাজার ৯৪৩ প্যাকেট শুকনা খাবার বিতরণ করা হয়েছে।

সর্বশেষ
প্রকাশকঃ অধ্যাপক ড. জোবায়ের আলম
সম্পাদকঃ মো: গোলাম সরোয়ার
কার্যালয় : বিটিটিসি বিল্ডিং (লেভেল:০৩), ২৭০/বি, তেজগাঁও (আই/এ), ঢাকা-১২০৮, মোবাইল: +880 2-8878026, +880 1840 474666 +880 1736 786915, 
+880 1300 126 624, ইমেইল: online.bdsangbad@gmail.com (online), news.bdsangbad@gmail.com (print), ads.bdsangbad@gmail.com (adv) 
বাংলাদেশ সংবাদ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি ও বিষয়বস্তু অন্য কোথাও প্রকাশ করা বে-আইনী।
Copyright © 2024 The Bangladesh Today. All Rights Reserved.
Host by
linkedin facebook pinterest youtube rss twitter instagram facebook-blank rss-blank linkedin-blank pinterest youtube twitter instagram